Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দোয়ারাবাজারে নদী দখল করে ধান চাষ-দোকান বাড়ি নির্মাণ করছেন প্রভাবশালীরা!

দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৩:২১ পিএম

মরাচেলা বালু নদীর চিত্র প্রতিদিনই পাল্টে দিচ্ছেন ভূমিদস্যুরা। কখনো কোন জায়গা দখল করে দোকান ভিটা ও বাড়ি নির্মাণ হচ্ছে, অন্যদিকে ধানের আবাদ চলছে। এই ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন নীরব থাকায় নদীর উপকারিতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ।

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের মরাচেলা বালি নদী তার গতিপথ হারিয়ে সরু খালের আকার ধারণ করেছে। একসময় এই অঞ্চলের ব্যবসা বানিজ্যের জন্য প্রান কেন্দ্র ছিল এই নদী।দুই পাড়ের কৃষকরা ফসলি জমিতে সেচ দিতেন এই নদী থেকে। নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে পানি শুকিয়ে
যাওয়ায় নদীর বুকে এখন ধানসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ হচ্ছে।

মরাচেলা বালি নদীর জায়গা দখল করে পাকা ভবন নির্মান করে ব্যাপক প্রতিযোগিতা করেছে। ভারত থেকে নেমে আসা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে মরাচেলা বালি নদী। এই নদীর জায়গা দখল করে পাকা দোকান, বাড়ী তৈরি করেছেন একাধিক দখলকারী। দীর্ঘ সময়ে এই দখলের পরিমাণ বেড়েছে। দখলের কারণে নদী সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। দখলকারীরা নদীর মধ্যে আরো ১৫ থেকে ৩০ ফুট নদীর জমি দখল করে পাকা ভবন নির্মান করেছে। উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের কলাউড়া,ঢালিয়া,রামসাইরগাও, বড়খাল, কুশিউড়া, বাংলাবাজার, কিরণপাড়া, গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মরাচেলা বালি নদীর কলাউড়া শিমুলতলা থেকে ভোলাখালী ব্রীজ পর্যন্ত নদীর ভেতর থেকে পিলার উঠিয়ে তার উপর নির্মাণ করা রয়েছে এই পাকা ভবন। অনেকে পাকা ভবন করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হাকিয়েছে, কেউ ভাড়া দিয়ে টাকা গুনছে। মরাচেলা বালি নদী কালের ক্রমে তার চিরচেনা রুপ হারিয়ে নিজেই নিজের বোঝা হয়ে পড়ে রয়েছে। এর মূল কারণ হচ্ছে নদী বালি ও পলি জমে ভরাট হয়ে পানি ধারন ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং নদীর দু,পাড় মাটি ভরাট করে ভূমি দস্যুরা ভূমি দখল করে নদীর দু,প্রান্তে গড়ে তুলেছে বসতি ঘর। আর কিছু দিন পর দেখা যাবে নদীর মাঝ খানে গড়ে উঠবে ৪/৫ তলা বাড়ী।অন্যদিকে নদীর
বিভিন্ন স্থানে শ্যালোমেশিন বসিয়ে নদীর বুক থেকে নির্বিচার বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ী চক্র। কেউ কেউ আবার শুকনো চর থেকে কোদাল ও বেলচা দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন।
নদীকে রক্ষা করতে হলে নদীর দু,পাশে উচ্ছেদ অভিযান ও নদী খনন। তা নাহলে আমাদের পরবর্তি প্রজন্ম হয়তো বিশ্বাস করবে না যে কোন একসময় এখানে নদী ছিল।

নদীর দুই পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দারা ইনকিলাবকে জানান, এক সময় মরাচেলা বালি নদীতে পর্যাপ্ত পানি প্রবাহ ছিল। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে থাকতো প্রচুর পরিমাণ পানি। তা দিয়ে চাষাবাদ করার পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ করা যেত। বোরো ফসলের মাঠে সেচ দেওয়ার কোনো চিন্তা করতে হতো না। দীর্ঘদিন ধরে খনন না হওয়ায় নদীর তলদেশে পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে এখন আর সেচ দেয়ার মত পানি থাকে না। দুই তীরে যাদের জমি রয়েছে তারাই নদী দখলে নিচ্ছে। যাদের জমি নেই তারাও ধান লাগানোর ছলনায় নদী দখল করছে। নদীটিকে বাচাতে এবং এর দু,পাড়ের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে এখনই নদীটিকে বাচানো একান্ত দরকার বলে অভিমত জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোশারফ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, নদীটি দখল আর দূষণের কারণে সরু হয়ে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না আবার বর্ষাকালে উজানের পানি এসে জমি, বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট ভাঙ্গনের শিকার হয়। দ্রুত দখলমুক্ত করে খননের দাবী জানাচ্ছি।

বাংলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আবুল হোছাইন ইনকিলাবকে বলেন, ছোট বেলায় দেখছি নদীটি অনেক গভীর ছিল। খনন না করা হলে কয়েক বছর পর হয়ত আগামী প্রজন্ম বিশ্বাসই করতে চাইবে না মরাচেলা বালি নদী নামে একটি নদী ছিল। নদীটি পুনঃখনন না করায় বর্তমানে ধানসহ বিভিন্ন ধরণের চাষ করা হচ্ছে। নদীটি পূনঃখননের দাবী জানান তিনি।

এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা প্রিয়াংকা ইনকিলাবকে জানান, অবৈধ দখলের কারণে ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে নদী। অচিরেই অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে নদী দখলমুক্ত করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ