Inqilab Logo

বুধবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০ ভাদ্র ১৪৩১, ২৯ সফর ১৪৪৬ হিজরী

খালেদা জিয়ার মামলার বিচারককে প্রভাবিত করছেন প্রধানমন্ত্রী : মির্জা ফখরুল

| প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিচারাধীন মামলায় তাকে অভিযুক্ত করে প্রধানমন্ত্রী নিজেই বিচারককে প্রভাবিত করছেন বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল বুধবার বিকেলে এক আলোচনা সভায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে গত মঙ্গলবার তীব্র সমালোচনা করে বলছেন, এতিমের নামে আসা টাকা তিনি (খালেদা জিয়া) চুরি করে খেয়েছেন। হোয়াই ইট ইজ গিভেন। এটি ইজ সাবজুডিস। কোর্টে কেইস চলছে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) রায় দিয়ে দিয়েছেন। ব্যাপারটি কী? এতেই ধরা পড়ে যায়, চোরের মন পুলিশ পুলিশ। প্রধানমন্ত্রী আপনি সরকারের প্রধান, আপনি এক্সিকিউটিভ ব্রাঞ্চের প্রধান। একটি মিথ্যা মামলা হয়েছে, সেই মামলার অনুসন্ধান হয়েছে, অনুসন্ধানের পর সেটার বিচারও চলছে। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) ইতোমধ্যে অনুসন্ধানও করে ফেলেছেন অর্থাৎ অভিযুক্তও করেছেন, ট্রায়ালে নিয়েছেন, বলেছেন চুরি করেছে অর্থাৎ আর প্রয়োজন আছে বিচারকের রায় দেয়ার। দেশের এভাবে সরকার প্রধান হয়ে উনি যখন আরেকজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মামলায় এভাবে কথা বলতে থাকেন, তখন সেই মামলার রায় কী হবেÑ আমরা জানি। এই হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান চিত্র।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, মিথ্যা মামলা দিয়ে, সেই মামলাকে প্রভাবিত করে বেগম খালেদা জিয়া বা দেশপ্রেমিক মানুষদের বিরুদ্ধে যতই রায় দেন, মামলা দেনÑ যা কিছুই করুন, স্বাধীনতাকামী ও গণতন্ত্রকামী মানুষকে আপনারা বন্ধ করে দাবিয়ে রাখতে পারবেন না। এটাই বাস্তবতা, পারেননি অতীতে কোনোদিন, এখনো পারবে না।
মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের জনসভায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার প্রসঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
তিনি বলেন, জিয়া অরফানেজের নামে এতিমখানার জন্য যে টাকা এসেছিল, সেই টাকা উনি লুট করে নিয়েছেন। অরফানেজের নামে টাকা নিলেও ওই টাকা এতিমরা পায় নাই। সে টাকা উনি গায়েব করে দিয়েছেন। লোপাট করে খেয়েছেন। সেই মামলার কাজ যখন চলছে, ৬৭ দিন তারিখ পড়েছে কোর্টে। উনি কয়দিন কোর্টে গেছেন? মাত্র সাতদিন। উনি নিজেই জানেন, কিভাবে দুর্নীতি করে এতিমের টাকা চুরি করে খেয়েছেন। কাজেই ওই মামলা চললেই শাস্তি অবধারিত নিশ্চয় এই ভয় তার আছে। কারণ যেহেতু দুর্নীতি করেছেন, চোরের মন পুলিশ পুলিশÑ একটা কথা আছে না? এ জন্য উনি কোর্টে যান না। কোর্ট তারিখ দেয়, উনি যাবেন না। নানা অজুহাত নিয়ে উনি কোর্টকে ডজ মারেন।
সেগুন বাগিচায় কঁচিকাঁচা ভবন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে মরহুম চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলামের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। ২০০৫ সালের এই দিনে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন এই চলচ্চিত্রকার।
সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে দেশটাকে আপনারা কোথায় নিয়ে গেছেন? আপনারা গণতন্ত্রের ভাষা শিখতে বলছেন। কার কাছে ভাষা শিখব? যারা ১৯৭২ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত গণতন্ত্রকে পিছে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন। আবার এখন সুযোগ পেয়ে আজকে একই কাজ করছেন ছদ্মবেশে। আপনি তো আজকে পত্রপত্রিকা বন্ধ করে দিচ্ছেন, সাংবাদিকদের কথা বলার সব কিছু বন্ধ করে দিচ্ছেন। যারা টেলিভিশনে টকশোতে যায়, তাদেরকে এটা বলতে পারবে, ওটা বলতে পারবে না বলছেন। কে কথা একজন কথা বলল তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করছেন এবং তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করছেন।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে এমন পরাকাষ্ঠে বসিয়েছেন যে, একটা নির্বাচন করেছেন যেখানে ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত, শতকরা পাঁচজন মানুষও নির্বাচনে ভোট দিতে যায়নি। গণতন্ত্র এমন পরাকাষ্ঠে বসিয়েছে যে, আপনার বিরুদ্ধে ১/১১ কেয়ার টেকার সরকার ১৫টা মামলা করল, সেই মামলাগুলো কোথায়Ñ সব চলে গেছে।
আর বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা ছিল, সেখানে ৩৭টায় এসে ঠেকেছে। অর্থাৎ কিভাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে হবে, দমন করতে হবেÑ সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। এখানে গণতন্ত্র নেই, এখানে আইন সবার জন্য সমান নয়। এখানে সরকারি দলের জন্য একরকম ও বিরোধী দলের জন্য আরেক রকম আইন।
দেশের বর্তমান সঙ্কট উত্তরণে সুষ্ঠু নির্বাচন বিকল্প নাইÑ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, দেশ এক গভীর সঙ্কটে রয়েছে। এ থেকে উত্তরণে একমাত্র পথ হচ্ছে, জনগণকে আস্থায় নিয়ে একটি ইনক্লুসিভ ইলেকশন অর্থাৎ সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। যে নির্বাচনে সমস্ত মানুষ তাদের মতামত জানাতে পারবে। এ ধরনের একটি নির্বাচন ছাড়া এই রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসন করা সম্ভব নয়।
নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা জানি এখন নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের সময় হয়ে আসছে। আমাদের চেয়ারপারসন প্রস্তাব রেখেছিলেন, কিভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করা যেতে পারে। একটি সহায়ক সরকারের অধিনে একটি নিরপেক্ষ শক্তিশালী  নির্বাচন কমিশন গঠন হয়, তাহলে ভবিষ্যতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমাদের সেই প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে মহামান্য প্রেসিডেন্ট রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে আহ্বান করেছেন। আমাদেরও প্রথম ডেকেছেন, সেজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। আজকে আওয়ামী লীগ গেছেন। এখন শেষ পর্যন্ত তিনি কী করবেন, তার ওপর নির্ভর করবে নির্বাচন কমিশনের ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন করা, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সব দলের অংশগ্রহণের নির্বাচন করা।
উন্নয়ন মেলার সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সারাদেশে উন্নয়ন মেলা হচ্ছে। আইয়ুব খান ১৯৬৮ সালে উন্নয়নের ১০ বছর করেছিল। ’৬৯ সালে তাকে পত্রপাঠ বিদায় হতে হয়েছিল। ইতিহাস কোনোদিন কাউকে ক্ষমা করেনি। আজকে যারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে, আজকে যারা আইনের শাসনকে ধ্বংস করছে, যারা মানুষের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, ভোট দেয়ার অধিকারকে কেড়ে নিচ্ছেÑ তাদেরকেও দেশের জনগণ ক্ষমা করবে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১/১১ গোটা জাতির জীবনে একটা কলঙ্কময় দিন। ওই ষড়যন্ত্র ছিল বাংলাদেশকে বিরাজনীতিকরণ করে দেয়া ও গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা। দুর্ভাগ্য আমাদের  আজকে এখন ১০ বছর পরে আমরা একটা ভিন্ন আঙিকে বিরাজনীতিকরণের আরেকটি প্রক্রিয়া দেখছি।  দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলকে, তার রাজনীতি-মতবাদ-দর্শনকে কিভাবে নিঃশেষ ও নির্মূল করে দেয়া যায়, তার পরিকল্পনা চলছে। আজকের যে কাজ সেটা ১/১১ এর ষড়যন্ত্রেরই একটা ধারাবাহিকতা।
বর্তমানে দেশের দুই আইন চলছে অভিযোগ করে বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তিন তিনবছর যাবত সমাবেশ করতে না দেয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত আমরা সোহরাওয়ার্দীতে সাতবার সমাবেশের জন্য অনুমতি চাইলে অনুমতি দেয়া হয়নি। এই সরকার বিরোধী দল ও বিরোধী মতের কাউকে কাউকে সমাবেশ করতে দেয়নি। এরা আবার গণতন্ত্রের কথা বলে। গত মঙ্গলবারের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গণতন্ত্রের ভাষা শিখতে হবে বেগম খালেদা জিয়াকে বলেছেন। দিজ ইজ দ্য আইরনি। যারা গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না, তারা নিজের প্রয়োজনে কথা বলে, তারা আবার গণতন্ত্রের ভাষার কথাটা বলে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের বেশ কিছু পত্রিকায় এসেছে, জঙ্গিবাদের উস্কানিদাতাদের গণআদালতে বিচার করা হবে। আমরা তো চাই, জঙ্গিবাদের যারা উস্কানি দিচ্ছে, তাদেরকে সঠিকভাবে খুঁজে বের করুন। সেটা আপনারা করছেন না? জঙ্গিবাদের যারা অভিযুক্ত হচ্ছে- তাদেরকে সাথে সাথে মেরে ফেলছেন। কোনো বিচার হচ্ছে না, কোনো তদন্ত হচ্ছে না। কারণ জানা যাচ্ছে না। সঠিক তদন্ত হয়, সত্য উৎঘাটিত হয় তাহলে আপনাদের মুখোশটা উন্মেচিত হবে- তা-ই কী। তাহলে কেনো তদন্ত করছেন না, কেনো তাদের ট্রায়ালে আনা হচ্ছে না, কেনো বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না। আমরা এটা চাই। আমরা অতীতে দেখেছি- এখানে সন্ত্রাসে ও জঙ্গিবাদের কারা উস্কানি দিয়েছে।
মরহুম চাষী নজরুল ইসলামের জীবন-কর্মের ওপর একটা ফেস্টিভেলের উদ্যাগ নেয়ার জন্য আয়োজকদের পরামর্শ দেন বিএনপি মহাসচিব।
সংগঠনের মহাসচিব রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাস সাধারণ সম্পাদক মনির খান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের ইঞ্জিনিয়র রিয়াজুল ইসলাম রিজু, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের জাকির হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।



 

Show all comments
  • Nannu chowhan ১২ জানুয়ারি, ২০১৭, ৮:০৫ এএম says : 0
    This is really surprise us, How come comment the administrative highest to lowest most especially minister, mp & other, while the cases under judiciary process what kind of education they are holding to run the country?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ