Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শুধু জামায়াতকে ঘিরে যেন তদন্ত না হয়-এমপি লিটনের বোন

| প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : গাইবান্ধা-২ সুন্দরগঞ্জ আসনের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকান্ডের ৫ দিন পরও তদন্তে ক্লু বের করতে না পারায় মুখ খুলেছেন তার (লিটন) তিন বোন তৌহিদা বুলবুল, ফাহমিদা বুলবুল কাকলী ও আফরোজা বারী। তারা বলেন, শুধু জামায়াতকে ঘিরে যেন হত্যা মামলার তদন্ত আটকে না থাকে। উল্লেখ্য, গত ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতে গুলি করে হত্যা করা হয় মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে। ঘরের ভেতর ঢুকে খুব কাছ থেকে এমপিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে সন্ত্রসীরা। ঘটনার পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের অনেকেই ঘটনার জন্য সরাসরি জামায়াত-শিবির দায়ী বলে বক্তব্য দেন। তবে জামায়াতে ইসলামী এক বিবৃতিতে এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, প্রকৃত খুনিদের আড়াল করতে তাদের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে। বড় বোন আফরোজা বারী বলেন, ঘরে এমপির এভাবে হঠাৎ একা হয়ে যাওয়া, সব গৃহকর্মীর ব্যস্ত থাকা, ঘটনার বর্ণনায় গরমিল এসব নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। হত্যাকান্ডের সঙ্গে ‘ঘরের কেউ’ জড়িত কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এমপির সম্বন্ধী বেদারুল আহসান বেতারের ভূমিকা খতিয়ে দেখা উচিত।
হত্যাকান্ডের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন লিটনের বোন ফাহমিদা। বেশ কয়েকজনকে আটক করলেও ৫ দিনেও খুনিদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। মঙ্গলবার লিটনের বাড়িতে দোয়া মাহফিল হয়। এর মধ্যেই সাংবাদিকদের সামনে আসেন লিটনের দুই বোন ও স্ত্রী। তাদের চোখেমুখে ছিল আতঙ্কের ছাপ, আতঙ্কিত যে তা লুকানোর চেষ্টাও তারা করেননি। এরপর মঙ্গলবার নিহত এমপি লিটনের বড় ভাই শহিদুল ইসলাম হত্যাকান্ডের আগে মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন এমপির নিরাপত্তা কর্মীদের ছুটি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ এবং প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি জানতে চেয়েছেন কে ওই নিরাপত্তা কর্মীদের ছুটি দিয়েছিল। কেনইবা এই ছুটি দেয়া হলো। তিনি বলেন, তার (লিটন) শত্রুদের বিষয়ে আমার ধারণা নেই। তবে এলাকার লোক তাকে হত্যা করতে পারে না। আমার ভাইকে ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিছুদিন আগে লিটনের নিরাপত্তা তুলে নেয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। এমপি লিটনের বড় ভাই শহিদুল ইসলামের এমন বক্তব্যে সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়। অনেকেই বলছেন, লিটনের বড় ভাইয়ের এমন বক্তব্যে লিটন হত্যাকান্ডের মোটিভ নতুন মোড় নিতে পারে।
এদিকে এমপি লিটনের বড় বোন তৌহিদা বুলবুল বলেন, শুধু জামায়াত-জামায়াত করলেই তো হবে না। যদি জামায়াত হয়, জামায়াত। যদি আওয়ামী লীগ হয়, আওয়ামী লীগ। যদি আমি হই, আমি। এনি বডি। আমরা তার পানিশমেন্ট চাই। আমাদের আর কিছু চাওয়ার নেই। এমপি লিটনের বন্ধু ও তার পরিবারের নিকটজন হিসেবে পরিচিত মুকুট বলেন, জামায়াত হতে পারে। কিন্তু ডাইরেক্ট জায়ামাত করেছেÑ এ কথাটা কখনো বলা হয়নি। মামলার বাদি ফাহমিদা কাকলী বলেন, আমার ভাইয়ের হত্যাকারী কে, কারা করলÑ সেটা আমি জানতে চাই এবং তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। লিটনের স্ত্রীসহ দলের নেতারা হত্যাকা-ের জন্য জামায়াতে ইসলামীকে সন্দেহ করলেও এই সংসদ সদস্যের বোনেরা তদন্তে সব বিষয়কেই মাথায় রাখতে বলছেন।
এর আগে লিটনের স্ত্রী খুরশীদ জাহান স্মৃতি সাংবাদিকদের বলেন, বাড়িতে সব সময়ই লোক থাকত। তবে অপরিচিত লোক সব সময় আসত না। সেদিন কেন হঠাৎ বাড়িটি খালি হয়ে গেল এমন প্রশ্নের জবাবে খুরশীদ জাহান বলেন, আসলে এটা একটা কাকতালীয় ঘটনা। তিন দিন থেকে ছাত্রলীগের ছেলেরা একটা মামলার কারণে ধাওয়ার মধ্যে ছিল। ওরা আসত না। দিনে যত লোকই আসুক, সন্ধ্যা বেলাটা আমরা বামনডাঙ্গায় অফিসে যাই। এ কারণে সন্ধ্যায় লোক কম থাকত। তাহলে এ হামলার সঙ্গে বাসার কোনো লোক যুক্ত আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার এ রকম মনে হয় না। তাহলে এ সময়টা এমপি একা থাকেন বা থাকবেন এ তথ্য হত্যাকারীরা জানল কিভাবে? তিনি বলেন, সেটা আমিও ভাবছি। সেটা ভাববার বিষয়, তদন্তের বিষয়। জামায়াতকে সন্দেহ করে খুরশীদ জাহান বলেন, এখানে জামায়াতের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হয়। ২০১৩ সালে যে তা-ব হয়েছে, তা সবাই জানে। প্রতিনিয়ত হুমকি আসত। সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এমপির স্ত্রী বলেন, সারাদিন একসঙ্গেই ছিলেন। সন্ধ্যার দিকে মোবাইলে চার্জ দিতে পাশের ঘরে যাবেন, এ সময়ই তার বড় ভাই বেদারুল আসেন। ভাইকে নিয়েই তিনি পাশের ঘরে যাওয়ার পরপরই গুলির শব্দ শোনেন। দৌড়ে বের হয়ে উঠানে গিয়ে দেখেন এমপি বুকে হাত দিয়ে চিৎকার করে বলছেন, ওরা আমাকে গুলি করেছে, ধর ধর।
তদন্তে যুক্ত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের এক কর্মকর্তা পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের জানান, লিটনের স্ত্রীর বড়ভাই বেদারুলের বর্ণনা ও আনুষঙ্গিক বিষয় তাদের সন্দেহের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু যেহেতু সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে জামায়াতকে দায়ী করা হচ্ছে, তাই তারা তদন্তে বাড়তি চাপ বোধ করছেন। হুট করে বেদারুলকে বা এমপির স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে তারা চান না।



 

Show all comments
  • Ramzan Ali ৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:৫৫ এএম says : 1
    এটিই ঠিক। তা না করে, যদি এমন কথা আসে শুধু জামাত জামাত. তাহলে কিভাবে তদন্ত হবে?
    Total Reply(0) Reply
  • Nadim Rashel ৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:৫৭ এএম says : 0
    solid question ! excellent clue ! half jobs done by family members !
    Total Reply(0) Reply
  • Khadimul Luiz ৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০১ পিএম says : 0
    জ্ঞ্যানি লোকের কথা এমনি হওয়া উচিত, অজ্ঞ লোকের মত নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Nilu Ahmed ৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০২ পিএম says : 0
    সত্য বলেছেন।এক বোন তার ভাই হততার দূঃখ নিয়ে সত্য বিচার দাবি ।
    Total Reply(0) Reply
  • Ahmed ৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ৫:৩২ পিএম says : 0
    Right cent percent. Awami League is suffering now from Zamaat phobia. Irresponsible advance comment affects investigation.
    Total Reply(0) Reply
  • ৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:৫১ পিএম says : 1
    সঠিক তদন্ত চাঈ|যার দ্বারা প্রকৃত অপরাধি বের হবে|অপরাধির কঠিন শাস্তি চাই|
    Total Reply(0) Reply
  • manaranjan Barman ১১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:৫০ এএম says : 0
    I support to elder sister comment of late MP Liton.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এমপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ