ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
ড. এ এস এম আজিজুল্লাহ
দেখতে দেখতে চৌষট্টিটা বছর কেটে গেল। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিক প্রমুখ ঢাকার রাজপথে বুকের তাজা-তপ্ত লহু ঢেলে দিয়ে ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন। সেদিন তাদের আত্মদানের ফল হিসেবে ‘বাংলা’ অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করে। তাই ভাষা আন্দোলন জাতীয় জীবনে এক অনন্য ঐতিহাসিক ঘটনা। জাতিসত্তার বিকাশে ভাষা আন্দোলনের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। একুশ মানে রক্তের অক্ষরে লেখা লাল টকটকে রক্তাক্ত ইতিহাস। একুশ আমাদের গর্ব, একুশ আমাদের অহঙ্কার। শুধু বাঙালি জাতির নয়, একুশ এখন আধুনিক বিশ্বের বিপন্ন ভাষাগুলোকে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণার উৎস। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্ক কর্তৃক ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষিত হওয়ার পর থেকে দীর্ঘ দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্বজুড়ে সোৎসাহে পালিত হচ্ছে। একমাত্র ভাষার কারণে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে সগৌরবে স্বীকৃত। শুধু তাই নয়, আফ্রিকান রাষ্ট্র সিয়েরালিওনে বাংলা ভাষাকে অন্যতম সরকারি ভাষার মর্যাদা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, লন্ডনে প্রচলিত তিন শতাধিক ভাষার মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষা হচ্ছে ‘বাংলা’। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসামসহ সারা বিশ্বে বর্তমানে ২৫ কোটিরও বেশি লোকের মাতৃভাষা ‘বাংলা’।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ’৫২র ভাষা আন্দোলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় এই চূড়ান্ত লগ্নটি একদিনে আসেনি বা মাত্র কয়েক দিনের পরিশ্রমের ফল নয়। বরং এর পেছনে রয়েছে একটি সামগ্রিক প্রচেষ্টা। সে প্রচেষ্টারও আছে একটি ধারাবাহিক পটভূমি, যা রাতারাতি গড়ে ওঠেনি। এ আন্দোলনের ইতিহাসের শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। ইতিহাস বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৭৭৮ সালে ব্রিটিশ কোম্পানি সরকারের পক্ষে বাঙালিদের ইংরেজি শেখানোর উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ লেখক ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হলহেড এৎধসসধৎ ড়ভ ঃযব নবহমধষ ষধহমঁধমব নামে একটি ব্যাকরণ রচনা করেন। কোম্পানি সরকারের সুবিধার কথা চিন্তা করে উক্ত বইয়ের ভূমিকায় তিনি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে প্রস্তাব পেশ করেন। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণে এটাই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রথম প্রস্তাব। বাংলা নিয়ে বঙ্গভঙ্গ ও রদসহ অনেক রাজনীতি হয়েছে। উভয় দিকে থেকে এ আন্দোলনে রাজনৈতিক দিকটি প্রাধান্য পেলেও মূলতঃ সে আন্দোলনে চেতনা হিসেবে মাতৃভাষা নেপথ্যে ভূমিকা পালন করে। ১৯১১ সালে রংপুরে অনুষ্ঠিত এক ‘প্রাদেশিক শিক্ষা সম্মেলন’ সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ভারতের অন্যতম ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং জাতীয় পর্যায়ে বাংলাকে স্বীকৃতি দানের আহ্বান জানান। ১৯১৮ সালে শান্তি নিকেতনে বিশ্বভারতীতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় ভারতের সাধারণ ভাষা কি হবে এ বিষয়ে আলোচনা হলে রবীন্দ্রনাথ হিন্দির পক্ষে মত দেন। তার এ মতের বিরোধিতা করে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ভারতের সাধারণ ভাষা হিসেবে বাংলাভাষার দাবি পেশ করেন। ঐ বছর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক পত্রে মহাত্মা গান্ধীকে লিখেছিলেন, ঞযব ড়হষু ঢ়ড়ংংরনষব হধঃরড়হধষ ষধহমঁধমব ভড়ৎ রহঃবৎপড়ঁৎংব রহ ঐরহফর রহ ওহফরধ. (সূত্র : প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্র বর্ষপঞ্জী, কলকাতা, ১৯৬৮, পৃ. ৭৮)। এদিকে কিছু মুসলমান নেতা ভারতের রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার জন্য সরকারকে নানাভাবে চাপ দিতে থাকে। এহেন উত্তাল পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় (১৯২১)। ইতিপূর্বে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যচর্চা ছিল কলকাতা কেন্দ্রিক। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ফলে পূর্ববঙ্গে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চায় নতুন গতি সৃষ্টি হয়। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে পূর্ববঙ্গে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত একটি বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণী গড়ে ওঠে। যে শ্রেণীটি বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি গভীরভাবে অনুরক্ত ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী পুনরায় ব্রিটিশ সরকারকে লিখিতভাবে জানিয়ে দেন যে, ভারতের রাষ্ট্রভাষা যা-ই হোক না কেন, বাংলার রাষ্ট্রভাষা বাংলা করতে হবে।
এক পর্যায় রাষ্ট্রভাষার দাবি বুদ্ধিজীবী মহল হতে পর্যায়ক্রমে রাজনৈতিক মহলসহ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। তখন অর্থাৎ ১৯৩৬-৩৭ সালে রাষ্ট্রভাষা বিতর্কে একদিকে জাতীয় কংগ্রেস হিন্দির পক্ষে প্রচারণা চালায়; অপরদিকে এর পাল্টা মুসলিম লীগের একটি অংশ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে প্রচারণায় নামে। ঠিক সেই সময় রাষ্ট্রভাষা বাংলার স্বপক্ষে অত্যন্ত জোরালো যুক্তি উপস্থাপন করে দৈনিক আজাদের সম্পাদক মওলানা আকরম খাঁ (১৮৬৮-১৯৬৮) ১৯৩৭ সালের ২৩ এপ্রিল উক্ত পত্রিকায় একটি সম্পাদকীয় নিবন্ধ প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘এই বিস্তৃত ভূখ-ে (বাংলা ভাষী অঞ্চল) প্রায় ৭ কোটি ৩০ লক্ষ লোক বাঙলা ভাষায় কথা বলে। হিন্দি ভাষীর সংখ্যা এর চেয়ে বেশি নয়। তাহা ছাড়া আসামী, উড়িয়া ও মৈথিলি বাঙলারই শাখা বলিলে অত্যুক্তি হয় না। পূর্ববঙ্গে, পশ্চিমবঙ্গে ও বাঙলার বিভিন্ন জেলায় উচ্চারণের কিছু প্রভেদ আছে বটে, কিন্তু লেখ্য বাঙলার রূপ সর্বত্র একই। সাহিত্যের দিক দিয়া বাঙলা ভারতের সমস্ত প্রাদেশিক সাহিত্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। বাঙলা ভাষায় বিবিধ ভাব প্রকাশোপযোগী শব্দের সংখ্যাও বেশি। অতএব বাঙলা সব দিক দিয়াই ভারতের রাষ্ট্রভাষা হইবার দাবি করিতে পারে। রাষ্ট্রভাষার আসনের উপর বাঙলা ভাষার দাবি সম্বন্ধে আর একটি কথাও বিশেষভাবে জোর দিয়া বলা যাইতে পারে। রাষ্ট্রভাষার নির্বাচন লইয়া হিন্দি-উর্দুর সমর্থকদের মধ্যে আজ যে তুমুল সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ উপস্থিত হইয়া গিয়াছে, তাহার ফলে হয়ত উর্দু ও হিন্দির মধ্যে কোনটারই রাষ্ট্রভাষার আসন অধিকার করা সম্ভবপর হইবে না। কিন্তু বাঙলাকে রাষ্ট্রভাষা রূপে গ্রহণ করা হইলে এই সাম্প্রদায়িক সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা বহু পরিমাণ কমিয়া যাইতে পারে।’
এরপর পর্যায়ক্রমে ১৯৪৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের একটি সাহিত্য সম্মেলনে বাংলাকে এ অঞ্চলের রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপিত হয়; ১৯৪৬ সালে প্রাদেশিক কাউন্সিলে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সম্পাদক আবুল হাশেম বাংলাকে পূর্ববাংলার রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করেন। ’৪৭ সালের ২৭ জুন আবুল মনসুর আহমদের সম্পাদনায় কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক মিল্লাত’ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, ‘পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা যে বাংলা ভাষাই হইবে ইহা বলাই বাহুল্য’। আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দীন আহমেদ ’৪৭ সালের ২৯ জুলাই হিন্দিকে ভারতের রাষ্ট্রভাষা এবং উর্দুকে ভবিষ্যৎ পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে অভিমত প্রকাশ করলে বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তার বিরুদ্ধে অত্যন্ত জোরালো ও যৌক্তিক প্রতিবাদ করেন, যা মাওলানা আকরম খাঁ ‘দৈনিক আজাদে’র মাধ্যমে ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা সমস্যা’ শিরোনামে প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কোর্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাভাষার পরিবর্তে উর্দু বা হিন্দি ভাষা গ্রহণ করা হলে এটা রাজনৈতিক পরাধিনতারই নামান্তর হবে। ... আমি একজন শিক্ষাবিদরূপে এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এটা কেবল বৈজ্ঞানিক শিক্ষানীতির বিরোধীই নয়, প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ও আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের নীতি বিগর্হিতও বটে’। পরেরদিন দৈনিক আজাদে আবারো ‘রাষ্ট্রভাষা বিষয়ক প্রস্তাব’ শীর্ষক এক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। সাংবাদিক মাহবুব জামাল জেহাদী লিখিত উক্ত নিবন্ধে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে জোরালো মত প্রকাশ করা হয়। এমতাবস্থায় ভারতবর্ষ ব্রিটিশ মুক্ত হয়। সৃষ্টি হয় ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি পৃথক রাষ্ট্র। পাকিস্তানের দুটি অংশ পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান।
স্বাধীনতার পরপরই পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী সুকৌশলে বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে কঠিন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতার দাপটে বিভিন্ন স্তর হতে বাংলা মুক্ত করার সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তারা পূর্ব বাংলার নিত্য ব্যবহার্য খাম, ডাকটিকিট, রেলগাড়ির টিকিট, বিভিন্ন ধরনের ফরম প্রভৃতিতে বাংলার ব্যবহার বন্ধ করে দেয়। এই প্রেক্ষপটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক আবুল কাশেম শিক্ষক ও ছাত্রদের সমন্বয়ে গঠক করে তমদ্দুন মজলিস নামের একটি সংগঠন। সংগঠনটি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সোচ্চার হয় এবং একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে। এসময় মুসলিম লীগের কিছু প্রগতিশীল নেতা বাঙালির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্য ‘গণআজাদী লীগ’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। যার পুরোভাগে ছিলেন কমরুদ্দীন আহমদ (আহ্বায়ক), মো. তোয়াহা, অলি আহাদ ও তাজউদ্দীন আহমেদ প্রমুখ নেতা। ভাষার প্রশ্নে গণআজাদী লীগের ঘোষণা ছিল, ‘বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এই ভাষাকে দেশের যথোপযোগী করিবার জন্য সর্বপ্রকার ব্যবস্থা করিতে হইবে। বাংলা হইবে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।’
পরবর্তীতে গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিকে সামনে রেখে শামসুল হক, শাসসুদ্দীন আহমেদ, শেখ মুজিব, তসাদ্দক আহম্মেদ প্রমুখ ছাত্র নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে গঠিত হয় ‘পাকিস্তান গণতান্ত্রিক যুবলীগ’। ভাষার প্রশ্নে গণতান্ত্রিক যুবলীগের প্রস্তাব ছিল, ‘বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার বাহন ও আইন আদালতের ভাষা করা হউক। সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কি হইবে তৎসম্পর্কে আলাপ-আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার জনসাধারণের উপর ছাড়িয়া দেয়া হউক এবং জনগণের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলিয়া গৃহীত হউক’। সে সময় রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদরা যে ভূমিকা পালন করেছিলেন; তার চেয়ে বহুগুণ বেশি ভূমিকা পালন করেছিল প্রগতিশীল ছাত্রসমাজ। তারা বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র রুখে দেন এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলেন।
’৪৭-এর ২৭ নভেম্বর করাচীর শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব গৃহীত হলে ঢাকার শিক্ষিত সমাজ যারপরনাই বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে এহেন ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে এক প্রতিবাদ সভার আহ্বান করা হয়। যেখানে মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক আবুল কাসেম, কল্যাণ দাসগুপ্ত প্রমুখ বক্তৃতা করেন। উক্ত প্রতিবাদ সভায় বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা এবং পূর্ব পাকিস্তানের সরকারি ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম করার দাবি জানান হয়। ভাষা আন্দোলনকে আরো শক্তিশালী ও গতিশীল করার লক্ষ্যে ডিসেম্বরের শেষ দিকে মুসলিম ছাত্রলীগ, গণতান্ত্রিক যুবলীগ ও তমদ্দুন মজলিশ সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নূরুল হক ভূঁইয়ার নেতৃত্বে প্রথম ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। উক্ত পরিষদ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বেশকিছু কর্মসূচি গ্রহণ করে। যার অংশ হিসেবে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান ঢাকায় এলে পরিষদের নেতৃবৃন্দ ’৪৮-এর ১ ফেব্রুয়ারি তার সাথে সাক্ষাত করে পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষার বিষয়-তালিকা হতে বাংলাকে বাদ দেয়া, মুদ্রা, ডাকটিকিট ইত্যাদিতে বাংলা ভাষা স্থান না পাওয়ার কারণ জানতে চাওয়ার সাথে সাথে তা পুনঃপ্রবর্তনের জোরালো দাবি জানান।
ইতোমধ্যে প্রগতিশীল কিছু ছাত্রনেতা ’৪৮-এর ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে বসে ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’ নামে একটি ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। যার আহ্বায়ক হন নঈমুদ্দীন আহমদ। এ সংগঠনটি সে সময় সরকারের নিকটে যে ১০ দফা দাবি পেশ করে তার অন্যতম ছিল বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করা। এ সংগঠনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং এর নেতাকর্মীরা ভাষা আন্দোলনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। ২৩ ফেব্রুয়ারি ’৪৮-এ পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশন শুরু হলে ভাষার বিতর্কে গণপরিষদ গরম হয়ে ওঠে।
[অসমাপ্ত]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।