Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নিয়ন্ত্রনহীন মশার আক্রমণে বিপর্যস্ত বরিশাল মহানগরীর সুস্থ জনজীবন

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১:১৬ পিএম

শীত থেকে বসন্ত আর গরমের আবহাওয়ায় বরিশাল মহানগরী এখন অনেকটাই মশার দখলে। অতিষ্ঠ নগরবাসী অনেকটাই অসহায় বোধ করছেন মশককুলের যন্ত্রনায়। যদিও নগর ভবন থেকে ‘বর্ধিত এলাকায় পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ’ বলে স্বীকার করে ‘নগরীর মূল এলাকায় মশা এখন নিয়ন্ত্রনে’ বলে দাবী করা হয়েছে।

তবে বাস্তবতা কিছুটা ভিন্ন। নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডেই দিনরাত মশার আক্রমনে সাধারন মানুষ অনেকটাই অস্বস্তিতে। সন্ধার আগে থেকে পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হতে শুরু করছে। এমনকি বিগত বর্ষা মৌসুমের শেষভাগ থেকে দক্ষিণাঞ্চলে ডেঙ্গুর বিস্তৃতি যথেষ্ঠ দুঃশ্চিন্তা বৃদ্ধি করে। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হলেও মৃত্যু হয়েছিল ১৫ জনের। যার সিংহভাগই ছিল বরিশাল মহানগরীতে। এমনকি মৃতদের সবই ছিল বরিশালের শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তবে এসব মৃতদের সবই বরিশাল মহানগরীর না হলেই এনগরীতেও ডেঙ্গু বেশ জাকিয়ে বসেছিল।
তবে প্রায় ৬০ বর্গ কিলোমিটারের বরিশাল মহানগরীতে মশা সাধারন মানুষকে যথেষ্ঠ কষ্ট দিতে শুরু করেছে তা নিয়ে সবাই একমত হলেও নগর ভবনের দাবী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে তাদের অব্যাহত প্রচেষ্টার কোন ঘাটতি নেই। ওয়াকিবাহাল মহলের মতে, নগর ভবনের এ দাবীর সাথে বস্তবতার ঘাটতিও ব্যাপক। এ মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের ৬০ বর্গ কিলোমিটার এলাকার মশক নিধনে নগর ভবনের হাতে রয়েছে মাত্র ১২টি ফগার মেশিনের সাথে কিছু হ্যান্ড স্প্রেয়ার। বাস্তবে যার মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রন যে সম্ভব নয়, তা নগর ভবনের দায়িত্বশীল মহল বুঝলেও স্বীকার করেন না।

বিশাল এ মহানগরীর প্রায় দেড়শ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা ড্রেন ও ৩শ কিলোমিটারের মত রাস্তাঘাট পরিচ্ছন্ন রাখা থেকে শুরু করে মশক নিধনে নগর ভবনে দৈনিক মজুরী ভিত্তিক প্রায় ৯শ পরিচ্ছন্ন কর্মী ও শ্রমিক থাকলেও তাদের অনেকের বাস্তব কর্মকান্ড নিয়েও যথেষ্ঠ প্রশ্ন রয়েছে নগবাসীর মনে। বিশেষকরে যেসব পরিচ্ছন্ন কর্মী নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর কার্যলয়ে সংযুক্ত, তাদের অনেকেই দায়িত্ব পালনে আন্তরিক নয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এরফলে ঘন্টায় ৫ মিলিমিটরের বেশী বৃষ্টি হলেই বেশীরভাগ রাস্তা সহ নগরীর বিশাল এলাকাই পানির তলায় চলে যাচ্ছে। এনগরীর ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিস্কার না হবার পাশাপাশি কতিপয় নগরবাসী পলিথিন থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপচনশীল দ্রব্য ড্রেনে ফেলায় সামান্য বৃষ্টিতেই পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা রুদ্ধ হচ্ছে। ফলে জলাবদ্ধতা এ নগরীর নিত্যসংগী হয়ে উঠেছে। আর অপরিচ্ছন্ন ড্রেনের পাশাপাশি আবর্জনাসমুহ নগরীর মশার বংশ বিস্তৃতি ঘটাচ্ছে।
তবে ওয়াকিবাহল মহলের মতে, নগর ভবনের কনজার্ভেন্সি বিভাগের প্রায় ৯শ পরিচ্ছিন্নতা কর্মীর আন্তরিকতার পাশাপাশি তাদের কাজের সুষ্ঠু তদারকি নিশ্চিত করতে পারলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে বাধ্য। পাশাপাশি নগর ভবন মাত্র ১২টি ফগার মেশিন দিয়ে মশক নিধনের যে ব্যার্থ চেষ্টা করছে, তার উন্নয়নেরও কোন বিকল্প নেই। মহলটির মতে, নগরির ৩০টি ওয়ার্ডে ৬০টি ফেগার মেশিন প্রয়োজন হলেও নুন্যতম ৫০টির কোন বিকল্প নেই। নগর ভবনের পরিচ্ছন্ন বিভাগ থেকে তৃনমূল পর্যায়ে নিয়মিত নিবিড় নজরদারীর কোন বিকল্প নেই বলেও মনে করছেন মহলটি।
কারণ নগরীর ডাষ্টবিন থেকে শুরু করে ড্রেন পরিস্কার এবং রাস্তাঘাট পরিচ্ছন্ন রাখার ওপরই মশকমূক্ত ও জলাবদ্ধ শূণ্য নগরী দৃশ্যমান হতে পাড়ে বলেও মনে করছেন নগরবাসী।

এসব বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের কনজার্ভেন্সী বিভাগের প্রধান ডা. রবিউল আলমের সাথে আলাপ করা হলে তিনি মহানগরীর প্রধান এলাকায় মশার উপদ্রব যথেষ্ঠ সহনশীল বলে দাবী করে নতুন ও বর্ধিত এলাকায় ডোবা,নালা বেশী হওয়ায় সেসব এলাকার পরিস্থিতি উন্নয়নেও চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান। পাশাপাশি নগরী পরিচ্ছন্ন রাখা সহ পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে নিরন্তর প্রচেষ্টার কথাও জানান তিনি। তবে মহানগরীতে অতি সাম্প্রতিক মশার দুরন্তপনা সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি জানান, এবার শীত আগেভাগে বিদায় নিয়ে মধ্য মাঘ থেকে বসন্তের আবহাওয়ার পরে আবার কয়েকদিন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রীর নিচে নেমে যায়। আবার ফাল্গুনেই তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রীর ওপরে উঠে গিয়ে গরম পড়তে শুরু করায় মশার বার বারন্ত অবস্থা চলছে বলে জানিয়ে তা নিয়ন্ত্রনে নগর ভবনের নিরন্তর প্রচেষ্টার কথাও জানান ডা. রবিউল। খুব শিঘ্রই বরিশাল মহানগরীতে মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রনে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে আগামী বর্ষার আগেই নগরীর পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা আরো উন্নয়নের কথাও জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ