Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৬ জুন ২০২৪, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করতে অনীহা প্রকাশ করছে শিক্ষার্থীরা

নানা সমস্যায় জর্জরিত রূপসী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা

| প্রকাশের সময় : ১০ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে  : রূপগঞ্জ উপজেলার তারাব পৌরসভার রূপসী এলাকার রূপসী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রসার শিক্ষার্থীরা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করতে অনীহা প্রকাশ করছে। বাংলাদেশ সরকার নতুন বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে অঙ্গীকার করলেও রূপসী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসাটির সকল শিক্ষার্থীর হাতে এখনো বই পৌঁছেনি। শিক্ষার্থীদের মাঝে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া বাকি শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছেনি। যে সকল শিক্ষার্থী এখনো বই হাতে পায়নি তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মাদ্রাসাটির ৪টি ভবনের মধ্যে ২টি ভবনই দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ-ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ভবনগুলোর বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরায় বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে যে কোন সময় ধসে পড়তে পারে। আর এ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করানো হচ্ছে। এছাড়া শ্রেণী কক্ষে পর্যাপ্ত বেঞ্চ না থাকার কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। রূপসী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসাটির দুইটি ভবন ১৯৭৩ সালে স্থাপিত হওয়ার পর বেশ কিছুদিন আগেই উপজেলা থেকে ইঞ্জিনিয়ার এসে ভবন দুটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। ২০০০ সালে একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হলেও এ ভবনটি শুধুমাত্র শিক্ষকদের অফিস রুম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ মাদ্রাসাটিতে ১১ শিক্ষকসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ও ৫শ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বেশ কিছু দিন আগে আরেকটি ভবন নির্মাণ করা হলেও এ ভবনটিতে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাস শুরু করা হয়নি। ঝুঁকির্পূণ ভবনেই কোন উপায় না পেয়ে শিক্ষকদের ক্লাস করাতে হচ্ছে। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে এ মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষককের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও তারা এখনো মাদ্রাসাটিতে চাকরিরত অবস্থায় রয়েছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ভবনের গুরুত্বপূর্ণ খুঁটিতে ফাটল ও ছাদের ভিমে ও মূল অংশে ফাটল দেখা দেয়ার পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠছে। বাধ্য হয়েই এ ঝুঁকির্পূণ ভবনের মধ্যেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। বিদ্যালয়টির দরজা-জানালা মরিচা ধরে প্রায় সবগুলোই ভেঙে পড়েছে। এরকমভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই ক্লাস চলতে থাকলে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া মাদ্রসাটির দরজা-জানালা ভাঙ্গা থাকার কারণে শ্রেণী কক্ষের ফ্যান, জানালা চোরের দল চুরি করে নিয়ে গেছে। ফ্যান না থাকার কারণে গ্রীষ্মকালে শিক্ষার্থীদের গরমের মধ্যে ক্লাস করতে হয়। এ মাদ্রাসাটির শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগই হতদরিদ্র। অভিভাবকদের মধ্যে প্রত্যেকেই কোন না কোন শিল্প কারখানায় কাজ করেন। তাই দরিদ্রতার তারনায় পরেই মাদ্রাসার ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার পরও তাদের সন্তানদের এখানে পড়াতে হচ্ছে। এ মাদ্রাসাটিতে কোন বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা না থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের ময়লা পানি পান করতে হচ্ছে। এতে করে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা না থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের অন্ত নেই। এছাড়া দুইটি পায়খানা থাকলেও পায়খানাগুলোর দরজা-জানালা নেই। কিছুদিন আগে সরকারি খাত থেকে দুইটি পায়খানা করে দেয়ার কথা থাকলেও সরকারি লোকজন তার অর্ধেক কাজ বাকি থাকতে তা বন্ধ করে দেয়। এতে করে ছেলেদের অতটা সমস্যার সম্মুখীন হতে না হলেও মেয়েদের সবচেয়ে বেশী সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রশাসন ও বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের জানানোর পর তারাও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ইসমাইল হোসেন নামে এক অভিভাবক জানান, তিনি অল্প বেতনে একটি বেসরকারি শিল্প কারখানায় চাকরি করেন। অভাবের সংসারে মেয়েকে ভাল কোন স্কুলে পাড়ানোর মতো সামর্থ্য না থাকার কারণে তার মেয়েকে বীনা দাখিল মাদ্রসায় পড়াতে হচ্ছে। প্রাই সময়ই শ্রেণী কক্ষে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকার কারণে তার মেয়েসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীদের দাঁড়িয়ে থেকে ক্লাস করতে হয়। জোয়াবের নামে এক শিক্ষার্থী জানায়, ভবনের দেয়ালের কার্নিশের সিমেন্ট খসে খসে পড়ার পরও তাদেরকে এ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করানো হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষকরা সময়মত ক্লাসে আসে না। আলাউদ্দিন মৃধা মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী (দপ্তরী) হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। আলাউদ্দিন মৃধা একজন দপ্তরী ও তার শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণী হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ান। তার কাছে পড়লে শিক্ষার্থীদের নাম্বার বেশী দেওয়া হবে আর না পড়লে শিক্ষার্থীদের ফেল করিয়ে দেওয়া হবে বলেও হুমকি ধামকি প্রদান করা হয়। গ্রীষ্মকালে ক্লাস রুমে ফ্যান না থাকার কারণে তাদের ক্লাস করতে কষ্ট হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদ্রাসার এক শিক্ষক জানান, চারটি ভবনের দুটি ভবনেই ফাটল ধরার কারণে ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করাতে হয়। এছাড়া মাদ্রাসাটিতে কোন মানসম্মত পায়খানার ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীদের আশপাশের মানুষের বাড়িতে গিয়ে পায়খানা-প্রশ্রাব করতে হয়। এছাড়া মাদ্রাসাটির চারপাশে কোন বাউন্ডারী না থাকার কারণে বাইরের লোকজন অনায়াশে মাদ্রাসাতে প্রবেশ করতে পারে। এতে করে অপহরণকারীরা যে কোন শিক্ষার্থীদের অপহরণ করে নিয়ে যেতে পারবে। ক্লাস চলাকালীন সময়ে বখাটে ছেলেরা যে কোন সময় প্রবেশ করতে পারায় মেয়েদের ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে। তিনি আরো জানান, উপর মহলের কর্মকর্তাদের এ বিষয়টি  জানানো হলেও তারা এর কোন সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। মাদ্রাসার সুপার মোকলেসুর রহমান বলেন, আমাদের নতুন ভবনের কাজ প্রায় সমাপ্ত হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থেকে নতুন ভবনে স্থানান্তর করা হবে। যে সকল শিক্ষকের সরকারিভাবে চাকরির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে তারা এখানে কোন বেতন-ভাতা ছাড়াই কাজ করছেন। মাদ্রাসাটিতে ক্রীড়া শিক্ষক, জুনিয়র শিক্ষক ও কারী-মৌলভী পদটি শূন্য রয়েছে। শিক্ষক শূন্যতার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানোর জন্য তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়টি উপর মহলের কর্মকর্তাদের বেশ কয়েকবার জানানো হলেও এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। তিনি আরো বলেন, এ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মাণ, বিশুদ্ধ পানি ও মানসম্মত পায়খানার ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। যদি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় যে কোন সময় মারাত্মক কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইসলাম বলেন, শীঘ্রই মাদ্রাসাটির সমস্যা সমাধান করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ