বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ঝিনাইদহে অন্য সময়ের থেকে দুই তিনগুণ বেশি দামে ফুলের বিক্রি হয়েছে। বসন্ত বরণ ও বিশ^ ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে গত কয়েকদিনে স্থানীয় বাজারগুলো ফুলের দামে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। এসব বাজারে একটি গোলাপ ২৮ থেকে ৩২ টাকা পাইকারী বিক্রি হয়েছে। আর খুচরা বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৫০ টাকা। এক থেকে দুই সপ্তাহ আগে এই একই গোলাপ বিক্রি হয়েছিল ৮ থেকে ১২ টাকা। এছাড়া জারবেরা বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। যা দুই এক সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছিল ৩ থেকে ৪ টাকা। রজনীগন্ধার স্টীক বিক্রি হয়েছে ৮ টাকা, যা এক সপ্তাাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ২ থেকে ৩ টাকায়। একই সময়ে দাম কমেছে গাদা ফুলের। রোববার ও সোমবার গাদা ফুল বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা ধোপা। সে একই ফুল দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা ধোপা।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠে মাঠে ফুটে আছে লাল, হুলুদ ও কমলা রঙের জারবেরা। ফুটে আছে লাল, হলুদ আর সাদা রঙের গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্লাডিয়াস ও গাদা ফুল। ফুটে থাকা ফুলের রঙে স্বপ্ন রাঙ্গাতে ব্যস্ত সময় পার করছে জেলার ফুলচাষীরা। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মার্চ মাস এলেই এ জেলার ফুলচাষি ও ফুলকর্মীদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। বিভিন্ন জাতীয় উৎসবে এ এলাকায় উৎপাদিত ফুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। চলতি মাসেই তরুণ তরুণীদের প্রাণের উৎসব বসন্ত বরণ ও বিশ^ ভালোবাসা দিবস। এছাড়া রয়েছে ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস। এসব দিবসের বাড়তি চাহিদা মিটাতে ব্যস্ত সময় পার করছে জেলার ফুলচাষীরা।
চলতি মৌসুমে ঝিনাইদহ জেলায় ২৬৮ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে গোলাপ ২০ হেক্টর, গাদা ১৪৩ হেক্টর, রজনীগন্ধা ৬২ হেক্টর, জারবেরা ২১ হেক্টর, চন্দ্রমল্লিকা ১০ হেক্টর ও ৮ হেক্টর জমিতে গ্লাডিয়াস ফুলের চাষ হয়েছে। সব থেকে বেশি ফুলের চাষ হয় জেলা সদরের গান্না ও কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে। যে কারনে এ এলাকাটি অনেকের কাছে ফুলনগরী বলে পরিচিত। ১৯৯১ সালে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের সৌখিন কৃষক ছব্দুল শেখ সর্বপ্রথম ফুল চাষ করেন। তিনি ওই বছর মাত্র ১৭ শতক জমিতে ফুল চাষ করে ৩৪ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেন। এরপর থেকে এলাকায় বিভিন্ন জাতের ফুল চাষের বিস্তার শূরু করে। বর্তমানে জেলার হাজার হাজার কৃষক ফুলচাষ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের ত্রিলোচনপুর গ্রামের ফুলচাষী টিপু সুলতান জানান, ২০১৭ সালে ৫৫ লাখ টাকা খরচ করে ৫ বিঘা জমিতে জারবেরা ফুলের চাষ করেছিলাম। বর্তমানে প্রায় ২০ বিঘা জমিতে আমার ফুল চাষ রয়েছে। এরমধ্যে গোলাপ রয়েছে ৫ বিঘার মত। ভালোবাসা ও বসন্ত উৎসবকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিনে গোলাপ পাইকারী ২০ থেকে ৩০ দরে বিক্রি করেছি। প্রতিনিদিন এক হাজার থেকে দেড় হাজার গোলাপ ঢাকার বাজারে পাঠাচ্ছি।
কালীগঞ্জের মেইন বাসষ্ট্যান্ড, বালিয়াডাঙ্গা বাজার এবং ঝিনাইদহ সদর উপজেরা গান্নার ফুল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, দুপুর থেকে শত শত কৃষক তাদের ক্ষেতের উৎপাদিত ফুল ভ্যান, স্কুটার ও ইঞ্জিন চালিত বিভিন্ন পরিবহন যোগে নিয়ে আসছেন। বেলা গড়ানোর সাথে সাথে বালিয়াডাঙ্গা বাজার ও কালীগঞ্জ মেইন বাস ষ্ট্যান্ড ভরে যায় লাল, সাদা আর হলুদ ফুলে ফুলে।
কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা বাজার ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দার হোসেন ও সাধারন সম্পাদক ফজলুর রহমান জানান, বর্তমানে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সারা বছরই তারা ফুল বেচা কেনা হয়। তবে প্রতিবছর বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষের দিন, স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ভালবাসা দিবস ও বসন্ত বরণের দিন ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। এ সময় দামও ভালো পাওয়া যায়।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আজগর আলী জানান, ঝিনাইদহ মাটি ও আবহাওয়া ফুলচাষের জন্য উপযোগী। এ বছর জেলায় ২৬৮ হেক্টর জমিতে গ্লাডিয়াস, রজনীগন্ধ্যা, গোলাপ, গাঁদাসহ নানা জাতের ফুল চাষ হয়েছে। ফুলচাষ এ অঞ্চলের আর্থ সামাজিক উন্নয়য়ে বিরাট ভূমিকা রাখছে। ফুল পরিবহন ও সংরক্ষণ প্রশ্নে তিনি জানান, পদ্ম সেতু হওয়া খুব সহজে ফুল ও কৃষি পন্যবাহি গাড়ি ঢাকা চট্রগস্খাম পৌছে যাচ্ছে। অন্যদিকে ফেরীঘাটে ফুলবাহী গাড়ী আগে পারাপারের বিষয়ে জেলার প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা হয়েছে। এছাড়া ফুল সংরক্ষণের জন্য বালিয়াডাঙ্গা বাজারে ফুল এসেম্বলী সেডের সাথে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক রুম করা হয়েছে। যেখানে ফুল ও ফলের বীজ সংরক্ষণ করা যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।