Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দক্ষিণাঞ্চলে সর্বকালের সর্বোচ্চ সাড়ে ৬শ কোটি টাকা আয়কর আদায়

করোনা মহামারীতেও আয়কর আদায়ে প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক-এনবিআর

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০২৩, ৯:১১ এএম

করোনা মহামারী সংকট থেকে অর্থনীতি সম্পূর্ণ মূক্ত না হলেও গত অর্থ বছরে দক্ষিণাঞ্চলে সর্বকালের সর্বোচ্চ, প্রায় ৬৪৫ কোটি টাকা আয়কর আদায় হয়েছে। যা পূর্ববর্তি অর্থ বছরের চেয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকা বেশী ছিল। গত ৩১ জানুয়রী ছিল বিগত অর্থ বছরের কর রিটার্ণ দাখিলের শেষদিন। চলতি অর্থ বছরে দক্ষিনাঞ্চলের ৬ জেলা থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাড়ে ৭শ কোটি টাকা আয়কর আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বরিশাল কর অঞ্চল। এ লক্ষ্যে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকা রাজস্ব আহরন সম্ভব হয়েছে বলেও জানা গেছে। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৬% বেশী বলে জানিয়ে চলতি অর্থ বছরের রাজস্ব আহরন লক্ষ্যে পৌছানোর বিষয়ে আশাবাদের কথা জানিয়েছেন বরিশাল কর অঞ্চলের কমিশনার।

২০০১-০২ অর্থ বছরে মাত্র ২৩ কোটি টাকা আয়কর আদায়ের মধ্যে দিয়ে বরিশাল কর অঞ্চলের যাত্রা শুরু হলেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিবিড় নজরদারী সহ করদাতাদের ইতিবাচক মনোভাবে বিগত কুড়ি বছরে তা প্রায় সাড়ে ৬শ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি করদাতার সংখ্যাও মাত্র ২০ হাজার থেকে চলতি অর্থ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৯০ হাজারে উন্নীত হয়েছে বলে জানা গেছে। যা এর আগের অর্থ বছরে ছিল ৭৮ হাজারের কিছু বেশী। চলতি অর্থ বছরে দক্ষিণাঞ্চলে করদাতার সংখ্যা লাখের অংকে পৌছবে বলে আশাবাদী কতৃপক্ষ। পাশাপাশি বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে টিআইএন’ধারীর সংখ্যাও প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজারে উন্নীত হয়েছে।

কৃষি নির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রধান জীবিকার পাশাপশি কৃষিÑঅর্থনীতিই এখনো মূল চালিকা শক্তি। তবে গত দুই দশকে অন্যান্য ব্যবসা ক্রমে সম্প্রসারিত হলেও করোনা সংকটের বিগত ৩টি অর্থ বছরে সারা দেশের মত এ অঞ্চলেও অর্থনীতিতে যথেষ্ঠ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কিন্তু এর পরেও কর দাতাদের ইতিবাচক মনোভাবের ফলে বরিশাল কর অঞ্চলে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশালের কর কমিশনার।
তবে এখনো দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ মাঝারী এবং বৃহত শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সহ বড় মাপের ব্যসায়ীগন আয়কর রিটার্ন ঢাকাতে জমা দিচ্ছেন। ফলে বরিশাল কর অঞ্চলের রাজস্ব আহরন প্রবৃদ্ধি অর্জন অনেকটাই ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

তবে আয়করের প্রতি ভীতি দুর করা সহ কর প্রদানে নৈতিক দায়িত্বের বিষয়টি মানুষের মধ্যে ক্রমে প্রতিষ্ঠিত হবার ফলে দক্ষিণাঞ্চলে আয়কর আহরন ক্রমে বাড়ছে বলে মনে করছেন কর বিভাগের দায়িত্বশীল মহল। একই সাথে করদাতাদের সাথে আরো সৌজন্যমূলক আচরন সহ কর প্রশাসনকে ‘পরিপূর্ণ হয়রানী বিহীন জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে গড়ে তোলারও তাগিদ দিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক করদাতা। পাশাপাশি যেকোন অসত উদ্যেশ্যে করদাতাদের ওপর নুন্যতম বাড়তি চাপ প্রয়োগ সহ হয়রানির বিষয়টি পরিহারের আহবান জানান হয়েছে সাধারন করদাতাদের তরফ থেকে। এক্ষেত্রে করদাতাদের প্রতি ন্যায়বিচার সহ তাদের সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টির প্রতিও গুরুত্ব প্রদানের আহবান জানিয়েছেন করদাতাগন।
এদিকে দক্ষিণাঞ্চল যুড়েই কর প্রশাসনে জনবল সংকট সহ নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে দিয়েই চলছে। বরিশাল কর অঞ্চলের ২২টি সার্কেলে মঞ্জুরীকৃত প্রায় ২৬৫ জনবলের মধ্যে প্রায় ১৪০টি গুরুত্বপূর্ণ পদই শূণ্য। ২২টি সার্কেলের উপ-কমিশনারের পদে আছেন ৮জন। ফলে একজন উপ-কমিশনারকে একাধীক সার্কেলের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানামুখি সংকট তৈরী হচ্ছে। কর দাতাগনই অনেক সময়ই কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দীর্ঘ দিন ধরেই উপ-কর কমিশনার থেকে যুগ্ম কর কমিশনার পর্যন্ত সব পদেই জনবল সংকট চলছে দক্ষিণাঞ্চরেল কর প্রশাসনে। এমনকি ৩জন যুগ্ম কর কমিশনার পদের বিপরিতে আছেন মাত্র ১জন। ২৯ পরিদর্শকেরও ৮টি পদে কোন জনবল নেই।

এমনকি বরিশালে কর কমিশনারেট-এর জন্য একটি বহুতল ভবন নির্মানের বিষয়টি গত প্রায় দেড় যুগ ধরে নানা টেবিলে ঘুরপাক খেয়ে সর্বশেষ ‘সরকারী ব্যায় কৃচ্ছতা সাধনের অংশ হিসেবে’ প্রকল্পটির চুড়ান্ত অনুমোদন স্থগিত করা হয়েছে। প্রায় ৮০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যায়ের ঐ ভবন নির্মান প্রকল্পটি কবে আলোর মুখ দেখবে তা এখন কতৃপক্ষের কাছে অজ্ঞাত। ফলে বরিশাল মহানগরীর নিজস্ব ও ভাড়া বাড়ীতে ছড়িয়ে ছিটেয়ে থাকা কর কমিশনার সহ বিভিন্ন সার্কেলের দপ্তরগুলোতে অনেক সময়ই কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যহত হচ্ছে। এতেকরে কারদাতাগনও অনেক সময়ই ভোগান্তির সম্মুখিন হচ্ছেন।

সার্বিক বিষয়ে বরিশাল কর অঞ্চলের কমিশনারের সাথে আলাপ করা হলে তিনি দক্ষিণাঞ্চলে কর আহরন প্রবৃদ্ধি নিয়ে অঅশাবাদ ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে কর প্রদানে ইতিবাচক সাড়া লক্ষ্যণীয় বলেও জানান। কর দাতাদের ওপর কোন অনৈতিক চাপ প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে সব কর্মকর্তাকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে বলে জানিয়ে যেকোন অনিয়মের ক্ষেত্রে সব সময়ই ‘জিরো টলারেন্স’ নিয়ে কাজ করার কথাও জানান কর কমিশনার। জনবল সংকটের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে, ‘বিষয়টি এনবিআর সহ অর্থ মন্ত্রনালয় অবহিত আছে’ বলে জানিয়ে, ‘অদুর ভবিষ্যতে এ সমস্যা সমাধানে সরকার নিশ্চই ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহন করবে বলেও আশাবাদ বক্ত তরেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ