রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা : কে কোন সময়ে বামনডাঙ্গা জমিদারির গোড়াপত্তন করেন তার কোন সঠিক বিবরণ এখন কেউ জানে না। তবে জমিদারগণের কোন জমিদার হতে কথিত আছে যে, পঞ্চদশ শতকের কোন এক সময়ে সম্রাট আকবরের আমলে পরাজিত ও রাজ্যচ্যুত গৌড় বংশীয় কোন এক ক্ষত্রীয় ব্রাহ্মণ পালিয়ে এসে বসবাস শুরু করেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গায়। পরবর্তীতে তিনি কৃষ্ণকান্ত নামে পরিচিত হন। কৃষ্ণকান্ত রায় বংশীয় বামনডাঙ্গা জমিদারির গোড়াপত্তন করেন। ব্রাহ্মণ পরিবারের কৃষ্ণকান্ত ছিলেন অতিশয় নম্র ও ভদ্র। সে কারণেই ঐ এলাকার নামকরণ করা হয় রামভদ্র। তার শাসনামলে প্রজাবর্গ সুখে শান্তিতে জীবন-যাপন করতেন। প্রজাগণের মনে সব সময় ছিল আনন্দ। এ কারণে ঐ ইউনিয়নের নামকরণ করা হয় সর্বানন্দ। জমিদার বাড়িটি সর্বানন্দ ইউনিয়নে হলেও ঘাঘট নদী পথে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রচলন থাকায় বামনডাঙ্গা রেল স্টেশন সংলগ্ন এ ব্যবসা কেন্দ্রের নাম ইতিহাসের পাতায় বামনডাঙ্গা বন্দর হিসেবে ঠাঁই পায়। তাই জমিদার বাড়িটি বামনডাঙ্গা জমিদার বাড়ি হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। কোম্পানির শাসনামলে ১৮৯৩ সালে গভর্নর লর্ড কর্নওয়ালিশ এ দেশে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আইন চালু করলে জমিদার বাড়ির বংশধরগণ চিরস্থায়ীভাবে জমিদারি কায়েম করেন। অতীত কালের নীরব স্বাক্ষী সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা জমিদার বাড়িটি এখন ধ্বংসপ্রাপ্ত। রাজবাড়িটির বাসগৃহ, অতিথিশালা, রাজদরবার, দুর্গামন্দির, মাঠ, ট্রেজারি, গো-শালা প্রভূতি সবই বিলুপ্ত। এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি জমিদার বাড়িটি গ্রাস করে নেয়ার চেষ্টায় চাষাবাদ শুরু করেছেন। মূল্যবান সম্পদ বেহাত হয়েছে অনেক আগেই। তবু এর কিছু কিছু স্মৃতি এখনো কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বামনডাঙ্গা রাজ পরিবারের অতীত বংশধরদের সঠিক নাম জানা না গেলেও নবম কিংবা দশম বংশধরের নাম ব্রজেশ্বর রায় চৌধুরী জমিদারের একমাত্র পুত্র ছিলেন নবীন চন্দ্র রায় চৌধুরী। পিতার মৃত্যুর পর নবীন চন্দ্র রায় চৌধুরী জমিদারি লাভ করেন। তার জমিদারি আলমে এই রাজবাড়ীর নাম ডাক চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তার রাজত্বকালে বার্ষিক রাজস্ব ছিল ১ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। ১৯০২ সালে নবীন চন্দ্রের ২ ছেলে শরৎ চন্দ্র রায় চৌধুরী ও বিপীন চন্দ্র রায় চৌধুরী বড় তরফ ও ছোট তরফ হিসেবে জমিদারী শুরু করেন। শরৎ চন্দ্র রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার একমাত্র কন্যা সুনীতি বালা দেবী পিতার জমিদারি লাভ করেন। বিপীন চন্দ্র রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার ২ ছেলে মনীন্দ্র চন্দ্র রায় চৌধুরী ও জগৎচন্দ্র রায় চৌধুরী শুধুমাত্র পিতার অংশে জমিদারি লাভ করেন এবং ২ ভাই পৃথকভাবে জমিদারী চালাতে থাকেন। জমিদারি লাভের পূর্বে সুনীতি বালা দেবীর বিয়ে হয় দিনাজপুর জেলার ভাতুরিয়ার প্রিয়নাথ পাকড়াশীর সঙ্গে। সুনীতি বালা দেবীর জমিদারি আমলে লাটের খাজনা পরিশোধে ব্যর্থ হলে এবং ১৯৪৬ সালে নিলাম ঘোষণা হলে পূর্ণিয়া জেলার মহারাজা কৃষাণ লাল সিংহ ক্রয় করার পর সুনীতি বালা দেবীর জমিদারি বিলুপ্তি ঘটে। প্রায় ৩৬ হাজার একর জমি এ জমিদারের অধীনে ছিল। অপরদিকে বিপীন চন্দ্রের ২ ছেলের মধ্যে মনীন্দ্র রায় চৌধুরী বড় এবং জগৎচন্দ্র রায় চৌধুরী ছিলেন ছোট। তাদের রাজত্বকালেও যথেষ্ট নামডাক ও সুনাম ছিল। জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর বড় ভাই জমিদার মনীন্দ্র চন্দ্র রায় চৌধুরী আসামে চলে যান। ছোট ভাই জমিদার জগৎচন্দ্র রায় চৌধুরী বামনডাঙ্গা রাজ বাড়িতে বসবাস করতে থাকেন। ১৯৬৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি বামনডাঙ্গা রাজবাড়িতেই মারা যান। এভাবেই বামনডাঙ্গা জমিদারের রাজত্বকাল চলতে থাকে এবং বিলুপ্তি ঘটে। বর্তমানে এ রাজবাড়ীতে জমিদার বংশের কেউই নেই। ১৯৯৬ সালের জানুয়ারি মাসে রংপুর ডেপুটি কালেক্টর সাহেব জমিদারের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেন। অস্থাবর অনেক সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করা হয়। কিংবদন্তি রয়েছে সুনীতি বালা দেবীর একটি কামধেনু (গাভী) ছিল। কলা পাতায় লবণ না খাওয়ালে দুধ দিত না ঐ কামধেনু। সুনীতি বালার বাসগৃহের ৩০ গজ দক্ষিণে ছিল একটি দুর্গা মন্দির এবং ১০০ গজ পূর্বে ছিল পিরামিডের মতো ৩টি মঠ যা রাজ বংশের পূর্ব পুরুষদের স্মৃতিসৌধ বলে পরিচিত। অনেকে আবার এ মঠ ৩টিকে রাজবাড়ীর হাওয়াখানা বলে থাকে। এ রাজবাড়ীতে ছিল বাবুর দীঘি ও নয়ার হাট নামে ২টি সরোবর। কথিত আছে- নয়ার হাট ছোট দীঘিতে সারারাত সোনার চালুন ভাসতো। আর বাবুর দীঘিতে বিশাল আকারে কালো পাথর ভাসতো। এটি যখন ভাসতো তখন দীঘির পানির রং একেবারেই নাকি কালো হয়ে যেতো। সোনার চালুন ও পাথরের ভয়ে এখনো এ দীঘি দুটিতে কেউ নামতে সাহস পায় না। জমিদার কন্যা সুনীতি বালা দেবী শ্বশুর বাড়ি থেকে যখন বাপের বাড়িতে আসতো তখন ১০০টি হাতি নিয়ে বামনডাঙ্গা জমিদার বাড়িতে প্রবেশ করতো। কথিত আছে, তার প্রবেশ পথে ধ্বংসপ্রাপ্ত আলইরপুর নামক সেতুর স্থানে পানিতে শালুক কাপড় বিছিয়ে তিনি খাল পার হতেন। এসব কিংবদন্তি এবং পুরোনো দিনের অনেক স্মৃতি এখনও স্বাক্ষী হয়ে আছে। কিন্তু এসব স্মৃতি চিহ্ন ও জমিদার আমলের নিদর্শনগুলো এখন ধ্বংস হওয়ায় জমিদার বাড়ির কোন স্মৃতি নেই। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের রামভদ্র গ্রামে এ জমিদার বাড়িটি এখন দেখলে মনে হবে এখানে জমিদার বাড়ি ছিলই না। অনেক বয়স্ক ব্যক্তিদের মতে জমিদার আমলের একটি আমগাছ ও একটি খেঁজুর গাছ এখানো রয়েছে। জমিদার বাড়ির জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে গুচ্ছ গ্রাম। রাজবাড়ি নামে একটি হাট হয়েছে। অসংখ্য লোক জমিদার বাড়ির জায়গা নামে, বেনামে ক্রয় করে তারা মালিক হয়েছেন। এখন শুধু নাম আছে জমিদার বাড়ি। কিন্তু বাস্তবে জমিদার বাড়ি নেই। হয়তো একদিন জমিদার আমলের এই আম গাছ ও খেজুর গাছ থাকবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।