বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
পবিত্র কোরআন পরকালের সকল গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়েছে। ইহকালে কী করলে পরকালে কী হবে, যারা পরকালকে অস্বীকার করবে তাদের বক্তব্য কী হবে, আচরণ কেমন হবে, তাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে, শাস্তি কত কঠোর হবে সে সম্পর্কেও অগ্রিম মানুষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। পৃথিবীতে নবী-রাসূলগণ এসে মানুষকে দ্বীনের পথে দাওয়াত দিয়েছেন। অনেকে ঈমান এনেছে। অনেকে ঈমান আনে নাই। সৎপথে ফিরে আসে নাই।
যারা সত্য পরিষ্কারভাবে জানার পরও ঈমান আনে নাই, তাদের মধ্যে যেমন ধনীরা আছে, সম্পদশালী, প্রভাবশালী আছে তেমনি আছে দুর্বল ও অসহায় মানুষও। সবল, সামর্থবান মানুষেরা কেন ঈমান আনে না, তার কিছুটা কারণ পরিষ্কার হলেও দুর্বল, অসহায় মানুষগুলোও কেন সৎপথে আসলো না, সত্যকে গ্রহণ করল না সে বিষয়টি কোরআন পরিষ্কার করেছে।
কেয়ামতের দিন বিপথগামী সবল-দুর্বলের সংলাপটা কেমন হবে সে সম্পর্কে ২২তম পারা সুরা সাবার ৩১-৩৬ আয়াতে খুব চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। রাসূল (সা.)-কে সম্বোধন করে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘এরা দুনিয়াতে বাহাদুরি দেখিয়ে বলে, আমরা কোরআনে কখনোই বিশ্বাস করব না। অন্য কোনো কিতাবের ওপরেও না। এই ঈমান না আনা দলের মধ্যে সবল ও দুর্বলে ঝগড়া শুরু হয়ে যাবে। দুর্বলরা সবলদের লক্ষ্য করে বলবে, আমরা তো তোমাদের কারণেই ঈমান আনতে পারলাম না।’
‘তখন ক্ষমতাদর্পীরা যাদেরকে দুর্বল মনে করা হতো তাদেরকে বলবে, এই মিয়া! আমরা কি তোমাদেরকে কোনো প্রকার বাধা দিয়েছিলাম? বস্তুত: তোমরাই ছিলে অপরাধী।
তখন দুর্বলরা ক্ষমতাশালীদের বলে উঠবে, তোমরাইতো দিবারাত্রি নানামুখি চক্রান্ত করেছিলে, আর আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলে, আমরা যেন আল্লাহ ও তার রাসূলকে মান্য না করি, তাদের পথে না চলি, আর তোমাদের দেখানো দেবতার অনুসরণ করি। তখন বড়লোকদের গলদেশে শৃঙ্খল পরিয়ে দেয়া হবে, আর সেটা গরিব অনুসারীদের থেকে তারা লুকাতে চাইবে। কেয়ামতের দিন শুধু ততটুকুই শাস্তি দেয়া হবে যতটুকু অপরাধ তারা দুনিয়াতে করেছে।’
‘বস্তুত: আল্লাহ তায়ালা যখনই কোনো জনপদে নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন, তখনই সে জনপদের পয়সাওয়ালা, হোমরা-চুমরা মাতবররা বলে উঠতো, আমরা তোমাদেরকে প্রত্যাখ্যান করি।’
‘তারা বলে উঠতো, আমরাতো তোমাদের চেয়ে ধনে-জনে অনেক বেশি সম্ভ্রান্ত, সমৃদ্ধ। আমাদেরকে আযাব দেয়ার তো কোনো প্রশ্নই আসে না।’
‘হে নবী! আপনি তাদের বলে দিন, এসব ধন-দৌলত সবতো তাঁরই ইশারায় হয়। সুতরাং এসবের লোভ বা ভয় আমাদের দেখিয়ে লাভ নেই।’
‘এসব ধন-সম্পদ কোন্ োকাজেই আসবে না। এগুলো এমন কিছু নয় যে, এগুলো দেখিয়ে কেউ পার পেয়ে যাবে। মূলত: আল্লাহর প্রতি ঈমানই একমাত্র মুক্তির উপায়।’
এসব আয়াত আমাদের সামনে বর্তমান সমাজের বাস্তব চিত্রও তুলে ধরে। এই সমাজের অসংখ্য গরিব মানুষ, দুর্বলরাও বড়দের দেখাদেখি আলেমদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। নবীর ওয়ারিসদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করে। খুব আফসোস লাগে তাদের জন্য।
কিন্তু কেন করে? বড়দের না হয় সমাজে প্রতিপত্তি আছে, অর্থ-বিত্ত আছে, এগুলোর অধিকাংশই অবৈধপথে উপার্জন করা, গরিব-অসহায়দের শোষণ করে সমৃদ্ধ করা, সেগুলো হারানোর ভয়ে তারা অতীতে নবীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে, বর্তমানেও আলেমদের সাথে ঐ ক্ষমতা, বিত্ত হারানোর ভয়েই খারাপ আচরণ করে। কিন্তু সমাজের গরিবরা কী পাওয়ার আশায় সত্যকে গ্রহণ না করে, দ্বীনের সঠিক পথে ফিরে না এসে খারাপ লোকগুলোরই অনুসরণ করে? তাদেরতো দুনিয়াতেও কোনো লাভ নেই, আর পরকালের জন্যতো কিছুই করে নাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।