রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
আতিয়ার রহমান, নড়াইল থেকে : প্রকৃতিতে শীত ঝেঁকে বসায় খেজুরগাছ থেকে মধুরস আহরণ শুরু হয়েছে। গ্রামবাংলার ঐহিত্যের প্রতীক খেজুর রস ঘিরে গ্রামীণ জনপদে শুরু হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। রসের পাশাপাশি নড়াইলের হাটবাজারে বিক্রি হচ্ছে খেজুর গুড়ের পাটালি। গুড়ের মৌ মৌ গন্ধে ভরপুর হাটবাজারগুলো। এই রস ও গুড় দিয়ে পাড়া-মহল্লায় তৈরি হচ্ছে নানা প্রকার পিঠা-পায়েস। এদিকে খেজুর রস ও গুড়ের ঐহিত্য বাঁচিয়ে রাখতে পথে-প্রান্তরে, মাঠেঘাটে বেশি করে খেজুর গাছ রোপণ এবং রক্ষণাবেক্ষণে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন গাছি, পরিবেশবিদ ও প্রকৃতিপ্রেমীরা। এক্ষেত্রে খেজুর গাছ রোপণে গাছি ও কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে ‘কৃষি প্রণোদনা’ চালুর দাবি করেছেন সবাই। লোহাগড়া উপজেলার আমাদা গ্রামের গাছি জামাল শেখ (৫৮) জানান, এ বছর ৮০টি খেজুর গাছ তুলেছেন (রস উপযোগী) তিনি। কোনো গাছে রস আসতে শুরু করেছে, আবার কোনো গাছে বুথি (গাছ তোলার দ্বিতীয় পর্ব) টেনে নলি দেয়ার অপেক্ষায় আছেন। তিনি আরো জানান, খেজুর গাছ থেকে সপ্তাহে সাধারণত একবার রস বের করা হয়। গাছের অবস্থা বুঝে (গাছ শক্ত হলে) সপ্তাহে পরপর দু’দিনও রস বের করেন গাছিরা। আর অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি থেকে ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত খেজুর রস সংগ্রহ করা যায়। সদর উপজেলার চারিখাদা গ্রামের হালিম মোল্যা (৪২) বলেন, কোনো প্রকার ভেজাল ছাড়াই আমরা বাড়িতে গুড় তৈরি করি। প্রতি কেজি পাটালি গুড়ের মূল্য রাখা হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। আর এক ঠিলা (ভাড়) রস বিক্রি করি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে। উড়ানী গ্রামের রাজ্জাক মোল্যা (৪৪) জানান, খেজুর রস ও শুকনো নারিকেল (ঝুনা) একসঙ্গে জ্বালিয়ে ‘নারকেল পাটালি’ তৈরি করা হয়। এই নারকেল পাটালি স্বাদে অতুলনীয়। প্রতি কেজির দাম ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা। ছিয়ারন বেগম (৫৫) বলেন, রস দিয়ে পাটালি, নারকেল পাটালি, জমাটবাঁধা গুড় ও পাতলা গুড় তৈরি করি। এসব গুড় বাড়ি থেকেই কিনে নেন ক্রেতারা। অনেক সময় বাজারেও বিক্রি করা হয়। প্রায় দুই ভাড় রস দিয়ে এক কেজি গুড় তৈরি করা যায়। কালিয়ার রগুনাথপুর গ্রামের গাছি শওকত শেখ (৪৫) ও বাসার বিশ্বাস (৪৭) জানান, জ্বালানির অভাব এবং কাঁচা রসের চাহিদা থাকায় গুড়ের চেয়ে রস বিক্রি করা লাভ বেশি। তাই রস বিক্রি করেন তারা। রূপগঞ্জ ও লোহাগড়ার বাজারের কয়েকজন গুড়বিক্রেতা জানান, স্থানীয় গাছিদের খেজুর গুড় ছাড়াও যশোর ও উত্তরাঞ্চলের গুড় নড়াইলের হাটবাজারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে। গুড়ের মৌ মৌ গন্ধে ভরপুর হাটবাজারগুলো। বাজারে পাটালি ও জমাটবাঁধা গুড়ের চাহিদা বেশি। এ ছাড়াও প্রতিদিন ভোরে গাছিদের কাছ থেকে চাহিদা মতো রস কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা। কালনাঘাটের গুড় বিক্রেতা জাকির হোসেন বলেন, বাজারের গুড় চিনিমিশ্রিত কিনা, তা সহজে বোঝা যায় না। তাই বিক্রির সময় শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। ক্রেতারা জানান, দাম একটু বেশি হলেও ভালো মানের রস ও গুড় কিনতে চান তারা। যে রস ও গুড়ে চিনি মিশ্রিত থাকবে না। লোহাগড়ার ঈশানগাতী গ্রামের আবেদা সুলতানা ও নড়াইল পৌর এলাকার মহিষখোলা এলাকার রুমা খাতুন জানান, খেজুর রস ও গুড় দিয়ে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে রসচিতই, পুলি, ভাপা, হাতসেমাই পিঠা এবং পায়েস তৈরি হচ্ছে। দুধ-ভাতের সাথেও অনেকে গুড় খেয়ে থাকেন। রসের বেশি প্রয়োজন হয় রসচিতই ও পায়েস তৈরিতে। এ ছাড়া শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী মানুষ শীতের সকালে খেজুর রসের স্বাদ নিচ্ছেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে ভাইরাসের আশঙ্কায় কাঁচা রস পানের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। মৌসুমি পিঠা বিক্রেতারা জানান, শহরের বিভিন্ন গলিপথ, স্ট্যান্ডসহ লোকালয়ে চিতই, পুলি ও ভাপা পিঠার চাহিদা রয়েছে। এদিকে, আগের তুলনায় খেজুর গাছের সংখ্যা যেমন কমেছে, তেমনি কমেছে গাছির সংখ্যাও। এ ব্যাপারে খেজুর গাছ মালিক কালিয়ার রঘুনাথপুরের সাজ্জাদ হোসেন জানান, গাছির অভাবে তাদের ২৫টি গাছ থেকে দুই বছর রস আহরণ সম্ভব হচ্ছে না। অথচ সাত বছর আগেও তিনি চাহিদা মিটিয়ে রস বিক্রি করেছেন। তিনি আরো জানান, কয়েক বছর গাছ কাটা না (তোলা) হলে ওই গাছ থেকে পরে রস বের করতে গাছিদের অনেক কষ্ট করতে হয়। নোয়াপাড়া গ্রামের জাহিদ হোসেন জানান, একটি খেজুর গাছ তুলতে (রস উপযোগী করতে) গাছের ধরন অনুযায়ী গাছিকে দিতে হয় ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে। আর রস আহরণের দিন গাছিকে প্রতি ভাড়ের (মাটির কলস) অর্ধেক রস দেয়ার নিয়ম তো আছেই। মাইজপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী বাদশা আলমগীর বলেন, ইটভাটায় দাহ্য কাঠ হিসেবে খেজুর গাছের চাহিদা থাকায় কাঠব্যবসায়ী এবং ভাটা মালিকরা খেজুর গাছের দিকেই বেশি নজর দেন। ছোট ছোট খ- করে (আঞ্চলিক ভাষায় গুল) ইটভাটায় খেজুর গাছ দেয়া হয়। এতে আশঙ্কাজনক হারে খেজুর গাছ কমেছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) নড়াইল জেলা শাখার আহ্বায়ক খন্দকার শওকত বলেন, বিগত ১৫ বছরে ব্যাপকহারে ইটভাটায় খেজুর গাছের অপব্যবহার হয়েছে। নির্বিচারে খেজুর গাছ কাটা হলেও সেই তুলনায় বা তার চেয়ে বেশি খেজুর গাছ রোপণ করা হয়নি। এ কারণে গ্রামাঞ্চলের পথে-প্রান্তরে এবং বিলের ধারে আগের মতো খেজুরগাছের সারি চোখে পড়ে না। ইটভাটায় খেজুর গাছের অপব্যবহার বন্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ দরকার। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এভাবে খেজুর গাছের সংখ্যা কমতে থাকলে; এক সময় হয়তো খেজুর রস ও গুড় অতীত হয়ে যাবে। নড়াইলের জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিক সুলতান মাহমুদ বলেন, সুমিষ্ট খেজুর রস ও গুড়ের ঐহিত্য বাঁচিয়ে রাখতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। খেজুর গাছ রোপণ ও পরিচর্যার ক্ষেত্রে ‘কৃষি প্রণোদনা’ চালু করে কৃষক এবং গাছিদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর নড়াইলের উপ-পরিচালক শেখ আমিনুল হক বলেন, ‘এ জেলায় ১০০ হেক্টর জমিতে খেজুর গাছ রয়েছে। এ বছর ৯১২ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। রস ও গুড় গাছিদের জন্য লাভজনক। এক্ষেত্রে বিভিন্ন সড়কসহ জমিতে খেজুর গাছ লাগানোর জন্য কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি করা হচ্ছে।’ তবে, জেলায় কতটি খেজুর গাছ রয়েছে; সেই পরিসংখ্যান নেই কৃষি বিভাগের। এদিকে গাছিরা জানান, শীত যত বেশি জেঁকে বসবে, তত বেশি রস সংগ্রহ করা যাবে। এক্ষেত্রে রস ও গুড় বিক্রি করে আরো বেশি লাভবান হবেন বলে আশা করছেন গাছিরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।