Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম ও শিক্ষক সংকটে পাঠদান ব্যাহত

মুশুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

| প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সদর ইউনিয়নের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোচিং বাণিজ্য পরিচালনা, বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকা, কোচিং না করলে শিক্ষার্থীদের মারধর ও পরীক্ষার খাতায় নাম্বার কম দেয়া, বিভিন্ন অযুহাতে  অতিরিক্ত ফি আদায় ও ভাষা শহীদদের সম্মানের নির্মিত শহীদ মিনারকে ময়লার ভাগারে পরিণত ও বাৎসরিক হিসেব-নিকেশে গড়মিল দেখানোসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা যায়, ৮৪নং মুশুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্র চন্দ্র সরকার বিগত ২০বছর যাবৎ অত্র বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও আশানুরূপ শিক্ষার পরিবেশ পাচ্ছে না স্থানীয় দরিদ্র অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে টালবাহানা করে আসছেন বলে জানায় স্থানীয়রা। এসময় তারা আরো জানায়, বিভিন্ন সময় নানা অনিয়ম করেও স্বপদে বহাল রয়েছেন রহস্যজনক লেনদেনের মাধ্যমে। বিদালয় সূত্রে আরো জানা যায়, প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্র চন্দ্র সরকার প্রতিদিন সকাল ৯টায় শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে অবস্থান করার কথা থাকলেও  বিদ্যালয়ে আসেন দুপুর ১২ টায়। বিদ্যালয়ের পাশে বাড়ি থাকার অযুহাতে খাবারের কথা বলে নিজের কৃষি ফসলি জমি চাষ করেন বলেও রয়েছে অভিযোগ। প্রায় ৩ শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ৪ জন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করাতে বাধ্য হলেও প্রধান শিক্ষক নিয়মিত উপস্থিত না থাকায় ৩ জন শিক্ষক দিয়েই চলে পাঠদান। এতে সরকারি এ প্রতিষ্ঠান থেকে অভিভাবকরা মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে রবীন্দ্র চন্দ্র সরকার তার নিজ বাড়িতে শিক্ষার্থীদের স্কুল সময়ে সকাল ১১টা পর্যন্ত কোচিং বাণিজ্য করেন বলে জানান স্থানীয় অভিভাবক  পরিতোষ মন্ডল। তিনি আরো জানান, টাকার অভাবে মেয়েকে কোচিংয়ে ভর্তি না করায় গত বার্ষিক পরীক্ষায় চতুর্থ শ্রেণিতে ৪ বিষয়ে ইচ্ছেকৃত অকৃতকার্য দেখিয়েছে। একই বিদ্যালয়ের অপর অভিভাবক রফিকুল ইসলাম জানান, তার ছেলে রাফছানকে প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্র চন্দ্র সরকার তুচ্ছ অপরাধে বেত দিয়ে পিটিয়ে পিঠের চামরা তুলে দিয়েছে। শিক্ষকের ভয়ে কারো কাছে বিচার চাননি তিনি। এদিকে বিদ্যালয়ের মাঠে থাকা ভাষা শহীদদের জন্য নির্মিত শহীদ মিনারটিকে ময়লার ভাগারে পরিণত করেছে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে অবহেলার কারণে। শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারের পাদদেশে প্র¯্রাবসহ নানা ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখলেও শিক্ষকরা তাতে বাঁধা দিচ্ছেন না। পাশের বাড়ির বাথরুমটি করা হয়েছে শহীদ মিনার ঘেঁষে। এতে চরমভাবে শহীদ মিনারের অবমর্যাদা করা হলেও প্রধান শিক্ষকের যেন দায় নেই। তবে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি একাধিকবার প্রধান শিক্ষককে জানালেও কোন ব্যবস্থা না নেয়নি বলে অভিযোগ করেন খোদ সভাপতি আব্দুল জলিল মেম্বার নিজেই। এ সময় তিনি আরো বলেন, বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকা ও কোচিং না করলেই শিক্ষার্থীর খাতায় নাম্বার কম দেয়ার বিষয়ে বিদ্যালয়ের অভিভাবকরা আমার কাছে অভিযোগ করে। পরে প্রধান শিক্ষকের কাছে বিষয়গুলোর সমাধান চাইলে তিনি রেগে  গিয়ে বলেন কোচিং না করলে শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করতে পারবে না তাই বাধ্য হয়েই  কোচিং করাই। সভাপতি আরো বলেন, প্রতি বছর বিদ্যালয়ের আয় ব্যয় হিসেব-নিকেশেও গড়মিল দেখান তিনি।  এহেন নানা অভিযোগের মুখে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি, অভিভাবক ও স্থানীয় সচেতন মহল প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্র চন্দ্র সরকারের অপসারণ দাবি করে বলেন, বিদ্যালয়ের পাশে বাড়ি হলেও নানা অযুহাতে অনুপস্থিত থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বারোটা বাজাচ্ছেন তিনি।  এ সময় অভিভাবক কামিজদ্দিন, উৎপল সরকারসহ স্থানীয় সচেতন মহল তার অপসারণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের সুনজর দানের দাবি জানান। এসব বিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, বিদ্যালয়ের কাজেই বিভিন্ন সময় উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসে দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। বিধায় সময়মত ও নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকা সম্ভব হয় না। এ সময় কোচিং বিদ্যালয়ে করানো নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাড়িতে করান বলে জানান তিনি। শহীদ মিনারের ময়লার ভাগার পরিষ্কার করে দেবেন বলেও জানান। এসব বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম সরকার বলেন, শহীদ মিনারকে ময়লার ভাগার তৈরি করা চরম অন্যায় ও বে-আইনি। মুশরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিভিন্ন অনিয়ম বিষয়ে জেনেছি। ঘটনা তদন্ত করে দোষী সাব্যস্থ হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ