Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তেল-বিদ্যুৎ ছাড়াই অবিরাম পানি

গারো পাহাড়ে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে

এস. কে. সাত্তার, ঝিনাইগাতী (শেরপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০২৩, ১২:০০ এএম

শেরপুর গারো পাহাড়ে ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ীতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পানিরস্তর অস্বাবিকভাবে নিচে নেমে গেলেও তেল বিদ্যুৎ ছাড়াই অটোকলে বেরুচ্ছে অনবরত পানি। ফলে ‘জাদুর কল’ বা ‘অটোকলের’ কল্যাণে শ্রীবরদীর ৪ গ্রামে পানি মিলছে। এ ব্যবস্থা গোটা গারো পাহাড়ি অঞ্চলেই সম্প্রসারণ সম্ভব বলে অভিজ্ঞমহল মনে করছেন। ওই ৪ গ্রামে পানি পান, গৃহস্থালি কাজে এবং ফসল ফলাতে ব্যবহার করছেন কৃষকরা। খরচ ছাড়া সেচের পানি পাচ্ছেন চাষিরা। এতে সেচ খরচ বেঁচে গেছে কৃষকদের। এই পানির সুষ্ঠু ব্যবহারে পাশের অনাবাদি হাজারো একর জমিতে ফসল ফলানো সম্ভব বলে জানান উপজাতি নেতা ও বিশেষজ্ঞরা। ভারতের মেঘালয় ঘেঁষা রাঙ্গাজান, বালিজুরি, খ্রিস্টানপাড়া ও অফিসপাড়া গ্রামের ৫-৬ হাজার মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পাহাড়ি সোমেশ্বরী নদী। নদীতে ইতোপূর্বে চৈত্র মাসেও পানি থাকতো। তখন ওই পানিতেই কৃষক বোরো-আমন এবং সবজি আবাদ করতো। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সোমেশ্বরীর পানি শুকিয়ে যায়। পড়ে রাঙ্গাজান গ্রামে টিউবওয়েল স্থাপনের সময় ৬০-৮০ ফুট বোরিং করেই পানির দেখা পান। নলকূপ স্থাপনে করা গর্ত থেকে অনবরত পানি উঠতে শুরু করে। তখন বিষয়টিকে আল্লাহর দান ভেবে টিউবওয়েল স্থাপন না করেই উঠতে থাকা পানি পান এবং গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করেন। অফিসপাড়া, খ্রিস্টানপাড়া ও বালিজুরি গ্রামেও পানি উত্তোলন ও ব্যবহার শুরু হয়। অটোকলে বছরজুড়ে পানির প্রবাহ থাকায় গ্রামবাসী ওই পানিতে জমিতে ধান চাষ ও সবজি চাষ করেন। ১০ বছর ৪ গ্রামের কয়েকশ’ মানুষ অটোকলের সুবিধা ভোগ করছেন। বর্তমানে ৬০ ভাগ বাড়ি ও ফসলের মাঠে অটোকলের দেখা মেলে। প্রতি অটোকল বসাতে গভীরতা ভেদে শুধু মিস্ত্রি খরচ দুই-তিন হাজার টাকা বলে জানান স্থানীয়রা। পাইপে বোরিংয়ের পর পাইপ তুলে বাঁশ ও প্লাস্টিকের পাইপেই অনবরত পানি উঠতে থাকে। গ্রামবাসী জানান, ওই ৪ গ্রামে প্রায় এক হাজার একর জমিতে বোরো আবাদ করা হচ্ছে। এতে সার ও কীটনাশক ছাড়া কোনও খরচ হচ্ছে না। হারিয়াকোনা গ্রামের আদিবাসী নেতা প্রাঞ্জল এম সাংমা বলেন, আগে গারো পাহাড়ে অনেক ঝর্ণা ছিল। ঝর্ণা দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে সোমেশ্বরী নদী ভরে যেতো। এখন সে ঝর্ণাও নেই, নদীতেও পানি নেই। চৈত্রর আগেই নদীর পানি শুকিয়ে যায়। ফলে ফসল ফলাতে পারিনি। তবে অটোকলে ফসল ফলাতে পারছি। সরকারিভাবে এ পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করলে কৃষকরা বিপুল পরিমাণ জমিতে বোরো আবাদ করতে পারবে। স্থানীয়রা বলেন, অটোকলের পানির মাধ্যমে গোটা গারো পহাড়ে বোরো ও সবজি চাষ সম্ভব। যেখানে অটোকল নেই, সেখানে ক্যানেল বা খাল খননে পানি জমিয়ে দেশীয় পদ্ধতিতে সেচে কয়েক হাজার একর জমিতে বোরোসহ বিভিন্ন ফসল ফলানো সম্ভব। একটি এনজিও খ্রিস্টান পাড়ায় অটোকলের পানি জমিয়ে রাখতে চৌবাচ্চা বা ট্যাংক তৈরি করে দিয়েছে। সরকার প্রকল্প গ্রহণে অপচয়রোধ করে পানি সরবরাহ করে তবে বিপুল পরিমাণ জমিতে অল্প খরচে ফসল ফলানো সম্ভব। তাতে গারো পাহাড়ী অঞ্চলের মানুষ কম খরচে,কম পরিশ্রমে অধিক ফসল ফলাতে পারবেন। জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গছে, শ্রীবরদী উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার হেক্টর ফসলের জমি রয়েছে। এসব জমিতে উফশী, বোরো, আমনসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ করা হয়। জেলা জনস্বাস্থ বিভাগের শ্রীবরদী উপজেলার প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, আসলে এই ধরনের পানির লেয়ার পাহাড়ের পাদদেশে অনেক সময় বের হয়, সেটা আসলে সপ্রিং লেয়ার। এটাকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে সংরক্ষণ করে ওই জনপদে সরবরাহের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ