পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : নগরীতে গণপরিবহনের ভাড়া অতিরিক্ত আদায় করা হয়। আছে পরিবহন যান সংকট। জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে না বাড়তেই পরিবহন ভাড়া বাড়ে। কিন্তু তেলের দাম কমলে বর্ধিত ভাড়া আর কমে না। আবার একেক বাসে একেক রকমসহ দুই কিলোমিটার দূরত্বের ভাড়া ৩০ টাকাও আছে। ভুক্তভোগীদের মতে, নগরীতে চাহিদামত বাস পাওয়া যায় না। যে রুটে লাভ বেশি সেই রুটে বাসও বেশি। কম লাভের রুটে বাস সঙ্কট লেগেই থাকে। এতে করে বাসে যারা চলাচল করেন প্রতিদিন তাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) দূরত্বভেদে বাস ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে। নগরীতে চলাচলরত প্রতিটি বাসে এই ভাড়ার তালিকা প্রদর্শিত অবস্থায় থাকার কথা। কিন্তু প্রথমদিকে তালিকা টানানো হলেও এখন আর নেই। এতে করে বাসের কন্ডাক্টররা সহজেই যাত্রীদের সাথে প্রতারণা করার সুযোগ পাচ্ছে। তারা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে চলেছে। এ নিয়ে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয় না বলে সাধারণ যাত্রীরা জানিয়েছেন। রাজধানীর প্রেসক্লাব থেকে শাহবাগের দূরত্ব দেড় কিলোমিটারের বেশি নয়। প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৬০ পয়সা ভাড়া হিসাবে এই দূরত্বে বাস ভাড়া হওয়ার কথা সাড়ে তিন টাকা। প্রেসক্লাব থেকে শাহবাগ দিশারী পরিবহনের ভাড়া ২৫ টাকা। শিকড় পরিবহনে ২৬ টাকা এবং স্বাধীন পরিবহনে ৩০ টাকা। একই দূরত্বে তিন বাসে তিন রকমের ভাড়া কেন? এর জবাব কে দিবে? আবার মিরপুর থেকে মতিঝিলের দিকে আসতেও একইভাবে যথেচ্ছ ভাড়া আদায় করা হয়। যাত্রীরা এর প্রতিবাদ করে কোনো প্রতিকার পান না। ভুক্তভোগী যাত্রী মোবারক হোসেন বলেন, এরা নিজেদের খেয়াল খুশি মতো ভাড়া আদায় করলেও দেখার কেউ নেই। সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ শোনারও কেউ নেই। বাধ্য হয়ে আমরা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই চলাচল করছি। বিকল্প তো কিছু নেই। আরেক যাত্রী লিয়াকত হোসেন বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে কথা বললে বাসের কন্ডাক্টর ও হেলপাররা ধমক দিয়ে বলে না পোষালে নেমে যান। ভাবখানা এমন যেনো ওরা যা খুশি তাই করবে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মাধে মধ্যে নিজেই বাসে চড়ে ভাড়ার মূল্য তালিকা পরীক্ষা করেন। যাত্রীদের সাথে কথা বলেন। মন্ত্রীর বাসে চড়ার দিন গোটা রাজধানীর চিত্র পাল্টে যায়। ভাড়ার অঙ্কও এক লাফে কমে যায় বলে জানান কয়েকজন যাত্রী।
সেবার নামে বিড়ম্বনা, কথায় কথায় যাত্রীদের মারধর, দুর্ঘটনায় মারা গেলেও হত্যা মামলা না করতে চাপ সৃষ্টি, যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করিয়ে যানজট সৃষ্টি, সুবিধা আদায়ে কথায় কথায় ধর্মঘটের ডাক দিয়ে জনসাধারণকে জিম্মি করাসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত পরিবহন সেক্টর। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার আগেই বাসের ভাড়া বেড়ে যায়। কিন্তু তেলের দাম কমলে ভাড়া কমে না। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য মতে, বিগত ২৬ বছরে ৩ দফা জ্বালানি তেলের দাম কমার পর দেশের পরিবহন সেক্টরে ভাড়া কাগজে কলমে কমানো হলেও বাস্তবে কমেনি। ২০০৮ সালের ২৫ অক্টোবর ৫৫ টাকার ডিজেল ৭ টাকা কমে ৪৮ টাকা হলে পরিবহন ভাড়া যাত্রী প্রতি কিলোমিটারে ০৭ পয়সা কমানো হয়। ২০০৯ সালের ১২ জানুয়ারি ৪৮ টাকার ডিজেলের মূল্য কমে ৪৪ টাকা নির্ধারণ করায় যাত্রী প্রতি বাস ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ০৪ পয়সা কমানো হয়। এরপর পরিবহন মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে পরিবহন সেক্টর শিল্প খাত ঘোষণা ও জ্বালানীর মূল্য ৪৪ টাকা থেকে কমে ৪০ টাকা হলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাসভাড়া যাত্রী প্রতি কিলোমিটারে ০৫ পয়সা কমানোর ঘোষণা দেয়া হয়। কাগজে কলমে এই ভাড়া কমানো হলেও প্রকৃতপক্ষে কোন বাস-মিনিবাস ভাড়া কমে নি। সরকার জনস্বার্থে জ্বালানির মূল্য কমালেও গুটিকয়েক পরিবহন মালিক এই সুবিধা ভোগ করছে।
অন্যদিকে, পরিবহন যান সঙ্কট নগরীর একটি প্রধান সমস্যা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, যেকোনো কর্মদিবসে পিকআওয়ারে পরিবহন যান সঙ্কট চরম আকার ধারণ করে। তখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পরেও একটা বাস পাওয়া যায় না। কখনও একটি বাস এলে যাত্রীদের ঠেলাঠেলি করতে উঠতে হয়। মহিলা যাত্রীরা পড়েন চরম বিপাকে। জানা গেছে, প্রভাবশালীদের চাপে রাজধানীতে রুট বাড়তে বাড়তে এখন রুটের সংখ্যা ১৯০টিরও বেশি। চলছে ৬ সহস্যাধিক বাস ও মিনিবাস। শৃঙ্খলা না থাকায় এসব গাড়িই এখন রাজধানীবাসীর জন্য বিড়ম্বনার ও যানজটের অন্যতম কারণ। অথচ রাজধানীর ব্যস্ত এলাকাগুলোতে সময়মতো বাস পাওয়া যায় না। বাস মালিকরা জানান, রাজধানীতে বাসের কোম্পানি ও রুট যেভাবে বেড়েছে তাতে এই অরাজকতা ঠেকানো মুশকিল। এতে করে মালিকপক্ষ লাভবান হলেও যাত্রীসেবা মোটেও বাড়বে না।
গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামছুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলার জন্য মূলত দায়ী সরকারি কর্তৃপক্ষ। গণপরিবহনে এখন গণমালিক। এটি বড় সমস্যা। এখানে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন জরুরি। এটা যতো তাড়াতাড়ি করা যাবে ততোই ভালো। তিনি বলেন, পরিবহন সেক্টরে অরাজকতা নতুন কিছু নয়। সুতরাং এটাকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে গেলে সময় লাগবে। এজন্য সরকারের পাশাপাশি পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদেরকেও আন্তরিক হতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।