পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সর্বস্বান্ত হচ্ছে ঋণগ্রস্ত পরিবারগুলো হাই কমিশন নীরব দর্শকের ভূমিকায়
শামসুল ইসলাম : স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ার নাইট ক্লাবগুলোতে নানা আয়োজনে শিল্পীদের নৃত্যের তালে তালে এক শ্রেণির প্রবাসী বাংলাদেশীদের লাখ লাখ টাকা উড়ছে দেদারসে। ভিনদেশি ও স্ব-দেশি শিল্পীদের অশ্লীল নৃত্য চলাকালে জনশক্তি রফতানির সাথে জড়িত বহু দালাল, প্রবাসী ব্যবসায়ী ও কিছু কিছু কর্মী দু’হাতে রিংগিট উড়িয়ে দিয়ে আনন্দ উল্লাসে রাত কাটাচ্ছে। নাইট ক্লাবগুলোর মালিকরা বৈধ লাইসেন্স নিয়ে এসব চটকদারী নৃত্যের আয়োজন করে রাতারাতি কালো টাকার মালিক বনে যাচ্ছে। মালয়েশিয়ার পেনাংসহ বিভিন্ন অঞ্চলে কসমিকের নামে জুয়ার আসরেও বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী হাজার হাজার রিংগিট বাজি ধরে পথে বসছে। দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় অবস্থান করে কোনো কোনো বাংলাদেশী দেশটিতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সুবাধে নাইট ক্লাব ও জুয়ার আসরে আধিপত্য বিস্তার করছে। এক শ্রেণির দালালচক্র বাংলাদেশ থেকে কথিত মহিলা শিল্পীদের ভাড়া করে মালয়েশিয়ার নাইট ক্লাবগুলোতে রাতভর নৃত্য পরিবেশন করে টু’পাইস কামিয়ে নিচ্ছে। এসব দালাল চক্রের সাথে অনেক হোমরা-চোমরাদের দহরম মহরম রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মালয়েশিয়ার একাধিক প্রবাসী ব্যবসায়ী এ তথ্য জানিয়েছেন। তাদের মতে, কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন কর্তৃপক্ষ এসব নাইট ক্লাবে যাওয়া পথভ্রষ্ট প্রবাসীদের সুপথে ফিরিয়ে আনার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বাংলাদেশ হাই কমিশন মালয়েশিয়া সরকারের সহায়তায় পেনাংসহ কুয়ালালামপুরের নাইট ক্লাব ও জুয়ার আসরগুলোতে মাঝে-মধ্যে অভিযান চালালে পথভ্রষ্ট প্রবাসীরা অনেকটা সুপথের সন্ধান পেত। এতে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা পুনরুদ্ধার এবং প্রবাসীদের কষ্টার্জিত রেমিটেন্স বিপথে নষ্ট কম হতো। বিদেশের মাটিতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কষ্টের কামানো লাখ লাখ টাকা চিত্তবিনোদনের নামে নিমেষেই হাতছাড়া হচ্ছে। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে মালয়েশিয়ায় গিয়ে টাউট বাটপারের খপ্পরে পড়ে যারাই নাইট ক্লাবগুলোতে যাচ্ছে তাদের পরিবারগুলোই সর্বস্বান্ত হচ্ছে। এসব পথভ্রষ্ট প্রবাসী কর্মীদের কেউ কেউ বছরের পর বছর দেশের বাড়িতে পিতা-মাতা ও স্ত্রী-সন্তানের সাথেও যোগাযোগ রাখছে না। সম্প্রতি এ প্রতিবেদক মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে সরেজমিনে গেলে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
মালয়েশিয়ার পোলাও পেনাং কুমতা মার্কেটের পাশে চীনা মালিকানাধীন কসমিকে প্রতি দিন প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীদের কেউ কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা জুয়া খেলে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। জানা গেছে, ইতিমধ্যেই কুমিল্লার প্রবাসী দেলোয়ার, উত্তরবঙ্গের ফারুক ও নরসিংদীর মনির পেনাংয়ের কসমিকের জুয়ার আসরে লাখ লাখ রিংগিট হেরে পথে বসেছে। চীনা মালিকানাধীন এ কসমিকে (জুয়ার আসর ) সকাল ৮টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত একটানা জুয়া খেলা হচ্ছে। কুয়ালালামপুরের কোতোয়ারার শীর্ষ পর্যায়ের একজন প্রবাসী ও একটি রাজনৈতিক দলের নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সম্প্রতি ইনকিলাবকে বলেন, কুয়ালালামপুরের গ্র্যান্ড সিজন হোটেলের ১১ তলায় বোম্বে প্যালেস নাইট ক্লাব, পাকিজা লাইফ ড্যান্স, হোটেল ইস্তানায় অস্কার বোম্বে লাইফ ড্যান্স, আশিকী মুজরা (নাইট ক্লাব), ঘুঙ্গুট মুজরা, উলাইয়া কমপ্লেক্স তাজমহল মুজরা, দেবদাস মুজরা, সাঙ্গাম মুজরায় দেশীয় ও ভিনদেশীয় শিল্পীদের আকর্ষণীয় নৃত্য উপভোগ করে প্রতি রাতে প্রবাসী বাংলাদেশীরা হাজার হাজার রিংগিট উড়াচ্ছে। নাইট ক্লাবের নেশায় পড়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের অনেকেই সর্বস্ব খুয়িয়ে পথে বসেছে। নাইট ক্লাবের নিয়মিত গ্রাহক করিম নিজের দোকান হাত ছাড়া করেছে। ঢাকা বিরিয়ানী হাউজের স্বত্বাধিকারী মোশাররফ বিরিয়ানীর দোকান বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। লিটন নামের এক প্রবাসীও আর্থিকভাবে ফতুর হয়েছে। এক শ্রেণির দালাল চক্র দেশ থেকে ছদ্মনাম লিপি, মায়া, সুজানা, রোজিনা, পাপিয়া চম্পা ও স্বপ্না নামের নৃত্য শিল্পীদের মালয়েশিয়ার নাইট ক্লাবগুলোতে এনে প্রতি মাসে লাখ লাখ রিংগিট হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। এসব শিল্পীদের অশ্লীল নৃত্য উপভোগ করে প্রতিযোগিতামূলক উপহার দিতে গিয়ে প্রবাসীরা মোটা অংকের রিংগিট উড়াচ্ছে। নাইট ক্লাবগুলোতে বিনোদনের নামে যারাই নানা প্রক্রিয়ায় নৃত্য উপভোগ করছে তারা গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সাথে সম্পর্ক রাখতে পারছে না। ফলে তাদের অধিকাংশ পরিবারই ঋণের বোঝা টানতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। কুয়ালালামপুরের শীর্ষ পর্যায়ের প্রবাসী ব্যবসায়ী বলেন, নাইট ক্লাবগুলো থেকে প্রবাসী কর্মীদের সুপথে ফিরিয়ে আনা এবং দেশীয় নৃত্য শিল্পীদের অবাধে নৃত্যের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাংলাদেশ হাই কমিশন কর্তৃপক্ষকে মালয়েশিয়া সরকারের সাথে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে দেশের ভাবমর্যাদা অক্ষুণœ এবং অপহরণের মতো অপরাধ প্রবণতা হ্রাস পাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।