Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আত্মত্যাগের ৫৪ বছরেও মেলেনি জাতীয় স্বীকৃতি

রাবি সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৩:২৮ পিএম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন ১৮ ফেব্রুয়ারি। ১৯৬৯ সালের এই দিনে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা শহীদ হয়েছিলেন। রাবিতে এই দিনটি জোহা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এই দিবসটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে দাবি জানিয়ে আসলেও ৫৪বছরেও মেলেনি তার স্বীকৃতি।
’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের অগ্রনায়কের ভূমিকা পালন করেছিলেন ড. শামসুজ্জোহা। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই শুরু হয়েছিল পাক-হানাদার বাহিনী হটাও আন্দোলন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিসহ আইয়ুব খানবিরোধী আন্দোলনে ফুঁসে ওঠা রাবি ছাত্রদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই শহীদ বুদ্ধিজীবী। সেদিন নিজের জীবনের বিনিময়ে বাঁচিয়ে ছিলেন হাজারো শিক্ষার্থীর জীবন। তিনিই পাক-হানাদারদের হাতে নিহত প্রথম বাংলাদেশি বুদ্ধিজীবী।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, গণঅভ্যুত্থানের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন গড়ে তোলেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণায় পাক-বাহিনী পূর্ব-পাকিস্তানে ১৪৪ ধারা জারি করে। ১৮ ফেব্রুয়ারি সকালে শিক্ষার্থীরা এ ধারা উপেক্ষা করে প্রধান ফটকের সামনের মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে। এ সংবাদে তৎকালিন প্রক্টর ড. জোহা প্রধান ফটকে ছুটে যান।
প্রক্টর হিসেবে তিনি ছাত্রদের শান্ত করার ও ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। ছাত্ররা পিছু হটতে না চাইলে পাক বাহিনীর ক্যাপ্টেন হাদী ছাত্রদের গুলি করার নির্দেশ দেন। তখন জোহা পাক বাহিনীর উদ্দেশে বলেন, ‘কোনো ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে আমার গায়ে যেন গুলি লাগে’। ড. জোহা ‘ডোন্ট ফায়ার! ডোন্ট ফায়ার!’ বলে চিৎকার করতে থাকেন।
তিনি ছাত্রদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দেন। কিন্তু প্রক্টরের আশ্বাসে কর্ণপাত না করে বেলা ১১টার দিকে ক্যাপ্টেন হাদী তার পিস্তল বের করে ড. জোহাকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। হাসপাতালে নেয়ার পথে ড. জোহা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
এরপর থেকে এই দিনটিকে ড. জোহা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নানা কর্মসূচি, মানববন্ধন করে এ দিনটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে আসছে। তবুও জাতীয়ভাবে মেলেনি তার স্বীকৃতি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ড. জোহাকে তাদের স্মৃতিতে রাখতে বিভিন্নভাবে পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছে। ড. জোহার স্মৃতিকে চির অম্লান করে রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মেইন গেটে ড. জোহার গুলিবিদ্ধ হওয়ার স্থানটিতে নির্মাণ করা হয়েছে জোহা স্মৃতি ফলক এবং মেইন গেইট দিয়ে প্রবেশ করলে সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থিত শহীদ জোহার মাজার। শহীদ শামসুজ্জোহা হলের সামনে নির্মিত হয়েছে শহীদ শামসুজ্জোহা স্মৃতি ভাস্কর্য ‘স্ফুলিঙ্গ’।
এছাড়াও এ দিবসটি উপলক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। এদিন ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবন, উপাচার্যভবনসহ অন্যান্য ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ৯টায় শহীদ ড. জোহার সমাধি ও জোহা স্মৃতিফলকে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত করেন ভিসি অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, প্রো-ভিসি অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম, প্রো-ভিসি অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিকসহ প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্মকর্তাগণ ।

পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে ১৮ ফেব্রুয়ারীকে জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার দাবি জানান তারা। একই দাবি জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, রসায়ন বিভাগ, রাবি কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি জোট, রাজনৈতিক ও সাংবাদিক সংগঠনগুলোসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সরকার ক্ষমতায় থাকার পরেও দিবসটি জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি না পাওয়া হতাশাজনক। তাই জাতীয় স্বার্থে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নতুন প্রজন্মের নিকট তুলে ধরতে দিবসটিকে অবিলম্বে জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণা করা হোক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ