Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

৭ বছরে শত শত পরিবার নিঃস্ব

হরিরামপুরে পদ্মার তীব্র ভাঙন ভাঙনরোধে ৭ বছরে ১১৮ কোটি ব্যয় ৩২৫ কোটি টাকার কাজ প্রক্রিয়াধীন

জ. ই. আকাশ, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলার মধ্যে পদ্মা অধ্যুষিত অন্যতম হরিরামপুর। প্রায় পঞ্চাশ দশক থেকে অনবদ্য নদী ভাঙনের ফলে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্য ৯টি ইউনিয়নই ভাঙন কবলিত হয়ে শত শত পরিবার জমিজমা ভিটেবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে ফসলি জমি, গাছপালা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন স্থাপনামহ বিস্তৃীর্ণ জনপদ।
সরেজমিনে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় পঞ্চাশ দশক থেকে সর্বপ্রথম নদী ভাঙন শুরু হলে উপজেলার আজিমনগর, সুতালড়ী ও লেছড়াগঞ্জ তিনটি ইউনিয়নই নদীতে বিলীন হয়ে যায়। নদী ভাঙনের কবলে শত শত পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে আশপাশের এলাকায় বসবাস শুরু করেন। ভাঙনের ফলে এ উপজেলার ভৌগলিক অবস্থানও অনেকটাই কমে গেছে। সত্তর দশকের শেষের দিকে ফরিদপুর জেলার সীমান্তবর্তী নদীর মাঝে তিনটি ইউনিয়নেরই সুবিশাল চর জেগে উঠলে ধীরে ধীরে লোকজন বসত বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস শুরু করে। বর্তমানে উপজেলা সদরের আন্ধারমানিকঘাট থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে ১৩ কি. মি. দৈর্ঘ্য এলাকা নিয়ে চরাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়নে প্রায় পঞ্চাশ হাজারের অধিক জনগণের বসবাস। এই চরাঞ্চলে একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এমপিওভূক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, আশ্রয়কেন্দ্র, হাট-বাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে উঠে। গত তিন বছর ধরে চরাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়নে নতুন করে ভাঙন দেখা দিলে ফসলি জমি, বসতভিটাসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেলে চরাঞ্চলের মানুষে মাঝে আবারও নতুন করে ভাঙন আতংক সৃষ্টি হয়।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় নদী ভাঙনরোধে ২০১৬ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় ১১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নদী তীরবর্তী এলাকা প্রতিরক্ষায় জিওব্যাগ ফেলা হয়। এছাড়া আরও ৩২৫ কোটি টাকার কাজ প্রক্রিয়াধীন। এরমধ্যে ২০১৫/১৬ ও ২০১৬/১৭ অর্থবছরে হারুকান্দি থেকে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পর্যন্ত ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮.৮ কিলোমিটার, ২০২০/২১ ও ২০২১/২২ অর্থ বছরে কাঞ্চনপুর হতে গোপীনাথপুর পর্যন্ত ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ কিলোমিটার, ২০২১/২২ অর্থবছরে ধূলশুড়া ইউনিয়নে ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১.২ কিলোমিটার নদী তীরবর্তী এলাকা প্রতিরক্ষায় জিওব্যাগের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এছাড়াও চলতি ২০২২/২৩ অর্থবছরে রামকৃষ্ণপুর হতে গোপীনাথপুর উজানপাড়া পর্যন্ত ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন হবে। আরও জানা যায়, ২০২৩/২৪ অর্থবছরে হারুকান্দি এলাকায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩.৫০কিলোমিটার ও ধূলশুড়া হতে হারুকান্দি পর্যন্ত ঢাকা ডিভিশনের সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩.৫০ কিলোমিটার এবং কাঞ্চনপুর ইউনিয়নে সিসি ব্লক দিয়ে প্রতিরক্ষার জন্য আরও ২০০ কোটি টাকার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
লেছড়াগঞ্জ ও আজিমনগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোয়াজ্জেম ও বিল্লাল হোসেন জানান, ‘বর্তমান চরাঞ্চলে প্রায় ৫০ হাজারের অধিক মানুষের বসবাস। এখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে কৃষি পণ্য উৎপাদিত হয়। যা কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু দুই বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে নতুন করে আবার চরাঞ্চলে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এই চরাঞ্চল রক্ষায় ভাঙনরোধে যদি সরকার নজর না দেয়, তাহলে এ চরাঞ্চলও আবার বিলীন হয়ে যেতে পারে।’
কাঞ্চনপুর ইউপি চেয়ারম্যান গাজী বনি ইসলাম রূপক জানান, আমার ইউনিয়নে ১৩টি মৌজার মধ্যে ১২টিই নদী গর্ভে। গত দুই বছরে জিওব্যাগ ফেলার কারণে বাকি মৌজার ভাঙন কিছুটা হলেও রোধ হয়েছে। তবে স্থায়ী বেড়িবাঁধ হলে ভাঙন পুরোপুরিই রোধ করা সম্ভব হতো।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন জানান, হরিরামপুরে ভাঙনরোধে ২০১৬ সাল থেকে পর্যায়কক্রমে কাজ চলছে। এ পর্যন্ত ১১৮ কোটি টাকায় ১০.৪০০ কি.মি. কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও ৪ কি.মি. কাজ সমাপ্ত হবে। এছাড়াও ৩০০ কোটি টাকায় ১০ কি.মি. কাজ ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে সমাপ্তির জন্য প্রক্রিয়াধীন। আশা করছি, ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে হরিরামপুরে শতভাগ ভাঙনরোধে প্রতিরক্ষার কাজ সম্পন্ন হবে। তবে চরাঞ্চল ভাঙনরোধে আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ