রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
মো. হায়দার আলী, গোদাগাড়ী (রাজশাহী) থেকে : মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বাঁশের প্রয়োজন। কেন না পূর্বে কোন শিশু জন্মগ্রহণ করলে কিংবা গাভীর বাচ্চা হলে নাড়ি কাটার জন্য ব্যবহার করা হত কচি বাঁশের ধারালো মাথা। মানুষ মৃত্যুবরণ করলে কবরে উপর মাচা করে কিংবা ফাটিয়ে বিছিয়ে দেয়া। এ ক্ষেত্রে বাঁশের বিকল্প নেই। কবির ভাষায় ‘বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই, মাগো আমার শোলক বলা কাজলা দিদি কই’ কবির লেখা এই কথাগুলো এখন কেবলই স্মৃতি। এখন দেশের দু’একটি এলাকা ছাড়া সর্বত্রই বিলুপ্তি হতে যাচ্ছে বাঁশ বাগান। স্থানীয়দের মতে, সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী বাঁশ বাগান এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। লোকজন বলছেন, রাাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় এক সময় বাঁশ বাগানে সমৃদ্ধ ছিল। কিন্তু যৌথ পরিবারগুলো দ্রুততম সময়ে একক পরিবারে পরিণত হওয়া ও মানুষের প্রয়োজনে ও কালের বিবর্তনে বাঁশ বাগান নির্মূল করে কিছু জায়গা আবাদি জমি ও বাড়িঘরে পরিণত করা হয়েছে। ফলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাঁশ বাগান থাকলেও পরিমাণ মতো না থাকায় সর্বত্র বাঁশের দাম বেড়েই চলেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েক বছরে যে সব বাঁশ বাগান নির্মূল করা হয়েছে সে অনুপাতে নতুন বাগান তৈরির কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে যে হারে বাঁশের চাহিদা বেড়েছে সে হারে উৎপাদন বাড়ছে না। স্থানীয়রা জানান, এক সময় এই উপজেলায় ৯০ শতাংশ ঘর বাঁশের খুঁটির উপর নির্ভশীল ছিল। এছাড়াও ঘরের বেড়া, চালা, অবকাঠামো নির্মাণ রান্নাঘর ও কৃষি ক্ষেতসহ পরিবারের অনেক কাজেই বাঁশের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাছাড়া শহরে পাকা ঘরবাড়ি ও দালান তৈরি করতে বাঁশের প্রয়োজন ছিল অনস্বীকার্য। তবে এটি ছিল ক্ষণস্থায়ী। এদিক থেকে গ্রামের কাঁচা ঘরবাড়ি ও ঘরের উপরে তীর ও খুঁটি নির্মাণ কাজে বাঁশের ব্যবহার ছিল অনস্বীকার্য। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্র উপজেলাসহ দেশের সর্বত্র পাকা ঘরবাড়ি নির্মাণ বেড়ে যাওয়ায় এখন বাঁশের ব্যবহার অনেকটায় কমে গেছে। বাঁশবিক্রেতা ক্রেতাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে গত ৬-৭ বছর আগেও প্রতিটি বাঁশের মূল্য ৯০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে ছিল। কিন্তু বর্তমানে এসব বাঁশের মূল্য ৩২০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। বাঁশের মূল্যবৃদ্ধির ফলে গ্রামের সাধারণ মানুষ ঘরবাড়ি তৈরি করতে যেমন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, তেমনি বেকার হচ্ছে বাঁশ শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগররা। এ পেশায় নিয়োজিত একজন শ্রমিক জানান, বর্তমানে যে মূল্য দিয়ে বাঁশ কিনতে হয় তাতে বাঁশ দিয়ে কোনোকিছু তৈরি করে লাভ হয় না। ফলে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত গ্রামাঞ্চলের অনেক কারিগর তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে। এদিকে সবকিছু জানার পরেও উপজেলা কৃষি বিভাগ কিংবা সংশ্লিষ্টরা গ্রামবাংলার মানুষের জন্য অতি প্রয়োজনীয় বাঁশ বাগানের উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে কোন প্রয়োজনীয় উদ্যোগ কিংবা পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। ফলে যতই দিন যাচ্ছে ততই এর আবাদ কমে আসছে। অনেকের মতে, যে হারে বাঁশের বাগান ধ্বংস করে মানুষ বাড়িঘর নির্মাণসহ ফসলী জমিতে পরিণত করছে তাতে এমন এক সময় আসবে যখন মানুষকে বর্তমান বাজারের চেয়েও অধিক মূলে বাঁশ কিনতে হবে। গোদাগাড়ী উপজেলার মাটি কাটা ব্লকের উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমার ব্লকে বেশ কিছু বাঁশঝাড় রয়েছে। কিন্তু যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবার ব্যাপকহারে গঠিত হওয়ায় বসতবাড়ির জন্য বাঁশঝাড় কেটে ফেলা হচ্ছে। অন্যান্য ফলের বাগানের মত বাঁশঝাড় সংরক্ষণের জন্য সরকারিভাবে সহযোগিতা দেয়া হলে মানুষের বাঁশের বাগান করতে আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।