Inqilab Logo

শুক্রবার, ৩১ মে ২০২৪, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সাফল্যের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে এনবিআর

| প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : কর ফাঁকিবাজদের শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি দুর্নীতিবাজ এনবিআর কর্মকর্তাদেরও শাস্তি দিতে দেরি করছে না এনবিআর। পুরনো ধ্যান-ধারণা থেকে বের হয়ে নিত্যনতুন কৌশলের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করছে প্রতিষ্ঠানটি। আয়কর মেলা, মেলার আদলে কর অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন সেবায় আয়কর সপ্তাহ পালন ও অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের কারণে সহজে সেবা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এসব উদ্যোগের কারণে করদাতাদের সাথে এনবিআরের দূরত্ব অনেকটা কমেছে এমন দাবি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের। এ বছরেও নতুন নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে এনবিআরের আরো সাফল্য আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এসব পদক্ষেপের সুফল হিসেবে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আদায়ে সক্ষম হয় এনবিআর। বর্তমানে এনবিআরের হিসাবে করদাতার সংখ্যা ২৬ লাখের মতো। প্রায় ৬ লাখ নতুন করদাতাকেও শনাক্ত করেছে এনবিআর। এছাড়া জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রত্যেক মাসেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আদায় হয়। নভেম্বর পর্যন্ত গত ১১ মাসের গড় প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। ডিসেম্বর মাসের রাজস্ব আদায়ের হিসাব পাওয়া না গেলেও এ মাসেও প্রবৃদ্ধি ভালো অবস্থানে আছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
চলতি অর্থ-বছরে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় দুই লাখ তিন হাজার ১৫২ কোটি টাকা। এ বড় অংঙ্কের রাজস্ব আদায়ে এনবিআর করদাতাদের সঙ্গে দূরত্ব কমাতে রাজস্ববিষয়ক সমস্যার সমাধানে ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন খাতের সঙ্গে রাজস্ব সংলাপে বসে। এসব বৈঠকে চিহ্নিত সমস্যার অতি দ্রুত সমাধানের পথে হাঁটে এনবিআর। এনবিআরের নেয়া পদক্ষেপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, সম্ভাবনাময় বৃহৎ ও মাঝারি করদাতা চিহ্নিত করে মনিটর করা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, আমদানি পর্যায়ে মিথ্যা ঘোষণা ও অবমূল্যায়ন সম্পর্কিত কার্যক্রমে কঠোর নজরদারি, রাজস্ব ফাঁকি দেয়া পণ্য খাতের কর্মকা- নিবিড় তদারকি, করদাতাদের সেবা বৃদ্ধি ও করদাতাদের সঙ্গে (খাতভিত্তিক) আলোচনার মাধ্যমে কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ করা। ২০১৬ সালে আয়কর মেলার মাধ্যমে বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায় করে এনবিআর। মেলা থেকে দুই হাজার ১২৯ কোটি ৬৭ লাখ ৭৫ হাজার ৮১১ টাকার আয়কর সংগ্রহ করে এনবিআর।
রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ও রাজস্ব আদায়েও রেকর্ড গড়েছে এনবিআর। পুরাতন বছরে সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ঘোষিত চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এনবিআরের ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রাও বেশ আলোচনায় রয়েছে। এর মধ্যে আয়কর খাতে ৭১ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা, মূল্য সংযোজন করে (মূসক/ভ্যাট) ৭২ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা এবং আমদানি-রপ্তানি শুল্কে ৫৮ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ তথ্যানুসারে চলতি অর্থ-বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ১৬ দশমিক ৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে। গত জুন মাস পর্যন্ত কিংবা ২০১৫-১৬ অর্থ-বছরে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে নতুন রেকর্ড গড়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। যা বছরের মাঝামাঝি সময়ে বেশ আলোচিত ছিল। যেখানে ২০১৫-১৬ অর্থ-বছরের প্রথম নয় মাসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ছিল ১৪ হাজার ৪৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সেখান থেকে অর্থ-বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ৭৮৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আদায় করে বেশ চমক সৃষ্টি করেছিল প্রতিষ্ঠানটি।
রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন উদ্যোগে করদাতা সংগ্রহে বড় ধরনের সাফল্য এসেছে। ইতিমধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রত্যাশিত ২৫ করদাতা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে। সর্বশেষ তথ্যানুসারে ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বর (ইটিআইএন) নেয়া করদাতার সংখ্যা ২৫ লাখ ৭৫ হাজার। এনবিআর আশা করছে বছর শেষে নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা ৩০ লাখ অতিক্রম করবে।
রাজস্ব ফাঁকিবাজদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানে চলছে ‘এনফোর্সমেন্ট মাস’। শুল্ক ও ভ্যাট গোয়েন্দাসহ সকল অফিসকে রাজস্ব ফাঁকিবাজদের খুঁজে বের করা ও বকেয়া রাজস্ব আদায়ে আইন প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছে এনবিআর। করদাতা হয়রানি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধেও ‘জিরো টলারেন্স’ ছিল এনবিআরের। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত ও প্রথমবারের মতো পদাবনতির শাস্তি দেয়া হয়েছে।
আগারগাঁওয়ের নিজস্ব রাজস্ব ভবনে প্রথমবারের মতো মেলার আয়োজন করে চমক সৃষ্টি করেছে এনবিআর। প্রথমবারের মতো মেলায় অনলাইন রিটার্ন দাখিলে বেশ সাড়া দেন করদাতারা। এবার ৮ বিভাগে ৭ দিন, সকল জেলায় ৪ দিন, ৮৬ উপজেলা শহরে দু’দিন করে মোট ১৫০টি স্পটেও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমবারের মতো ট্যাক্স কার্ড নীতিমালা সংশোধনের মাধ্যমে কার্ড সংখ্যা বৃদ্ধি ও কার্ড প্রদানে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। ২০টির পরিবর্তে ৩ ক্যাটাগরিতে ১৪১ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ট্যাক্স কার্ড দেয়া হয়। সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী ৩০০ করদাতাকে সম্মাননাও দেয় এনবিআর।
এছাড়া বিদেশি নাগরিকদের অনেকেই আয়কর ফাঁকির সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণ পেয়েছে এনবিআর। বিদেশিদের দেশত্যাগের আগে আয়কর সনদপত্র যাচাই করতে শাহজালাল, শাহ আমানত, ওসমানী বিমানবন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরে আগস্টে আলাদা ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশত্যাগের সময় দু’শতাধিক আয়কর ফাঁকিবাজ বিদেশি ধরা পড়েছেন এবং তাদের কাছ থেকে প্রায় ৭ কোটি টাকার বেশি আয়কর আদায় করেছে এনবিআর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এনবিআর

২২ নভেম্বর, ২০২২
২৪ অক্টোবর, ২০২২
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ