Inqilab Logo

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

নবীজির দ্বীন প্রচার ও প্রতিষ্ঠার মহান কাজটি করছেন আল্লাহর অলিগণ কুমিল্লায় এশায়াত সম্মেলনে পীর সাহেব কাগতিয়া

কুমিল্লা থেকে সাদিক মামুন, | প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:২১ পিএম

কাগতিয়া দরবার শরীফের মোর্শেদে আজম আল্লামা শায়খ প্রিন্সিপাল ছৈয়্যদ মুহাম্মদ মুনির উল্লাহ আহমদী বলেছেন, রসুল (দ.) কোন গোত্র, কোন জাতির নবী হয়ে আসেননি, নবীজি সমগ্র মানবজাতির কল্যাণ ও হেদায়েতের জন্য পথ প্রদর্শক হয়ে এসেছেন। তিনিই শেষ নবী, শেষ রসুল। এরপর আর কোনো নবী আসবেন না। প্রিয় নবীজির রেখে যাওযা দ্বীন প্রচার ও প্রতিষ্ঠার মহান কাজটি দায়িত্বের সঙ্গে পালন করে আসছেন আল্লাহর অলিগণ।
গত শুক্রবার রাতে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত এশায়াত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আল্লামা শায়খ ছৈয়্যদ মুহাম্মদ মুনির উল্লাহ আহমদী। এদিন বিকেল থেকে শুরু হয়ে রাত ১২টা পর্যন্ত চলে এশায়াত সম্মেলন। কাগতিয়া দরবার শরীফ তরিক্বতের এ সম্মেলনের আয়োজন করে মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ, কুমিল্লা জেলা সমন্বয় পরিষদ। শুক্রবার বেলা তিনটা থেকেই হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান সম্মেলনস্থল কুমিল্লা কেন্দ্রীয় ঈগাহ ময়দানে আসতে থাকে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে মাগরিবের আগেই সম্মেলনস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ঈদগাহের বাইরের এলাকা ও সড়ক লোকে লোকারন্য হয়ে পড়ে। এশায়াত সম্মেলনকে ঘিরে ঈদগাহের চারিপাশ আলোকসজ্জিত ও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মোড় নান্দনিক ফেস্টুন দ্বারা সাজানো হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আল্লামা শায়খ ছৈয়্যদ মুহাম্মদ মুনির উল্লাহ আহমদী আরও বলেন, বিভিন্নভাবে বিপদগামী তরুণদের তরিক্বত চর্চায় আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে কোরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন গঠনের পথে ফিরিয়ে আনতে হবে। কেননা এই তরুণরাই হচ্ছে দেশ ও জাতির সেরা সম্পদ, মুসলিম উম্মাহর প্রাণশক্তি। সর্বোপরি আমাদেরকে আল্লাহ ও নবীজীর প্রতি আনুগত্যতায় পরিপূর্ণতা এনে নবীজির সুন্নাহ, আদর্শকে মনে-প্রাণে লালন করা এবং ইসলামের মৌলিক শিক্ষা শরীয়ত ও তরিক্বতের অনুশীলন করা এবং কুরআন-সুন্নাহে পূর্ণ অনুসারী হতে হবে।
কাগতিয়া দরবারের প্রতিষ্ঠাতা প্রসঙ্গ তুলে ধরে আল্লামা শায়খ ছৈয়্যদ মুহাম্মদ মুনির উল্লাহ আহমদী বলেন, বিশ্বায়নের এ যুগে মানুষ যখন আধুনিকতার বেড়াজালে পড়ে আল্লাহ ও রাসুল (দ.)কে ভুলে যাচ্ছিলো সে মুহূর্তে খলিফায়ে রাসুলের আহবানে মানুষ পেলো সুপথের সন্ধান, নবীজিকে ভালোবাসার আধ্যাত্মিক সোপান। মানুষকে বিশেষত যুব সম্প্রদায়ের সামনে সময়োপযোগী এমন এক দর্শন তুলে ধরেছেন যার ফলশ্রুতিতে বিশ্বের বুকে উঠেছে হেদায়তের এক অপূর্ব জয়গান।
মোর্শেদে আজম তার বক্তব্যে উপস্থিত মুসল্লীদের খলিফায়ে রাসুল হযরত গাউছুল আজম (রা.) এর দরবারে অন্তত একবারের জন্য হলেও এসে সংরক্ষিত বিভিন্ন অলৌলিক ঘটনা স্বচক্ষে দেখার আমন্ত্রণ জানান।
বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন মহাসচিব প্রিন্সিপাল আল্লামা শাব্বীর আহমদ মোমতাজীর সভাপতিত্বে এশায়াত সম্মেলন উদ্বোধন করেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র হাবিবুর আল আমিন সাদী। উদ্বোধনী বক্তব্যে প্যানেল মেয়র সাদী বলেন, ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও তার অনুসৃতি থেকে তরুণ ও যুবরা যাতে দূরে না যায় এজন্য তাদের আল্লাহ ও রাসুলের দ্বীন প্রচারে নিয়োজিত থাকতে হবে। বাংলাদেশে মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি দ্বীনের আঞ্জাম নিয়ে যেকাজটি করছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। কুমিল্লায় এই প্রথম এশায়াত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ায় তিনি আয়োজকদের মোবারকবাদ জানান।
এশায়াত সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর বলেন, কাগতিয়া দরবার শরীফের তরিক্বতের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ সন্ধানী মানুষদের আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া, দরুদের তালিম দেওয়া, মোরাকাবা ও কোরআনের নূরের দীক্ষায় মানুষকে দিক্ষিত করা। আর এ দরবারের মোর্শেদে আজম শায়খ অধ্যক্ষ ছৈয়্যদ মুহাম্মদ মুনির উল্লাহ আহমদী একজন দূরদর্শী রূহানী দার্শনিক।
এশায়াত সম্মেলনে প্রধান আলোচকের বক্তব্য রাখেন- মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ মহাসচিব অধ্যাপক মোহাম্মদ ফোরকান মিয়া। সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন মহাসচিব প্রিন্সিপাল শাব্বীর আহমদ মোমতাজী বলেন, আজকের সমাজ ব্যবস্থায় আমরা যদি লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাই অগণিত যুবক, কিশোর, তরুণরা মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, কিশোরগ্যাংসহ নানারকম গর্হিত কাজে যুক্ত হয়ে বিপদগামী হয়ে পড়ছে। তারা তো কোনো না কোনো পরিবারের সন্তান। এসব বিপদগামী তরুণ-যুবদের হেদায়েতের পথে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব আমাদের।
প্রিন্সিপাল মোমতাজী বলেন, বিশ্বব্যাপী দেশে দেশে মুসলমানরা নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে, নির্মমভাবে মারা যাচ্ছে, পবিত্র কুরআনের অবমাননা হচ্ছে। এটা একটা বড় সংকট। এ সংকট মোকাবেলায় মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, নিজেদের মধ্যে ফেতনা ফ্যাসাদ দূর করতে হবে। এদেশের সকল দরবারের পীর মাশায়েখদের এককাতারে এসে ঐক্যবদ্ধ থেকে মুসলিম উম্মাহর সোনালী ফিরিয়ে আনতে হবে। আল্লাহ ও রাসুলের দ্বীন প্রচারে অগ্রগন্য ভূমিকা রাখতে হবে। যেমনি করে কাগতিয়া দরবারের মোর্শেদে আজম অধ্যক্ষ ছৈয়্যদ মুহাম্মদ মুনির উল্লাহ্ আহমদী নিজস্ব উদ্যোগে ও অর্থায়নে দেশে মাদরাসা নির্মাণ, অসংখ্য হিফজুল কুরআন বিভাগ চালু ও পরিচালনার মাধ্যমে ইসলামের খেদমতে নিয়োজিত রয়েছেন। তিনি তরিক্বতের প্রচার-প্রসারের পাশাপাশি দেশে ইসলামী শিক্ষার প্রসারেও অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। একটা কথা মনে রাখবেন, দ্বীনি শিক্ষা যার মধ্যে আছে সে কখনো দুর্নীতি, অন্যায় করতে পারে না। আমাদেরকে খোদায়ী গজব, বিভিন্ন দুর্যোগ থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি করে ফানা চাইতে হবে।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন- বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন কুমিল্লা জেলার সভাপতি ও মৌকারা দরবার শরীফের পীর আলহাজ¦ মাওলানা শাহ মুহাম্মদ নেছার উদ্দিন ওয়ালী উল্লাহী, কুমিল্লা ইসলামিয়া আলিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল আলহাজ¦ মাওলানা মো. আবদুল মতিন, ধামতি ইসলামিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা শাহ মো. মহিউদ্দিন, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রফেসর ড. জালাল আহমেদ, কুমিল্লা সদরের রাচিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল সফিকুল আলম পাটোয়ারি, নাঙ্গলকোট কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান, প্রিন্সিপাল মাওলানা মোহাম্মদ হুজ্জাতুল ইসলাম, প্রিন্সিপাল মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল মুবিন আখন্দ, হাফেজ নাজির আহমদ, মাওলানা মোহাম্মদ জামাল হোসেন, হাফেজ কারী মোহাম্মদ ইমাম হাসান, কুমিল্লা এবি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আকতারুজ্জামান বাবু প্রমুখ। সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন মাওলানা মোহাম্মদ রকিব উদ্দীন, মাওলানা মুহাম্মদ শফিউল আলম, মাওলানা মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন মুনিরী, মাওলানা মুহাম্মদ এরশাদুল হক।
এশায়াত সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মুহাম্মদ সরওয়ার কামাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান খানসহ দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরাম, পীর-মাশায়েখ, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে কাগতিয়ার মোর্শেদে আজমের বক্তব্য শেষে মৌকারা দরবার শরীফের পীর আলহাজ¦ মাওলানা শাহ মুহাম্মদ নেছার উদ্দিন ওয়ালী উল্লাহী বিশেষ মোনাজাত করেন। মোনাজাতে তিনি বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও রাসুল (সা:) এর দিদার নছীব লাভের ফরিয়াদ এবং প্রিয় নবীজির উসিলায় এবং খলিফায়ে রাসুল (দ.) এর এখলাসের সাদকায় দেশ জাতির উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনাসহ মুসলমানদের হেফাজত ও এদেশে ওলি-আউলিয়া, পীর-মাশায়েখগণের স্মৃতিচিহ্ন রক্ষায় আল্লাহর সাহায্য কামনা করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ