Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধনে পাতায় ঘুরছে সাটুরিয়ার কৃষকের ভাগ্যের চাকা

| প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ সোহেল রানা খান, সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) থেকে : মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় শীত মৌসুমে বাণিজ্যিকভাবে ধনে পাতা চাষ করে লাভবান হচ্ছে কৃষক। আর ধনে পাতা ক্ষেত থেকে তুলে দেবার কাজ করে উপজেলার প্রায় ৫ শতাধিক নারী বাড়তি উপার্জন করছে। আবার ধনে পাতা কৃষকের কাছ থেকে কিনে ঢাকার কাওরান বাজারে নিয়ে পাইকারি বিক্রি করে লাখপতি হয়েছে বেশ কয়েকজন পাইকারি সবজি বিক্রেতা। সাটুরিয়া উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানায়, সাটুরিয়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে ১০৫ হেক্টর জমিতে ধনে পাতা চাষ হয়েছে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে বরাঈদ, তিল্লী ও ফুকুরহাটি ও হরগজে সবচেয়ে বেশি ধনে পাতা চাষ হয়। সাটুরিয়া উপজেলার ফুকুরহাটির রাইল্লা, কান্দাপাড়া, জান্না, হরগজের নয়াপাড়া, খাসির চর, বরাঈদের আগ সাভার, গোপালপুর চর, তিল্লীর আয়নাপুর ও আকাশী এলাকার কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে ভুট্টার সাথে দৈত ফসল হিসেবে ধনে পাতা চাষ করে লাভবান হচ্ছে। সরেজমিন সাটুরিয়া উপজেলার ফুকুরহাটি ও বরাঈদে গিয়ে দেখা যায়, দুই ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক চাষি ধনে পাতার চাষ করেছে। জমি থেকে ধনে পাতা তুলছে নারী পুরুষ দলবেঁধে। জমি থেকে ধনে পাতার গাছ তুলে ক্ষেতের পাশে ঝুড়ি ভরে জমা করছে। পরে পুকুর কিংবা জলাশয়ে নিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে আঁটিবেঁধে ট্র্রাকে করে বিক্রির জন্য ঢাকার কাওরান বাজার নিয়ে যাচ্ছে। আর ধনে পাতা তুলার কাজ করছে স্থানীয় কয়েক শত নারী-পুরুষ ও স্কুলের ছাত্ররা। নারীরা ধনে পাতা জমি থেকে তুলে দেবার কাজ করে বাড়তি আয় করছে। ফুকুরহাটি গ্রামের ধনে পাতা চাষি মাজেদুল জানায়, ৭৫ শতাংশ জমিতে ধনে পাতা চাষ করেছে সে। বীজ, সার ও জমি তৈরি সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৭ হাজার টাকা। সে জমির ধনে পাতা পাইকারের কাছে বিক্রি করেছে ৪০ হাজার টাকা। কৃষক খবির উদ্দিন জানায়, ধনে পাতা বপনের ৭ দিন পরেই জমিতে ভুট্টার বীজ বপন করেছি। ১৩ শতাংশ জমিতে দৈতভাবে ভুট্টা ও ধনে পাতার চাষ করে ধনে পাতা উঠিয়ে বিক্রি করেছি ১০ হাজার টাকা। আর ভুট্টা গাছ বড় হচ্ছে। এলাকার বেশিরভাগ কৃষকই এখন এক সাথে ভুট্টা ও ধনে পাতার চাষ করছে। ধনে পাতার বীজ বপনের মাত্র দেড় মাস পরেই সাটুরিয়ার কৃষক সাধন আলী ৬০ শতাংশ জমিতে ধনে পাতা চাষ করে বিক্রি করেছে ৩৫ হাজার টাকা। মহর আলী ৩৫ শতাংশ জমিতে চাষ করে বিক্রি করেছে ২১ হাজার টাকার ধনে পাতা। রাইল্লা গ্রামের সাজেদা বেগম জানায়, গত প্রায় ১৩ বছর যাবৎ শীতের সময় সে জমি থেকে ধনে পাতা তুলে দেবার কাজ করে। বাড়ির সকল কাজ শেষে প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জমি থেকে ধনে পাতা তুলে দিয়ে সে ১০০ টাকা করে পায়। সে জানায় তার মতো তার গ্রামের প্রায় ২ শতাধিক নারী শীতের সময় এক বেলা করে ধনে পাতা তুলে দিয়ে বাড়তি আয় করছে। কান্দাপাড়া মজিবর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র শাহিনুর ও শাহদাৎ জানায়, স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। প্রতিদিন বিকেলে জমি থেকে পাইকারদের ধরে পাতা তুলে দেবার কাজ করছে তারা। দুপুর থেকে ৩ ঘণ্টা কাজ করে আয় করছে ১৫০ টাকা। জান্নার কাদের বেপারী জানায়, প্রতিবছর ১৩/১৫ জন চাষিদের কাছ থেকে জমির বপন করা সবটুকু ধনে পাতা কিনে নেয় সে। তারপর এক বেলা কাজ করা নারী ও পুরুষ দিয়ে ধনে পাতা জমি থেকে উঠিয়ে ঢাকার কাওরান বাজারে নিয়ে পাইকারি বিক্রি করে সে। তাতে প্রতি সিজনে সব খরচ বাদ দিয়ে তার ২ থেকে ৩ লাখ টাকা লাভ হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ