Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ক্ষমতাসীন দলের হুমকি তাদের দলীয় সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ রিজভী

| প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : পদ্মা সেতু নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সংশয়ের প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দেয়া বক্তব্য  ক্ষমতাসীন দলের হুমকির সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করে বিএনপি
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এই বক্তব্য দেশে আওয়ামী লীগের হুমকির সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ। এটা গণতন্ত্রের জন্য বিরাট হুমকি। বর্বর, অগণতান্ত্রিক, জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন স্বৈরাচারী সরকারই মানুষের কথা বলা বন্ধ করার জন্য হুমকি প্রদর্শন করে, তারা দুর্নীতি করে বলেই মানুষের কথা বলা বন্ধ করার জন্য হুমকি দেয়।
গত সোমবার রাজধানীর মিরপুরে এক আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতু নিয়েও খালেদা জিয়া অনেক কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, সারা জীবনেও নাকি পদ্মা সেতু হবে না।
পদ্মা সেতুর কোথায় দুর্নীতি হয়েছে প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি। চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন। প্রমাণ করতে না পারলে আপনাকে মামলার সম্মুখীন হতে হবে।
ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা সহজ করতে পদ্মা সেতু নির্মাণ ছিল ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি।
সেতু বাস্তবায়নে অর্থ সহযোগিতায় এগিয়ে আসে বিশ্ব ব্যাংক। তবে অর্থ ছাড়ের আগেই প্রকল্পে ‘দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ তোলে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা এই সংস্থা। প্রায় এক বছর টানাপড়েনের পর বিশ্ব ব্যাংক থেকে অর্থ সহযোগিতার আবেদন প্রত্যাহার করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করে বাংলাদেশ সরকার।
শিশুদের বিনামূল্যে বই নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ তোলে রিজভী বলেন, দেশে কোমলমতি শিশুদের বিনামূল্যে বই বিতরণের নামে প্রতারণা চলছে। শিক্ষামন্ত্রী ঘটা করে বই বিতরণের উৎসব করলেও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টাকা ছাড়া বই পাচ্ছে না শিশুরাÑ এমন অভিযোগ পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের একটি মাত্র বই সরবরাহ করে উৎসব করা হচ্ছে, বলা হচ্ছে বই উৎসব। উৎসবের নামে কোমলমতি শিশুদের সঙ্গে বই বিতরণের এই প্রতারণা ও তামাশা বন্ধ করার জন্য আমি বিএনপির পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি।
পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে সরকারের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে রিজভী বলেন, আমরা বলতে চাই, ২০১১ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করল কেন বিশ্ব ব্যাংক? পদ্মা সেতুর কাজ পেতে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে দেশপ্রেমিক সার্টিফিকেট দিয়ে মন্ত্রিত্ব কেড়ে নিয়েছিলেন কেন? সচিবসহ কয়েকজন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল কেন?
আমরা বলতে চাই, ক্ষমতাসীনদের হুমকি, অন্যায়-অনাচার কোনো কিছুই হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো মিলিয়ে যাচ্ছে না। প্রতিটি অপকর্মের হিসাব রেজিস্ট্রি থাকছে। দেশবাসীর কাছে এগুলোর হিসাব দিতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর দুর্নীতির বিষয়ে বিএনপি  চেয়ারপারসন তো এটা বলছেন না, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বলছে। খববের কাগজ-পত্রিকা-গণমাধ্য্যম এসব থেকে সবকিছু ছুটে আসছে। আর কত তথ্য প্রমাণ দেয়া যাবে। প্রমাণ দেয়ার অবকাশ আছে বলে আমার মনে হয় না।
যে নেত্রী গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছেন, তার বিরুদ্ধে আজ হুমকি ও মামলা সরকারের একমাত্র অস্ত্র। তাকে (নেত্রী) বারবার আদালতে হাজির করা হচ্ছে তাদের একমাত্র অস্ত্র। এটার মধ্য দিয়ে ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার তাদের যে বাসনা, সেই বাসনাকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে।
রিজভী বলেন, ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি  ভোটকেন্দ্রে মানুষ যায়নি। দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ভোট বর্জন করেছে। ক্ষমতাসীন দল একতরফা নির্বাচন করেছে। ১৫৩টি আসনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না, যেগুলোতে হয়েছে তারা নিজেরা মিলে করেছেন। এই দিবসে সারাদেশে কালো পতাকা মিছিল ও নেতা-কর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবে। ৭ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ হবে। এসবের সব প্রস্তুতি চলছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অনুমতি পেয়েছেন কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আবেদন জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। অনুমতি দিচ্ছি, এ নিয়ে কথা বলছি ইত্যাদি ইত্যাদি বলছেন। কখনো ১২ ঘণ্টা আগে, কখনো ৪৮ ঘণ্টা আগে অনুমতি  দেয়া হয়। এটাও হচ্ছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে, যাতে খুব বড় ধরনের অর্গানাইজ করতে না পারে। কারণ তারা বিপুল জনগণকে  দেখলে ভয় পায়।
তিনি বলেন, তারপরও প্রশাসনকে আশ্বস্ত করতে চাই, এই সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। যত সুশৃঙ্খল রাখা দরকার তা করা হবে। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আশা করি, সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ এবং ১ নম্বর চাকড়পাইয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুর রহমানকে কয়েক দিন আগে বরখাস্ত করায় নিন্দা জানান রিজভী।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, কেন্দ্রীয় নেতা এ বি এম মোশাররফ হোসেন, আব্দুস সালাম আজাদ, মুনির  হোসেন, হারুনুর রশীদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ