পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : পাঠ্যবইয়ে ভুল-ভ্রান্তিকে স্বাভাবিক উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, মানুষের ভুল-ত্রুটি হতেই পারে। তবে কিছু ভুল হওয়া উচিত ছিল না। এই ভুলের জন্য বিচার হওয়া উচিত। যারা ভুল করেছেন এবং দায়ী তাদের কেউ রেহাই পাবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে যারা ভুল করেছেন তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মন্ত্রী বলেন, ছোটখাটো কিছু ভুল হতে পারে, কিন্তু বড় বড় যে ভুলগুলো হয়েছে সেটি গ্রহণযোগ্য না। সম্পাদনা পরিষদ এই ভুলগুলো সংশোধন না করে যেভাবে বই প্রকাশ করেছে তাতে তাদের সম্পাদনা করার যোগ্যতাই নেই। গতকাল (মঙ্গলবার) সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বইয়ে ভুলত্রুটি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। চলতি বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বিনামূল্যের পাঠ্যবইয়ে বিভিন্ন ধরনের ভুল-ভ্রান্তি ধরা পড়ার পর সমালোচনার প্রেক্ষিতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তবে পাঠ্য বইয়ের ছোটখাটো ভুলগুলো এখনো শুদ্ধ করার সময় আছে জানিয়ে নাহিদ বলেন, পাঠ্যবইয়ের ভুলগুলো শুদ্ধ করার এখনো সময় আছে। তবে ভুলের জন্য বিচার হওয়া উচিত। যারা ভুল করেছেন, তারা রেহাই পাওয়ার যোগ্য নন। পাঠ্যপুস্তকের ভুল-ত্রুটি নির্ণয় ও দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে সুপারিশ দিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর ভুল সংশোধনসহ অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এনসিটিবির তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদন দেখে ‘বড় দুটি ভুলের’ জন্য দু’জনকে চিহ্নিত করে ওএসডি করা হয়েছে; দোষ প্রমাণিত হলে তাদের ‘পরিপূর্ণ শাস্তি’ হবে। কিন্তু সবাইকে আমরা বুঝিয়ে দিচ্ছি, যারা এই ভুল করেছেন তারা রেহাই পাওয়ার যোগ্য না। আগেই তাদের ওএসডি করেছি, তদন্ত করে আরও কারা কারা আছেন, কার ভুল, কে কতটুকু দায়ী সে অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনেক ভুল-ত্রুটি ও ব্যর্থতার পরও বছরের প্রথম দিন বই বিতরণকে বিশাল কর্মযজ্ঞ হিসেবে বর্ণনা করেন শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ। তিনি বলেন, “আমি এ রকম (ভুল) আশা করি নাই। এখানে পরিপূর্ণ সকল বিষয়ে আলাপ করব না, সেটা সম্ভবও না। আপনারা এসব বিষয়ে প্রশ্ন না করলেই খুশি হব। অনেক ভুল-ত্রুটি হয়েছে, সীমাবদ্ধতা আছে, ত্রুটি থাকতেই পারে। শিক্ষক ঠিক করে দেবেন, যারা দায়ী তারা ঠিক করে দেবেন। এগুলো না করে যদি ঠিক উল্টোটা করতে থাকি, তাহলে ছেলেমেয়েরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মন্ত্রী বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি বা প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছি, ভুলের জন্য আমাদের বিচার হওয়া উচিত, সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু ছেলেমেয়েদেরকে উৎসাহিত করার নৈতিক দায়িত্ব আমাদের সকলের। যেটা তাদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে আমি মনে করি সেটা করা উচিত না। কিছু ভুল থাকতে পারে ছাপার ভুল, যেগুলো আমরা সংশোধনী দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দিতে পারি। কিছু ভুল থাকতে পারে বড় ধরনের ভুল, যেটা সংশোধন করতে গেলে ওই জায়গাটা রিপ্লেস করতে পারি। কিছু ভুল থাকতে পারে যেগুলো থাকা উচিত ছিল না, সেগুলো অমিট করার জন্য সরকারের নির্দেশ পাঠিয়ে দেব, ওই পাতাগুলো আমরা ছিঁড়ে নেব বা ব্লক করে দেব- এভাবে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেব। নাহিদ বলেন, পা-ুলিপি তৈরির পর তা সম্পাদনা ও মানোন্নয়ন এনসিটিবির দায়িত্ব। বিশেষজ্ঞ শিক্ষকরা এর সঙ্গে জড়িত থাকেন। এনসিটিবির প্রধান সম্পাদক চূড়ান্তভাবে সই না করলে বই ছাপা হয় না।
প্রাথমিকের বই পেতে দেরি হওয়ার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এডিবি ও বিশ্ব ব্যাংকের কিছু শর্তের কারণে প্রাথমিকের বই ছাপাখানায় পাঠাতে দেরি হয়েছে। অল্প সময়ে অতি দ্রুত বইগুলো সম্পাদনার কাজটি শেষ করা হয়েছে।
পাঠ্য বইয়ের ভুল: শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই যাওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন ভুল-ত্রুটি ধরে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে সমালোচনা হচ্ছে। অনেকে প্রশ্ন রেখেছেন- শিশুদের পাঠ্যবইয়ে এসব কী শেখানো হচ্ছে। প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে বর্ণ পরিচয়ে লেখা হয়েছে, ‘ও’-তে ওড়না চাই; যা নিয়ে ফেইসবুকে চলছে তুমুল সমালোচনা। একই বইয়ে শুনি ও বলি পাঠে একটি ছাগলের ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে, অজ (ছাগল) আসে। আম খাই। আম খাওয়া বোঝাতে একটি আম গাছের নিচের অংশে দুই পা তুলে একটি ছাগলের দাঁড়িয়ে থাকায় ছবি দেওয়া হয়েছে, যা নিয়ে ফেইসবুকে চলছে হাস্যরস। তৃতীয় শ্রেণির একটি বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবির নিচে ইংরেজিতে একটি বাক্য লেখা হয়েছে ভুল বানানে। আঘাত করা বোঝাতে গিয়ে হার্ট বানান লিখতে ভুল হয়েছে; লেখা হয়েছে, হৃদয় এর হার্ট বানান। তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে কুসুমকুমারী দাশের ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতায় বেশ কয়েটি লাইন বিকৃত করা হয়েছে। মূল কবিতায় আছে ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে’। আর বইয়ে ছাপা কবিতায় লেখা হয়েছে ‘আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে হবে?’ এছাড়া ‘মানুষ হইতে হবে- এই তার পণ’ এর বদলে লেখা হয়েছে ‘মানুষ হতেই হবে’। অষ্টম শ্রেণির গল্পের বই আনন্দপাঠে সাতটি গল্পের সবগুলোই বিদেশি লেখকের গল্পের বাংলা অনুবাদ। দেশি লেখকের কোনো গল্প সেখানে না থাকায় সমালোচনা হচ্ছে। ছাগলের যে ছবি নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে তা ‘দেখা হবে’ জানিয়ে নাহিদ বলেন, ছাগল গাছে উঠে আম খাচ্ছে ফটোশপে তৈরি এমন কিছু ছবি গণমাধ্যমে এসেছে। হার্ট বানানে ভুলের বিষয়ে নাহিদ বলেন, “যিনি সম্পাদনা করেছেন তার এটা দেখা উচিত ছিল, এই বিষয়টাকে আমরা ক্ষমা করতে পারি না। শব্দ ও বানান ভুল হতেই পারে, সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু আদর্শ ছেলে কবিতায় যে ভুল হয়েছে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এই ভুলের জন্য সম্পাদনা পরিষদের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন মন্ত্রী।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমদ, অরুণা বিশ্বাস ও রুহী রহমান এবং মাদরাসা ও কারিগরি বিভাগের উপ-সচিব সুবোধ চন্দ্র ঢালী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে অপর এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা আরো সম্প্রসারণ করা হবে। কারিগরি শিক্ষা হবে আমাদের শিক্ষার মূল ভিত্তি। ২০২১ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষার্থীর সংখ্যা মোট শিক্ষার্থীর শতকরা ২০ ভাগে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে শতকরা ৩০ ভাগে উন্নীত করা হবে। তিনি কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের এ খাতের উন্নয়নে আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও সততার সাথে একযোগে কাজ করার আহবান জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।