হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
জামালউদ্দিন বারী : বাংলাদেশের সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিগত বছরটি কেটেছে নানা ভয়-ভীতি, আশঙ্কা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে। এর আগের বছর বা তারও আগে থেকে শুরু হওয়া জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসের উত্থান গত বছর নানাভাবে আরো ভয়ঙ্কর রূপে দৃশ্যমান হয়ে উঠে। একের পর এক বিদেশি নাগরিক হত্যার মধ্যদিয়ে দেশে যে নিরাপত্তাহীনতার ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়, বছরের শেষার্ধে প্রথমে ১লা জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হোস্টেজ প্লটে প্রায় ২০ জন দেশি-বিদেশি নাগরিকের হত্যাকান্ডের মধ্যদিয়ে তা চরম স্বরূপে আবির্ভূত হয়। অতঃপর ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামায়াতে জঙ্গি হামলার প্রয়াস দেশে জঙ্গিবাদি তৎপরতায় নতুন মাত্রা যুক্ত করে। এর অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের সাথে আইএসসহ আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্টতার দাবি জানিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একাধিক সংস্থা। গুলশান হামলার ঘটনায়ও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। এসব প্রচারণাকে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হিসেবেই সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। পক্ষান্তরে দেশকে নিম্ন মধ্যআয়ের দেশে রূপান্তরিত করার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসহ কিছু সূচকের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান এবং পদ্মা সেতু বাস্তবায়নসহ কিছু মেগা উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সরকারের ইতিবাচক ভাবমর্যাদার প্রচারণাও ছিল যথেষ্ট জোরালো।
সার্বিক বিচারে এহেন পরিস্থিতিতে সরকারের ভাব-মর্যাদা, সাফল্য, ব্যর্থতা ও এগিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ পরোক্ষভাবে এক ধরনের কূটনৈতিক রশি টানাটানির পর্যায়ে উন্নীত হয়। বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার রাষ্ট্রগুলো তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণে বিশেষ সতর্কতা জারি করে, কোনো কোনো রাষ্ট্র বাংলাদেশে তাদের কার্গো বিমান ওঠা-নামায়ও নিষেধাজ্ঞা জারি করে। নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে গৃহীত এসব রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের বিনিয়োগ, বৈদেশিক বাণিজ্য ও দেশি-বিদেশি কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে। তৈরি পোশাক শিল্পের অনেক ক্রেতা তাদের পূর্ব নির্ধারিত বাংলাদেশ সফর স্থগিত করে দেয়, ক্রয়াদেশ বাতিল করে প্রতিবেশী দেশ থেকে পণ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। এভাবে তৈরি পোশাক খাত আরেকটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। একের পর এক জঙ্গিবাদী হামলায় বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনাগুলো সরকারের জন্য বিব্রতকর ও চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি তৈরি করলেও জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার তার রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষের সাথে কোনো ধরনের সমঝোতামূলক ভূমিকা গ্রহণ করেনি। এমনকি বিরোধী দলের সহযোগিতা ও ঐক্যের আহ্বানকেও গ্রাহ্য করেনি। অনেক সম্ভাবনা নস্যাৎ করে, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা জিইয়ে রেখেই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার রাজনৈতিক অর্কেস্ট্রা বাজিয়ে চলেছে সরকারের প্রচারক দল। রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষকে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে কোনো ধরনের স্পেস না দিয়ে যেমন সরকার সারা বছর ধরেই অগণতান্ত্রিক দৃষ্টান্ত রেখেছে, পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বছর ধরেই নানাভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন, খুন-গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের ঘটনা, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও সাংবিধানিক ভাবমর্যাদাকে দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। তবে বছরের শেষপ্রান্তে এসে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রশ্নে প্রেসিডেন্টের সংলাপ এবং বিএনপির অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে নজিরবিহীন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নতুনভাবে আশার সঞ্চার করেছে।
তবে নতুন বছরের শুরুতে সে প্রত্যাশার জায়গাটিকে যেন আরো কণ্টকাকীর্ণ দেখা যাচ্ছে। থার্টিফার্স্ট নাইটে গাইবান্ধায় একজন সরকার দলীয় সংসদ সদস্যের নিজ বাড়িতে আততায়ীর গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনাকে আবারো রাজনৈতিক ব্লেইম-গেমে পরিণত করা এবং ৭ জানুয়ারিতে বিএনপির প্রত্যাশিত সমাবেশ কর্মসূচি পালনে বাধা দিয়ে সরকার আবারো জাতিকে হতাশ করেছে। এই সময় গত বৃহস্পতিবার রাতে গুলশান হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলা ঘটনায় পুলিশের দাবিকৃত মাস্টারমাইন্ড, কথিত জেএমবি নেতা মারজান (২৩) এবং তার সহযোগী সাদ্দাম (২৫) রাজধানীর মোহাম্মদপুরে পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। উল্লেখ্য, গুলশান হামলায় পুলিশের সন্দেহভাজন জঙ্গিনেতা মারজানকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নব্য জেএমবির মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পরিচয় দেয়া হচ্ছিল। এখন কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারজানের মৃত্যু এ সংক্রান্ত তথ্যাবলী সংগ্রহের পথ অনেকটাই রুদ্ধ হয়ে গেল বলেই ধরে নেয়া যায়। গত কয়েক বছরে দেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের সন্দেহভাজন বলে কথিত এবং জঙ্গিবাদী হামলার পরিকল্পনাকারী বলে চিহ্নিত ব্যক্তিদের প্রায় সকলেই বিশেষ অভিযানে নিহত হয়েছে। গুলশান হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহভাজন কয়েকজনকে বিচারের আওতা থেকেই বাদ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। গুলশান হামলার পর রাজধানীর কল্যাণপুরে এবং নারায়ণগঞ্জে জঙ্গিবাদী হামলার ষড়যন্ত্রকারী বলে চিহ্নিত ব্যক্তিরা প্রায় সকলকেই বিশেষ অভিযানে মারা গেছে। গোয়েন্দা জালে ফেলে আটক করার পরিবর্তে ব্যাপক ঢাকঢোল পিটিয়ে শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজনদের হত্যা করার ধারাবাহিক প্রবণতাকে কেউ কেউ সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছেন। সেই সাথে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থাগুলো এসব বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডকে সরাসরি আইনের শাসন ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করছেন। একের পর এক বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের ঘটনার পর হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ এসব মানবাধিকার সংস্থার বিবৃতি আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের বিনিয়োগ এবং বৈদেশিক বাণিজ্য। দেশে নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ জিইয়ে রেখে সামাজিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলোর কাক্সিক্ষত উন্নয়ন অসম্ভব। ঢাকার কূটনৈতিক জোনের বাড়তি নিরাপত্তাসহ বিদেশিদের বুলেটপ্রুফ গাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরও পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারছে না বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিরা। তাদের অনেকেই পরিবারের অনেক সদস্যকে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে, কোনো কোনো দূতাবাস তাদের কার্যক্রম ও জনবল হ্রাস করেছে। আবার কোনো কোনো দেশের প্রতিনিধিরা দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কাকেই বড় করে দেখতে আগ্রহী। বিনিয়োগ ও দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো সংকুচিত করার যুক্তি হিসেবে তারা দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তাহীনতা এবং আইনের শাসনের অনুপস্থিতিকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন।
এক ধরনের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার মতো কোনো বিরোধী দলের রাজনৈতিক আন্দোলন নেই। পক্ষান্তরে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকেও সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূলে সাফল্য ও নিয়ন্ত্রণের দাবি করা হচ্ছে। সামগ্রিক বিবেচনায় নতুন বছরটি আমাদের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তনের একটি টার্নিং পয়েন্টের শুভ সূচনা হতে পারে, এমনটিই ছিল নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা। বিশেষত রাষ্ট্রপতির রাজনৈতিক সংলাপে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন এবং সকল দলের অংশগ্রহণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির একটি জোরালো আশাবাদ পোষণ করছেন অনেকেই। তবে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের ৩য় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সরকারি দল এবং বিএনপি জোটের বিপরীতমুখী কর্মসূচি পালনের ঘোষণা থাকলেও বিরোধী দলকে কোনো সমাবেশ করতে না দেয়া এবং তার প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচিতেও পুলিশ ও সরকারদলীয় ক্যাডারদের হামলার ঘটনা বিএনপির নেতা-কর্মীদের তো বটেই, দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণকে আবারো হতাশ করেছে। একইভাবে বছরের শুরুতে আবারো কয়েকটি দেশ বাংলাদেশে তাদের নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে। বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের তরফ থেকে পুনরায় ঘোষিত ভ্রমণ সতর্কতা একদিকে দেশের অদূর ভবিষ্যতের নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে, অন্যদিকে চলমান বাস্তবতায় পরাশক্তি রাষ্ট্রগুলো তাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন ঘটাচ্ছে না, নতুন করে সতর্কতা জারির মধ্যদিয়ে দেশগুলো যেন তারই জানান দিচ্ছে। বিশেষত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পর্কে পশ্চিমা বিশ্বের অবস্থান এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যে জিএসপি সুবিধা বাতিল, জঙ্গিবাদের সাথে আইএস সংশ্লিষ্টতার দাবিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের অবস্থানকে বরাবরই রাজনৈতিক হিসেবে আখ্যায়িত করছে সরকার। তবে এসব প্রতিবন্ধকতা ডিঙ্গিয়ে সরকার মেগা উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সামনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করছে। তবে টেকসই উন্নয়ন শর্তের মানদন্ডে আমাদের অবস্থান কোথায় তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে। তাছাড়া গণতন্ত্রহীনতা, নিরাপত্তাহীনতা, আইনের শাসনের অনুপস্থিতি, অসহিষ্ণুতা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূলের নীতির মাধ্যমে কোনো দেশ স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না। বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন, দলনিরপেক্ষ ও আইনগত প্রাতিষ্ঠানিক শক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে টেকসই উন্নয়ন, আইনের শাসন ও সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
শুধুমাত্র নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর নির্ভর করে দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। আমাদের সংবিধান জনগণকে দেশের মালিক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। মালিকরা নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, এটাই হচ্ছে গণতন্ত্রের মৌলিক স্পিরিট। একতরফা প্রচারণা, নির্বাচনী প্রশাসনকে একতরফা পরিচালনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয়করণের মধ্যদিয়ে রাজনৈতিক কর্মকা-সহ নির্বাচনকে একতরফাভাবে নিজেদের পক্ষে রাখার নাম গণতন্ত্র নয়। দেশের একজন অতি সাধারণ বোধবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষও এটা খুব ভালোভাবেই বোঝে। জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ, দেশের প্রধান বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে বছরের পর বছর ধরে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা, তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, গুম বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে কথিত ফোর্সডিজ-অ্যাপিয়ারেন্সের অভিযোগ ইত্যাদি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থা ও পশ্চিমা দেশগুলোর স্টেট ডিপার্টমেন্টের তরফ থেকে বার বার তুলে ধরা হলেও সরকার যেন ‘ড্যাম-কেয়ার’ নীতি অনুসরণ করছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালীকরণ, আইনের শাসন নিশ্চিত হলে সরকার পশ্চিমাদের চাওয়া-পাওয়াও পরামর্শ তাকিদ অগ্রাহ্য করলে জনগণের পূর্ণ সমর্থন থাকত বলে আমাদের বিশ্বাস। পশ্চিমা পরাশক্তির সাথে অনমনীয় আচরণের বিপরীতে আঞ্চলিক পরাশক্তি ভারতের সাথে সরকারের নতজানু নীতি দেশের সাধারণ জনগণ মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। এটা সরকারের নীতিনির্ধারকদের না বোঝার কথা নয়। বিষয় যাই হোক, ভাবতে ভালোই লাগে, যখন দেখি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বা জাতিসংঘ মহাসচিবের অনুরোধ-আহ্বানকে পাত্তা না দিয়ে স্বীয় অবস্থানে অটল থাকেন। আবার অত্যন্ত দু:খিত হই, যখন দেখি, সেই প্রধানমন্ত্রী দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার অবকাঠামো, বন্দর, সড়ক-মহাসড়ক ব্যবহার করে প্রায় বিনাশুল্কে ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দিয়ে দিচ্ছেন, সমুদ্রবন্দর ব্যবহারে ভারতকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন, উদ্বিগ্ন হই যখন দেখি, তিস্তায় পানির অভাবে হাজার হাজার কৃষকের মাথায় হাত, বিএসএফের গুলিতে সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যার বিরুদ্ধে সরকারের ক্ষীণ কণ্ঠস্বর। এ হিসাব মেলানো কঠিন। এসব না মেলা হিসাবনিকাশের জাবেদা খাতা সরকারের হাতে যেমন আছে, জনগণের কাছেও আছে। এহেন বাস্তবতাকে সামনে রেখেই সম্ভবতঃ আগামী মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে যাচ্ছেন। নতুন বছরের রাজনীতি এবং আগামীদিনের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা সরকারকে এসব বিষয় আমলে নিয়েই দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে নতুন সিদ্ধান্তে আসতে হবে। শুধুমাত্র অবকাঠামো উন্নয়নের প্রচারণা চালিয়ে নেতিবাচক রাজনীতি জায়েজ করা সম্ভব নয়। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমল থেকেই এদেশের জনগণ প্রমাণ করেছেন, তথাকথিত উন্নয়নের চেয়ে ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনকেই তারা বেশি মূল্য দেয়। যে কোনো সরকারের কাছে এটাই জনগণের সর্বোচ্চ প্রত্যাশা।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।