Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশুদ্ধ পানির প্লান্টে ১৫ হাজার শিক্ষার্থীর নিরাপদ জীবন

| প্রকাশের সময় : ৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জয়নাল আবেদীন জয়, উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) থেকে : বিদ্যালয়ে প্রতিদিন বিশুদ্ধ পানির প্লান্টে পানি পান করে নিরাপদ জীবন গড়েছে ১৫ হাজার শিক্ষার্থী। মিনারেল ওয়াটারের চেয়ে এই স্বচ্ছ সুপেয় পানিতে পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের জন্য সময়োপযোগী এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায়। উপজেলা গভর্ন্যান্স প্রজেক্টের (ইউজেডজিপি) অর্থায়নে উল্লাপাড়ায় ৯টি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য স্থাপন করা হয়েছে এই বিশুদ্ধ পানির প্লান্ট। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে এই পানির প্লান্ট স্থাপনে ব্যয় হয়েছে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। জানা যায়, উল্লাপাড়া উপজেলার বেশির ভাগ নলকূপের পানিতে রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত হলুদ আয়রন। আছে আর্সেনিকের উপস্থিতি। এই পানি পান করে পেটের পীড়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে আসছিল শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ। প্রত্যন্ত এলাকায় এর প্রকোপ আরো অনেক বেশি। চলনবিল অধ্যুষিত উল্লাপাড়া উপজেলায় ইরি-বোরো মৌসুমে পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপ থেকে পানি পাওয়া দায়। অকেজো থাকে উপজেলার প্রত্যন্ত পশ্চিম অঞ্চলের সিংগভাগ নলকূপ। এতে এসব এলাকার পরিবারসহ স্কুলগুলোতে নলকূপে সুপেয় পানির অভাব দেখা দেয়। বাধ্য হয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অস্বাস্থ্যকর পানি পান করে আসছিল। এসব এলাকার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে এই সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মারুফ বিন হাবীব। এ জন্য তিনি উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদ থেকে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে উপজেলা গভর্ন্যান্স প্রজেক্টের অর্থায়নে বিভিন্ন বাজার সংলগ্ন ৯টি বিদ্যালয়ে বিশুদ্ধ পানির প্লান্ট স্থাপন প্রকল্প দেন। মাত্র ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে আধুনিক এসব বিশুদ্ধ পানির প্লান্ট স্থাপনে দায়িত্ব দেয়া হয় উপজেলা জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল বিভাগকে। তারা উল্লাপাড়ার প্রত্যন্ত এলাকার হাজী আমিনুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়, বড়পাঙ্গাসী উচ্চ বিদ্যালয়, উধুনিয়া মানিকজান উচ্চ বিদ্যালয়, শলী বনানী উচ্চ বিদ্যালয়, এলংজানি উচ্চ বিদ্যালয়, পাঁচিলা উচ্চ বিদ্যালয়, চৌবিলা উচ্চ বিদ্যালয়, প্রতাব উচ্চ বিদ্যালয় এবং কয়ড়া উচ্চ বিদ্যালয় কলেজ চত্বরে এই সুপেয় পানির প্লান্ট স্থাপন করে। বাজার সংলগ্ন এসব বিদ্যালয়ের পাশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ও রয়েছে। এই পানির প্লান্ট থেকে প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থীসহ অন্তত আরো প্রায় ১০ হাজার সাধারণ মানুষ এই সুপেয় পানি পানের সুযোগ পাচ্ছে। আধুনিক মানের সিলভার কোটেটেড পানির প্লান্টে বিদ্যুতিক মটর দ্বারা পানি তোলা হয়। এই পানির প্লান্টে মোটর দ্বারা পানি তোলার সময় কয়েক ধাপে পানি বিশুদ্ধ করা হয়। সেই সাথে এই প্লান্টে পানি বিশুদ্ধকরণে বিভিন্ন কিট ব্যবহার হচ্ছে। এতে পানি কয়েক ধাপে জীবাণুুমুক্তসহ বিশুদ্ধ হয়ে থাকে। এই প্লান্টের পানি বুয়েট পরীক্ষায় বোতলজাত পানির চেয়ে শতভাগ বিশুদ্ধতার সদন দিয়েছে। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে স্থাপিত এই বিশুদ্ধ পানির প্লান্টের পানি শিক্ষার্থীদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীসহ পার্শ্ববর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা দলবেঁধে পানির প্লান্টে সুপেয় পানি পান করছে। কয়ড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবুল হোসেন জানান, এই পানির প্লান্ট স্থাপনের পর তার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যে দলবেঁধে সুপেয় পানি পান করছে। এই পানি বিশুদ্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বোতলে ভরে বাড়িতেও নিয়ে যায়। একই সাথে কয়ড়া বাজারের দোকানি এবং বাসাবাড়ির লোকও পানি নিয়ে যাচ্ছে। এই একটি পানির প্লান্ট তার বিদ্যালয়ের গুরুত্ব অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মারুফ বিন হাবীব বলেন, আমি প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলগুলোতে গিয়ে সুপেয় পানির সমস্যা দেখতে পাই। সেই চিন্তা থেকে ইউজেডজিপি প্রকল্প থেকে এসব বিশুদ্ধ পানির প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে উপজেলার আরো শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই প্লান্ট স্থাপনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে শীঘ্রই এগুলো নির্মাণ শুরু করা গেলে বিশুদ্ধ পানির আর কোনো সমস্যা থাকবে না। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানে এসে সুপেয় পানি পানের সুযোগ পাবে।




 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ