Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মেঘনা উপকূলে কর্মহীন মৌসুম শুরু হলো!

রামগতি (লক্ষ্মীপুর) সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০২৩, ১১:১৩ এএম

গতকাল ১ মার্চ থেকে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার কমলনগর,লক্ষ্মীপুর হয়ে চাঁদপুরের ষাটনল এলাকা পর্যন্ত মেঘনা নদীর ১০০ কিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের মাছ শিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মা ইলিশ ও জাটকা সংরক্ষণের লক্ষ্যে মেঘনা নদীকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করে জাটকাসহ সব ধরনের মাছ শিকার, মজুদ ও বিপণন নিষিদ্ধ করেছে সরকার। বেকারত্বের এই দুই মাসে প্রতিটি জেলে পরিবারকে ৪০ কেজি হারে (ভিজিএফ চাল) খাদ্য সহায়তা দেওয়ার ঘোষণাও আছে সরকারের পক্ষ থেকে।

তবে, প্রকৃত জেলেদের বাদ দিয়ে ভিন্ন পেশার মানুষদের ভিজিএফ সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে জেলে সম্প্রদায়ের। এবারও এমন হলে অনাহারে-অর্ধাহারে কীভাবে কাটবে নিষেধাজ্ঞার দুই মাস, এই দুশ্চিন্তায় রয়েছে মেঘনা পাড়ের জেলে পরিবারগুলোতে। আবার সামনে আসছে পবিত্র মাহে রমজান। জেলেদের অভিযোগ, কর্মহীন মৌসুমের এই সময় এলেই পরিবার চালাতে গিয়ে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বিপদে পড়ে যান অনেক জেলে।

এদিকে মৎস্য আইন মেনে মেঘনার অভয়াশ্রমে মাছ শিকার থেকে বিরত থাকার বিষয়ে জেলেদের সচেতন করতে গত রোববার লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে টাস্কফোর্স কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ জানান, মৎস্য সংরক্ষণ আইন ১৯৫০-এর ১৩ ধারা অনুযায়ী মৎস্য অধিদফতর এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ২০০৬ সাল থেকে যা কার্যকর শুরু হয়। সরকারের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইন ভঙ্গ করে নদীতে জাটকা ইলিশ ধরার চেষ্টা করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রামগতি-কমলনগর উপজেলা মৎস্য বিভাগ, কোস্ট গার্ড, নৌ-পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সবার এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়। এ সময় জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ করার সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের উপস্থিতিতে বিতরণ করার জন্যও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ প্রদান করেন জেলা প্রশাসক।

জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার আংশিক, রামগতি,কমলনগর ও রায়পুর উপজেলা মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিতি। উপকূলীয় এসব এলাকার বেসরকারি হিসেবে প্রায় ৬৫ হাজার জেলে মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তবে সরকারি হিসেবে এর সংখ্যা ৪৬ হাজার ৪৯ জন। নিম্ন আয়ের জেলে সম্প্রদায়গুলো সবসময় মৎস্য আড়তদারদের কাছে ঋণের দায়ে জিম্মি হয়ে থাকে। নদীতে নিষিদ্ধ সময়ে কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় তাদের। পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম কষ্টে দিন পার করতে হয় উপকূলের হাজার হাজার জেলেকে।

জেলা মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ সময়ে মেঘনায় জাটকা ও ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকার নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এই সময়ের জন্য জেলার কার্ডধারী ২৮ হাজার ৩৪৪ জন জেলেকে ৪০ কেজি হারে ৪ মাস ১৬০ কেজি (ভিজিএফ চাল) খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে। এ জন্য ইতিমধ্যে ৪ হাজার ৫৩৫ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দও পাওয়ার কথা জানায় মৎস্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা। যা মোট জেলে পরিবারের তুলনায় অপর্যাপ্ত। নিষিদ্ধ সময়ে নদীতে মাছ ধরা থেকে বিরত রাখতে এরই মধ্যে জেলেদের নিয়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক সভা ও সেমিনার করা হয়েছে বলেও জানান তারা।

এদিকে নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ের মধ্যে সরকারের কাছে খাদ্য ও পুনর্বাসন সহায়তার দাবি জেলেদের। উপজেলার লুধুয়াঘাট এলাকার সফিক মাঝি ও মতিরহাট এলাকার লিটনসহ কয়েকজন জেলে বলেন, মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও জাটকা সংরক্ষণের লক্ষ্যে সরকার মার্চ-এপ্রিল দুই মাস মেঘনায় মাছ ধরা বন্ধ রাখার আইন করেছে। নিষেধাজ্ঞা সময়ের আগেই নৌকা ও মাছ ধরার জাল ডাঙায় তুলে নিয়েছেন তারা। এতে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে তাদের।

রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার ইউনিয়নের আসলপাড়া এলাকার জেলে খোকন মাঝিসহ অনেক জেলে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানালেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে পর্যান্ত খাদ্য সহযোগিতা পান না তারা। এতে করে পরিবার-পরিজন নিয়ে হিমশিম খেতে হয় তাদের। তাই বাধ্য হয়েই অনেক সময় ঝুঁকি নিয়ে নদীতে মাছ ধরতে যেতে হয় অনেককে। তারা আরও জানান, অনিয়মের কারণে কার্ড ও ভিজিএফের চাল বরাদ্দ না পাওয়ায় বিভিন্ন সময় মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। এতেও টনক নড়েনি স্থানীয় প্রশাসনের।

এ ব্যাপারে রামগতি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত এই দুই মাস মাছ ধরা থেকে জেলেদের বিরত রাখতে নদীতে কোস্ট গার্ড, মৎস্য বিভাগ ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ অভিযান চালানো হবে। এই আইন অমান্যকারীদের জেল-জরিমানাসহ আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ