আজ সোমবার (৬ মার্চ) ঝিনাইদহ পায়রা চত্বরের সামনে স্থানীয় চাষীদের নিয়ে ‘দেশীয় তামাক চাষী কল্যাণ সমিতি’র ব্যানারে একটি মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের অনুমোদিত বাজেট অনুযায়ী বর্তমান বাজারে বিদেশি কোম্পানির সিগারেটের ব্র্যান্ড মধ্যম ও উচ্চ স্তরে উন্নীত করে নিম্নস্তর শুধু মাত্র দেশীয় কোম্পানির সিগারেটের জন্য সংরক্ষিত রাখার দাবী জানানো হয়। এছাড়াও শতভাগ দেশীয় মালিকানাধীন তামাক শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষায় স্বতন্ত্র নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানান তারা।
মানব বন্ধনে বক্তারা বলেন, আমরা এদেশের অবহেলিত গরিব তামাক চাষী। আমাদের মাটি এবং আবহাওয়া তামাক চাষের উপযোগী। ন্যায্য মূল্যে বিক্রি না করতে পারায় আজ আমরা ঠিকমত তামাক চাষ করতে পারছি না।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দেশে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো আগে কেবল দামি সিগারেট প্রস্তুত করত। আর দেশীয় কোম্পানি তৈরি করত কম দামের সিগারেট। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোও কম দামের সিগারেট প্রস্তুত শুরু করেছে। এতে মার খাচ্ছে দেশীয় কোম্পানিগুলো। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে এরই মধ্যে অনেক দেশীয় কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে দেশের তামাক চাষিরা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। তারা উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য হতে বঞ্চিত হচ্ছে।
সমাবেশে তামাক চাষীরা অভিযোগ করেন, স্বতন্ত্র নীতিমালা না থাকার কারণে শতভাগ দেশীয় সিগারেট কোম্পানির অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। অথচ এ দেশের অনেক বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আদি ব্যবসা তামাক। বর্তমানে দেশের ৩০টি কোম্পানিতে কর্মরত এক লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তামাক চাষীসহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লাখ লাখ শ্রমিকদের রুটি-রুজি আজ হুমকির মুখে।
দেশীয় কোম্পানীগুলো ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারলে তামাকের ন্যায্য মূল্য পাবার আশাবাদ ব্যাক্ত করে বক্তারা বলেন, দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানীগুলো কখনো এদেশ ছেড়ে যাবে না এবং তারা ব্যবসা বানিজ্য করে মুনাফা হলে তা এদেশেই বিনিয়োগ করে নতুন-নতুন কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে যা দেশের বেকার সমস্যা দূর করতে ভূমিকা রাখবে। দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল তামাক থেকে সরকার প্রতি বছর ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে, তাই এই বাজার শুধুমাত্র দুটি বিদেশী কোম্পানীর হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত হবে না বলে মতামত ব্যক্ত করেন বক্তারা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তারা বলেন, আপনি আমাদের মা, আমাদের চাষাবাদ করার সুযোগ দিন। আমরা কাজ করে দু-মুঠো ডাল-ভাত খেতে চাই, আমরা উৎপাদন করতে চাই। আপনার কাছে বিনীত অনুরোধ, আপনি শতভাগ দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানীগুলোকে বাঁচানোর জন্য যে নীতিমালা দিয়েছেন তা দ্রুত বাস্তবায়ন করুন।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী রেখে তারা বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে আপনি এবং মাননীয় অর্থমন্ত্রী সংসদে বিল পাস করেছিলেন যে, শতভাগ দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানী গুলোর জন্য আলাদা নীতিমালা তৈরি হবে, যাতে তারা উৎপাদনে ফিরে আসতে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে ২০১৮ সালের বাজেটে শতভাগ দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানীর জন্য সংসদে যে নীতিমালা অনুমোদন হয়েছিল সেটি আজও বাস্তবায়ন হয়নি। উল্লেখ্য, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশীয় কোম্পানির জন্য নিম্ন স্তর সংরক্ষিত রেখে বহুজাতিক কোম্পানির আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডকে মধ্যম ও ঊচ্চমানে উন্নীত করার সুপারিশ করেন অর্থমন্ত্রী। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শতভাগ দেশীয় কোম্পানীগুলোর জন্য আলাদা নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে ৩০টি দেশীয় সিগারেট প্রস্তুতকারী কোম্পানী। বক্তারা দ্রুত এই নীতিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশীয় কোম্পানীগুলো টিকিয়ে রাখার দাবি জানান।