Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পানি শূন্যতায় মহাসংকটে দুই তীরের সেচনির্ভর কৃষক

ব্রহ্মপুত্র নদ নাব্য হারিয়ে এখন মরা খাল

| প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : প্রবাহমান কালের উত্তাল বহ্মপুত্র নদ আজ স্মৃতির অতলে হারিয়ে যাচ্ছে। ভয়াবহ নাব্য সঙ্কট ব্রহ্মপুত্রকে বিপর্যস্ত করে তুলছে। ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় পরিবেশ বিপর্যয়সহ কৃষি আবাদে নেমে এসেছে ভয়াবহ স্থবিরতা। নদীর তলদেশে পানি না থাকায় সেচ নির্ভর কৃষকরা পড়েছে মহা সংকটে। ব্রহ্মপুত্র নদের দু-পারের মানুষের প্রাণের দাবি অতিদ্রুত নদের ড্রেজিং করে পানির প্রবাহ পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হউক। সরেজমিনে ব্রহ্মপুত্র নদ এলাকার কৃষক ও বিশিষ্টজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিগত ৫০ বছরেও কোন ড্রেজিং না করায় নদের তলদেশে পলি জমে এর নাব্য হ্রাস পেয়ে এক কালের উত্তাল নদ ছন্দ হারিয়ে আজ মরা গাঙয়ে পরিচিত হয়ে উঠেছে। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে জীব বৈচিত্রসহ মৎস্য সম্পদ ও নানা জলজ প্রাণী। হাজার হাজার জেলে পরিবার এ পেশা ছেড়ে বেকারত্ব ঘোচাতে বেছে নিয়েছে অন্য পেশা। খেয়া পারের মাঝিরা বৈঠা ছেড়ে কলের নৌকা চলিয়েও শেষাবধি ছাড়তে হয়েছে বাপ-দাদার পেশা। জালের মতো ছড়িয়ে থাকা শাখা নদীগুলো এখন বিত্তবানদের ফসলি জমি। ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী দুপাশে কয়েক লাখ হেক্টর জমি, এ নদের পানির সেচ ব্যবস্থা নির্ভর ছিল। বর্তমানে মূল নদে পানি না থাকায় সেচ ব্যবস্থা গভীর সঙ্কটের মুখে পড়েছে। নদীর পানিতে যে সব গরীব কৃষক স্বল্প খরচে সেচ ব্যবস্থার আওতায় ছিল তাদের এখন মাথায় হাত। বিত্তবান কৃষকরা গভীর নলকূপ বসিয়ে সেচ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যারা নগদ টাকা দিতে পারছে তারাই শুধু পানি পাচ্ছে। এ সুযোগে এক শ্রেণীর মহাজনরা চড়া সুদে হাতিয়ে নিচ্ছে কৃষকের কষ্টার্জিত ফসলের টাকা। জলবায়ু সংকট ও নদের পানি শূন্যতায় এসব এলাকায় জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। পাকুন্দিয়া, টোক থেকে হোসেনপুর, গফরগাঁও ও ময়মনসিংহ জমালপুর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদ এখন প্রায় বিলীন হতে চলেছে। পানির প্রবাহ না থাকায় নদের  তলদেশে চলছে চাষাবাদ। এ সুযোগে এক শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তাকে কৌশলে ম্যানেজ করে বিশেষ প্রভাবশালী মহল কোটি-কোটি টাকার বালু ও মাটি অবৈধভাবে বাণিজ্য করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছে। ফলে একদিকে সরকার হারাচ্ছে বড় অংকের রাজস্ব অন্যদিকে হুমকির মুখে রয়েছে বিভিন্ন এলাকা ও বড় ব্রিজ কালভার্ট। শুকনা মৌসুমে পানি কমে গেলে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল দখল নিতে প্রতি মৌসুমেই মারামারিতে প্রাণহানি ঘটে। ব্রহ্মপুত্রের চর, খাস জমি ও বালু ব্যবসার আদিপত্যকে কেন্দ্র করে সামাজিক অসন্তোষ দিন-দিন বেড়েই চলছে। নাব্যতার কারণে বর্ষায় একটু পানিতেই নদী এলাকার আশপাশ পানিতে প্লাবিত হয়ে দেখা দেয় ভাঙন। বর্ষা মৌসুমে ভাঙন রোধে কোন কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম, বিস্তীর্ণ ফসলি জমি, স্কুল মাদ্রাসা। এ এলাকার মানুষের অভিযোগ বারবার প্রসাসনের কাছে ধর্ণা দিলেও নেয়া হয়নি তেমন কোন সরকারি উদ্যোগ। নাব্যতা সংকটের কারণে শুকনো মৌসুমে সাধারণ নৌকাগুলোও চলতে পারে না, ফলে নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ায় ব্যবসা বাণিজ্যতেও এর প্রভাব পড়েছে। প্রাকৃতিক জল বৈচিত্র্য ধংস হয়ে যাওয়ায় প্রাণীকুলের ভারসাম্য হারিয়ে যাচ্ছে। তৎকালীন বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে নৌ বহর নিয়ে হোসেনপুর এলাকা দিয়ে যাতায়াত করতেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নৌ বহর ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে নিয়মিত টহল ও রসদ সরবরাহের নিরাপদ পথ হিসেবে ব্যবহার করত। হোসেনপুরে তারা নীলকুঠিও স্থাপন করেছিল। সমৃদ্ধ ইতিহাস আজ কেবল অতীত স্মৃতি, নাব্যতা সঙ্কটে ব্রহ্মপুত্র বিপন্ন। এ ব্যপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকবার পরিদর্শন করেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি। যদি সরকারি উদ্যেগে ব্রহ্মপুত্র নদ অতি দ্রুত ডেজিং করা না হলে বিপর্যয় নেমে আসবে দুপাড়ের মানুষের জীবনে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ