Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ^ জাকের মঞ্জিলে উরশ শরিফে যোগ দিতে দেশে বিদেশের মুসুল্লীদের আগমন শুরু

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৩:২৩ পিএম

ফরিদপুরের বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে ৪ দিনব্যাপী মহা পবিত্র বিশ্ব উরশ শরিফে যোগদানের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দেশ বিদেশের জাকেরান ও আশেকান সহ মুসুল্লীয়ানবৃন্দ পৌছতে শুরু করেছেন। শুক্রবার মাগরিব নামাজ থেকে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে ৪ দিনব্যাপী উরশ শরিফ শুরু হচ্ছে। মাগরিব নামাজ বাদে দুই রাকাত করে ৬ রাকাত নফল নামাজ আদায় ও দেয়া মোনাজাত সহ ফাতেহা শরিফ পাঠের মাধ্যমে এ দরবার শরিফে বিশাল ধর্মীয় মিলন মেলার আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে। তবে ঐদিন জুমা নামাজের বিশাল জামাতে অংশগ্রহন সহ পীর ছাহেবের রওজা শরিফ জিারতের লক্ষ্যে সর্বস্তরের মানুষ ইতোমধ্যে বিশ^ জাকের মঞ্জিলে পৌছতে শুরু করেছেন। এবারো সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে জাকেরান ও আশেকান এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমান ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীগন বিশ^ জাকের মঞ্জিলে সমবেত হবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পীর ছাহেব হজরত মাওলানা শাহ সুফি সৈয়দ খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব-এর প্রতিষ্ঠিত বিশ্ব জাকের মঞ্জিল ও সন্নিহিত প্রায় ৩৫বর্গ কিলোমিটার এলাকা যুড়ে এ উরশ শরিফের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। লক্ষ লক্ষ জাকেরান ও আশেকন সহ ধর্মপ্রাণ মুসুল্লীদের আল্লাহ আল্লাহ জিকির এবং নামাজ সহ বিভিন্ন ধরনের এবাদত বন্দেগীতে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল ও সন্নিহত এলাকাসমুহ এক ভিন্ন পরিবেশ লাভ করতে যাচ্ছে। শুক্রবার উরশ শরিফের সুচনা দিবসে কয়েক লাখ মুসুল্লী জুমা নামাজ আদায়ন্তে দু রাকাত নফল নামাজ ও মিলাদ শরিফ পাঠের পরে পীর ছাহেবের মাজার শরিফে ফাতেহা শরিফ পাঠ শেষে মোনাজাতে অংশ নেবেন। বাদ আসর নামাজন্তে তওবা কবুলিয়াতের ফয়েজ আদায়ের পরে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত শুরু হবে। মাগরিব নামাজ বাদে দু রাকাত করে ছয় রাকাত নফল নামাজ আদায় ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। এরপরে ফাতেহা শরিফ পাঠন্তেও দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। এর পর থেকে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, মিলাদ ও জিকিরের মাধ্যমে উরশ শরিফের কার্যক্রম শুরু হবে। দেশ বরেণ্য ওলামায়ে কেরামগন ছাড়াও বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের বিশিষ্ট খাদেমবৃন্দও এ উরশ শরিফে ৪ দিনই বয়ান করবেন।
তরিকায়ে নকসবন্দিয়া-মোজাদ্দেদীয়ার আমল অনুযায়ী রাতের শেষ প্রহরে রহমতের সময়ে পবিত্র কোরয়ান তেলাওয়াতের মাধ্যমে প্রতিটি দিনের এবাদত বন্দেগীর কার্যক্রমের সূচনা হবে। এরপরে মিলাদ ও দোয়া মোনাজাত ছাড়াও জিকির শেষে লক্ষÑলক্ষ জাকেরান ও আশেকানবৃন্দ জামাতের সাথে ফজরের নামাজ আদায়ন্তে ফাতেহা শরিফ ও খতম শরিফ আদায়ের মাধ্যমে এ উরশ শরিফের কার্যক্রমে অংশ নেবেনে। এ দরবারে ফজর থেকে এশার নামাজ জামাতের সাথে আদায় সহ নফল নামাজ আদায়, মোনাজাত এবং মোরাকাবা-মোশাহেদা অনুষ্ঠিত হবে। নকসবন্দিয়াÑমোজাদ্দেদীয়া তরিকার নিয়ম অনুযায়ী বাদ ফজর ও বাদ মাগরিব ফাতেহা শরিফ পাঠন্তে মোনাজাত এবং বাদ এশা ৫শ বার দরুদ শরিফ পাঠন্তে নবী করিম(সাঃ)-এর পাক কদম মোবারকে নজরানা দেয়া হবে। এছাড়াও জোহর, মাগরিব ও এশার নামাজন্তে নফল নামাজ আদায় এবং দোয়াÑমোনাজাতও অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে।
আপন পীর, উপমহাদেশের প্রখ্যাত সুফী সাধক হজরত মাওলানা শাহ সুফী সৈয়দ খাজা ইউনুস আলী এরায়েতপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের নির্দেশে বাংলা ১৩৫৪ সনে শাহ সুফি সৈয়দ খাজাবাবা ফরিদপুরী (কু:ছে:আ:) ছাহেব ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার আটরশী গ্রামে ইসলাম প্রচারে নিয়োজিত হন। সেদিন মাত্র সাড়ে ৬টাকায় খেজুরের খোলের বেড়া ও ছনের ছাউনি দেয়া ঘর কিনে আটরশীতে ‘জাকের ক্যাম্প’ প্রতিষ্ঠা করে ইসলাম প্রচার শুরু করেন পীর ছাহেব। কালের বিবর্তনে সেই জাকের ক্যাম্পই আজকের ‘বিশ্ব জাকের মঞ্জিল’। বিশ^ জাকের মঞ্জিলের পীর ছাহেব হজরত মাওলানা শাহ সুফি খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব তার জীবদ্বশায় বিশ্ব জাকের মঞ্জিল থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষকে হেদায়াত প্রদান করে গেছেন। ২০০১-এর ১মে ওফাত লাভ পর্যন্ত নানা গঞ্জনা ও প্রবল প্রতিকুলতা অতিক্রম করেও তিনি ইসলাম প্রচারে ব্রতী ছিলেন।
মহা পবিত্র উরশ শরিফ উপলক্ষে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে সমবেত লক্ষ লক্ষ মানুষের আহার ও বিশুদ্ধ পানি সরবারহ ছাড়াও জামাতের সাথে নামাজ আদায়ে সব ব্যাবস্থা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। শান্তিÑশৃংখলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করনে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের কয়েক হাজার সেচ্ছাসেবক ছাড়াও পুলিশ ও র‌্যাবও মোতায়েন করা হচ্ছে।
এ উপলক্ষে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পীর ছাহেবের আধ্যাতিক উত্তরাধিকারী ও বড় ছাহেবজাদা আলহাজ খাজা মাহফুজুল হক মুজাদ্দেদী ছাহেব সমেবত জাকেরান ও আশেকানবৃন্দকে সাক্ষাত প্রদান সহ নানা অসিহত প্রদান করবেন। যানবাহন ও মুসুল্লীদের ভীড়ে বরিশালÑফরিদপুর ও বরিশালÑঢাকা জাতীয় মহাসড়কের পুকুরিয়া, তালমা ও পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ের মালিগ্রাম পয়েন্ট থেকে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল পর্যন্ত সড়কে ট্রাফিক ব্যাবস্থা নিয়ন্ত্রনে বিশেষ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
বাংলা ১৩৫৪ সনে পীর ছাহেব খাজাবাবা ফরিদপুরী(কুঃছেঃআঃ) ছাহেব যখন আটরশীতে আসেন, তখন এখানের মুসলমানরা ইসলামের বিধান সম্পর্কে ওয়াকেবাহাল ছিলেন না। তারা ঈদ ও কোরবানীর দিন লাঙ্গল-জোয়াল নিয়ে জমিতে যথারিতি হাল চাষ করতে যেত। অথচ পুজাÑপার্বনে নতুন জামা কাপড় পড়ে প্রতিমা দর্শনে বের হত।
সে অবস্থাতেই পীর ছাহেব ‘জাকের ক্যাম্প’ প্রতিষ্ঠা করে ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করেন। তার প্রতিষ্ঠিত জাকের ক্যাম্প ক্রমে জাকের মঞ্জিল থেকে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের রূপ নিয়ে সারা বিশ্বে ইসলামের দাওয়াত পৌছে দিচ্ছে। বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পীর ছাহেব-এর আপন পীর খাজা এনায়েতপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব শণিবার ছবেহ ছাদেকের সময় জন্ম গ্রহন করেছিলেন। তিনি ওফাত লাভ করেন রবিবার দুপুর সোয়া ১২টায়। তার দাফন হয় সোমবার বাদ আসর। আর বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পীর ছাহেব এর দাদা হুজুর, হজরত মাওলানা শাহ সুফি সৈয়দ খাজা ওয়াজেদ আলী (রঃ) ছাহেব ওফাত লাভ করেন মঙ্গলবার। আপন পীর ও দাদা হুজুরের জন্ম-মৃত্যুর এসব দিবসকে হিসেব করেই প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের প্রথম শণিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে ৪ দিন ব্যাপী মহাপবিত্র বিশ্ব উরশ শরিফ উদযাপিত হয়ে থাকে।
বিশ্ব জাকের জাকের মঞ্জিলের পীর ছাহেব নিজেও সোমবার দিবাগত মধ্যরাতের পরে মঙ্গলবার ওফাত লাভ করেন। এসবেরই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল থেকে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে উরশ শরিফের কার্যক্রমের সূচনা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ