Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঘরে-ঘরে মক্তব তৈরি করে নাস্তিক্যবাদ প্রতিহত করুন : নেছারাবাদী হুজুর

ঝালকাঠি জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৫:২৬ পিএম

আমীরুল মুছলিহীন হযরত মাওলানা মুহম্মদ খলীলুর রহমান নেছারাবাদী হুজুর বলেছেন, ‘বালা-মুসীবত, দুর্যোগ-বিপর্যয়Ñসে মানবরচিত হোক কিংবা প্রকৃতিগত হোক তা প্রধানত দুটি কারণে সংঘটিত হয়। প্রথম কারণটি হচ্ছে মুমিনদের ঈমান পরীক্ষা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে পাপের সর্বময়তা। আমরা এখন বিপদ আপদ, বালা মুসীবতে আকীর্ণ এক কঠিন সময় অতিক্রম করছি। সময়টা ঈমানদারের জন্য আরো কঠিন এ কারণে যে, বিজ্ঞানের চরমোৎকর্ষে হাতের মুঠোয় বিশ^ চলে আশায় নফ্সে আম্মারা ও আকাশ সংস্কৃতির শয়তানী ধোঁকায় হাদীসের ভাষ্য মোতাবেক ঈমান রক্ষা এখন হাতের তালুতে জ¦লন্ত অঙ্গার রাখার মতোই কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা তুরস্ক ও সিরিয়ার ভয়াবহ ভূমিকম্পে শাহাদতবরণকারী মানুষের রূহের মাগফেরাত কামনা করছি এবং এই মাহফিলের মাধ্যমে দেশবাসীকে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী দুর্গত অসহায় মানুষদের সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছি।’
প্রখ্যাত দার্শনিক ও সমাজসংস্কারক, উপমহাদেশের খ্যাতিমান আধ্যাত্মিক পুরুষ হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ. প্রতিষ্ঠিত ঝালকাঠি নেছারাবাদের দুই দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী বার্ষিক ঈছালে ছওয়াব ওয়াজ-মাহফিলের দ্বিতীয় দিনে বৃহস্পতিবার নেছারাবাদের গদ্দিনশীন পীর, হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুরের সুযোগ্য ছাহেবজাদা আমীরুল মুছলিহীন হযরত মাওলানা মুহম্মদ খলীলুর রহমান নেছারাবাদী হুজুর তাঁর ভাষণে একথা বলেন। বাদ-ফজর শুরু হওয়া দ্বিতীয় দিনের এ মাহফিলে পাঁচশতাধিক মুয়াল্লেম আগত মুসল্লীদের অযূ গোসল, সূরা কেরাত, নামায যেকের, তসবী তাহলীলের বাস্তব প্রশিক্ষণ প্রদান করেন এবং আমলী জিন্দেগী গঠনের জন্য অন্যান্যের মধ্যে ওয়াজ নসীহত পেশ করেন ঝালকাঠি এন.এস কামিল মাদরাসার দেশবরেণ্য মুহাদ্দেস মুফাস্সেরগণসহ দেশের বিভিনাঞ্চল থেকে আগত হক্কানী ওলামায়ে কেরাম ও পীর ছাহেবান। দুপুরে বাংলাদেশ সরকারের শিল্পমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ¦ আমির হোসেন আমু এমপি মহোদয়ের উপস্থিতি এবং তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্য-শেষে ‘দস্তার বন্দি’ অনুষ্ঠানে হাফেজ ছাত্রদের মাথায় পাগড়ি পরিয়ে দেন হযরত নেছারাবাদী হুজুর। নেছারাবাদী হুজুর বলেন ‘আমাদের ঈমান ও একীন এই যে, আমরা ছিলাম আল্লাহর, আছি আল্লাহর, যাবো আল্লাহর কাছে। প্রথমে রূহের জগত থেকে যাত্রা শুরু করে বেহেশ্তে উপযুক্ততা অর্জনের পর বিভিন্ন ঘাঁটি সফর করে পিতার পৃষ্ঠদেশ হয়ে মায়ের রেহেমের ঘাঁটি পার হয়ে এখন পার্থিবজীবন অতিক্রম করছি; এরপর রয়েছে কবরের জগত, হাশরের জগত অতিক্রম শেষে অন্তহীন নশরী-জীবন। সুতরাং দুনিয়া আমাদের এই যাত্রাপথের সামান্য এক স্টেশনÑযার একশ বছর হাশরের একদিনের তুলনায় দেড়সেকেন্ড মাত্র, যারা এই বিশ^াস ও চেতনার পরিপন্থী, দুনিয়াকেই যারা জীবনের সব চাওয়া-পাওয়ার কেন্দ্রবিন্দু মনে করে ক্ষমতা ও নারী-বাড়ি গাড়ির মদমত্ততায় ‘খাও দাওফুর্তিকরো’র মচ্ছবে লিপ্ত হয় তারাই খোদাদ্রোহী, তারাই নাস্তিকÑযালেম। এই নাস্তিকেরা নবী-রসূলদের স্বীকার তো দূর, তাদের হত্যা করতেও দ্বিধা করেনি। স্বয়ং বিশ^নবী মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ স. যাকে তারা ‘পরম বিশ^াসী’ বলে একবাক্যে স্বীকার করতো তাকেও নির্যাতন এমনকি হত্যার সর্বতঃ আয়োজন করতে পিছ পা হয়নি। আধুনিককালে এসে এই নাস্তিক্যবাদীরা বহু দেশ দখল করে হত্যা নির্যাতন চালিয়ে যেমন মুসলমানদের অস্তিত্ব বিনাশ করেছে, তেমনি প্রত্যেকটি সমাজে চাকচিক্যময় অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে মুসলমানদের ঈমানআকীদা নস্যাত পূর্বক কুরআন সুন্নাহ, আলেম-ওলামা বিরোধী একদল শিক্ষিত আবুজাহেল তৈরির অপচেষ্টা করছে! আল্লাহ তায়ালা এই নাস্তিক্যবাদীদের কারণেই দুনিয়ার বহু সমৃদ্ধ জাতি ও সভ্যতাকে বিলীন করে দিয়েছেন। মুসলমানদের ঈমান পরীক্ষার জন্য আল্লাহ তায়ালা বালা-মুসীবত দেন ঠিকই, কিšদ নাস্তিক্যবাদিতার দ্বারা পরিব্যাপ্ত ক্ষমতার মদমত্ততা, দুর্নীতি-দুষ্কৃতি ও ব্যাভিচার-বেলেল্লাপনার কারণেই ব্যাপক ও আমভাবে দুর্যোগ-বিপর্যয়ের নামে আল্লাহ তায়ালার গযব আপতিত হয়।’ নেছারাবাদী পীর ছাহেব বলেন, ‘বাংলাদেশেও ব্যাপকভাবে আল্লাহ তায়ালার গযব নামানোর শেষ প্রক্রিয়া হিসেবে পাঠ্যপুস্তকে নাস্তিক্যবাদিতা ঢুকিয়ে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী, ব্যাভিচার-বেলেল্লাপনায় আসক্ত মুসলমান নামধারী একদল শিক্ষিত দুনিয়ার কুকুর বানানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে। আমরা নাস্তিক্যবাদীদের এই ভয়াবহ ষড়যন্ত্রথেকে দেশ রক্ষায়, ঈমান রক্ষায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সৃষ্টিকর্তায় বিশ^াসী সকল ধর্মপ্রাণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই। মানবজীবনের প্রধান কাজ তিনটি; মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জীবন রক্ষা করা, কেয়ামত পর্যন্ত বংশ রক্ষা করা এবং আহকামে তকলীফিয়া অর্থাৎ সেচ্ছাপালনী শরয়ী-বিধানসমূহ পালন করা। আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি, এই কর্তব্যসমূহ যথাযথভাবে পালনের নিমিত্ত ঘরে-ঘরে মক্তব তৈরি করে নাস্তিক্যবাদ প্রতিহত করুন। মনে রাখবেন, আওলিয়ায়ে কেরামের অনুসৃত পথে দৃঢ় এখলাস ও যেকের-ফেকেরের সঙ্গে অগ্রগামী হলে তা কেউ রুখতে পারে না। আল্লাহ আমাদের তৌফীক দান করুন। আমীন!’ আগামীকাল (২৪ শে ফেব্রুয়ারী) বাদ-ফজর হযরত নেছারাবাদী হুজুরের সমাপনী ভাষণ ও আখেরী মুনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে এবারের মাহফিল।



 

Show all comments
  • hassan ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৫:৪১ পিএম says : 0
    দেশে যতদিন কোরআন দিয়ে শাসন করা হবে না ততদিন বাড়িতে মক্তব করেও কোনো কাজ হবে না কারণ বাড়ির থেকে বের হলেই তো যত ধরণের অসভ্যতা অশ্লীলতা সারা জায়গায় ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশে অতএব ছেলেপিলে অসভ্য হয়ে বড় হবে আল্লাহ কে চিনবে না
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ