Inqilab Logo

বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শ্রীমঙ্গলে বিজিবি’র হামলার প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট

| প্রকাশের সময় : ৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জড়িত বিজিবি সদস্যদের ক্লোজড
শ্রীমঙ্গল থেকে এস এম উমেদ আলী/আনোয়ার হেসেন জসিম : মৌলভীবাজারের  শ্রীমঙ্গলে বিজিবির পরিবহন শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের হামলার প্রতিবাদে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন এবং ব্যবসায়ী সমিতির ডাকে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলছে। শনিবার থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত পুরো জেলায় পরিবহন শ্রমিক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
ঘটনার সাথে জড়িতদের বিজিবি সদস্যদের ক্লোজড করে সরাইল রিজিওনে পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও বিজিবির বৈঠকে শ্রমিক ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
শুক্রবার শ্রীমঙ্গল শহরের বিভন্ন সড়কে ধর্মঘটের সমর্থনে পরিবহন শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা শ্রীমঙ্গল শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানায়।
বিকেলে শ্রীমঙ্গল চৌমুহনায় পরিবহন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ সমাবেশে বিচার বিভাগীয় সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিকে প্রত্যাহার ও শাস্তি নিশ্চিত করাসহ ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। সমাবেশ থেকে আগামী ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত মৌলভীবাজার পুরো জেলায় পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। তাদের এ দাবি না মানলে সিলেট বিভাগে কর্মসূচি দেয়া হবে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সঞ্জিত কুমার দেব ও শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শেখ লুৎফুর রহমানসহ অন্যান্যরা। অপর দিকে, ব্যবসায়ী সমিতি রাত ৮টায় সভা করবে বলে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ জানান।
এদিকে বিজিবি রিওজন পর্যায়ের চার সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিকেলে বিজিবির একটি তদন্তকারী টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবহন শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেন। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের ক্লোজড করে শ্রীমঙ্গল সদর দফতর থেকে সরাইল রিওজনে পাঠানো হয়েছে বলে সরাইল রিজিওন কমান্ডার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
অপর দিকে, হামলার ঘটনায় জেলা প্রশাসন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিকেলে বিটিআরআই রেস্ট হাউজে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও বিজিবি এক বৈঠকে বসে। এসময় জেলা প্রশাসক মো: তোফায়েল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো: শাহজালাল, সরাইল রিজিওন কমান্ডার, সংসদ সদস্য আব্দুস শহীদ, প্রশাসনের কর্মকর্তা, শ্রমিক ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। সভায় শ্রমিক ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান ও  বৈঠকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে আশ্বস্থ করেন।
ধর্মঘটের কারণে শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে আসা পর্যটক ও সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভানুগাছ স্ট্যান্ড এলাকায় বিজিবি চালকের সাথে এক পরিবহন শ্রমিকের কথা কাটাকাটির জের ধরে কিছু বিজিবি সদস্য ও  পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে বিজিবি হামলা চালিয়ে অন্তত ১০০টি গাড়ি ও প্রায় ৫০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হয়।
বিজিবি ও পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষে আটজন গুলিবৃদ্ধসহ প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলাকালে ঢাকা সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক ও শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়ক দুই ঘণ্টা বন্ধ ছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে শ্রীমঙ্গল শহরের ভানুগাছ রোডে বিজিবি গাড়ি চালকের সাথে বাগি¦ত-া হয়। এ সময় স্থানীয় এক পরিবহন শ্রমিক ওই বিজিবি সদস্যকে লাঞ্ছিত করেন। এ খবর বিজিবি সদরদফতরে পৌঁছলে বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয় ব্যবসায়ী, পরিবহন শ্রমিক ও সাধারণ মানুষদের মারধর করেন। পরে  পরিবহন শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা বিজিবি সদস্যদের পাল্টা হামলা করলে সংঘর্ষ  বেধে যায়। শেষে বিজিবি সদরদফতর থেকে বের হয়ে আসা বিজিবি সদস্যরা বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে ও ব্যাপক ভাঙচুর করে। এ ঘটনার প্রতিবাদে রাতে ব্যবসায়ীরা শ্রীমঙ্গল চৌমুহনা চত্বরে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানান।
ঘটনার সময় বিজিবি সদস্যরা রাস্তাঘাট, এমনকি দোকানপাট বা বাড়িঘরে আশ্রয় নেয়া সাধারণ মানুষের উপর লাঠিচার্জ করে বলে স্থানীয়রা
অভিযোগ করেন। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ, র‌্যাব ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে আনেন।
মৌলভীবাজার সদর হাসপাতারের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: পলাশ রায় জানান, গুলিবিদ্ধ আটজন হাসপাতালে ভর্তি। এদের মধ্যে চারজনকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। গুলিবিদ্ধরা হলেন- শ্রীমঙ্গল শহরের শাপলা আবাসিক এলাকার জিতেন্দ্র পালের ছেলে পবিত্র পাল (৩০) ও মৃত সুনাতন দাশের ছেলে সুকুমার দাশ (৫০), শ্রীমঙ্গলের নতুন বাজার এলাকার জমসেদের ছেলে শাহ আলম (৩০) ও শ্রীমঙ্গলের সেলিম মিয়ার ছেলে মো: ইকবাল মিয়াসহ (২০), শাহ আলম (৩২), মিনাক্ষী পাল (৩৫), কামাল মিয়া (৩২), সুনানন্দ দাশ (৪৭)। আহত অন্যাদের শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার পর জেলা প্রশাসক মো: তোফায়েল ইসলাম ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিজিবি

১৯ আগস্ট, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ