Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারাদেশে নিরুত্তাপ জেলা পরিষদ ভোট আজ

| প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কালো টাকার ছড়াছড়ি, কেন্দ্র দখল ও সিল মারার শঙ্কা প্রার্থীদের
স্টাফ রিপোর্টার : প্রথমবারের মতো হতে যাচ্ছে জেলা পরিষদ নির্বাচন আজ বুধবার ভোট। এ নির্বাচনের জন্য সকল প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জেলা পরিষদ নির্বাচনেও কালো টাকার ছড়াছড়ি, কেন্দ্র দখল ও প্রকাশ্যে সিল মারা হতে পারেÑ এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। নির্বাচনকে ঘিরে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে নির্বাচনী এলাকায়। অনেক এমপি’র বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও প্রভাব খাটানোর অভিযোগ পেয়েছে নির্বাচন কমিশন। শেষ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের চাপে অনেক প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন। অপরদিকে নির্বাচনকে সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ করতে এমপিদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন। এমনকি এমপিদের আচরণবিধি বিষয়ে খেয়াল রাখতে গতকাল স্পিকারকেও চিঠি দিয়েছে ইসি।
আজ বুধবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে। জেলা ও উপজেলায় স্থাপিত ভোট কেন্দ্রে চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ভোট দেবেন স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা। বিশেষ নিরাপত্তায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী মালামাল পাঠানো হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের প্রচারণাও শেষ হয়েছে গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায়। জেলা পরিষদ নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থীরা। নির্দলীয় এ নির্বাচনে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে অংশ না নিলেও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দলের বিদ্রোহীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চূড়ান্ত লড়াই হবে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী বনাম দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে। এ ছাড়া কিছু জেলায় অন্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও মাঠে রয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার শেরে বাংলা নগরে নিজ কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় এমপিরা যাতে আচরণবিধি মেনে চলেন তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্পিকারের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। কমিশনার বলেন, যেসব স্থানীয় এমপি এখনো এলাকায় অবস্থান করছেন তাদেরকে এলাকা থেকে সরে আসার জন্য কমিশন থেকে মাননীয় স্পিকারের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিনি যেনো যেসব সংসদ সদস্যরা আছেন তাদেরকে নির্দেশ প্রদান করেন এলাকা ছেড়ে চলে আসেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তারা যেনো এলাকা থেকে সরে আসেন। তারা (সংসদ সদস্যরা) সম্মানী ব্যক্তি এবং আত্মসম্মানী লোক, আশা করি তারা গুরুত্ব বুঝে এলাকা থেকে চলে আসবেন।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে এখনো অনেক সংসদ সদস্য এলাকায় অবস্থান করে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। আইন প্রণয়নকারী সংস্থা অর্থাৎ পার্লামেন্টের মেম্বার হয়ে তারা  বে-আইনী কাজ করবেন এটা স্বাভাবিকভাবে আশা করা যায় না। তাই বলবো যেহেতু সংসদ সদস্যরা এই ভোটের সাথে সম্পৃক্ত না বা তারা ভোটের প্রচারণায়ও যেতে পারবেন না। তাই তাদেরকে বলবো সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আপনারা এই দুই দিন এলাকায় থাকবেন না। তিনি বলেন, এ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাছে নির্বাচনী মালামাল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা মূলত কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করবো। যেহেতু এখানে জনপ্রতিনিধিরা ভোট দেবেন তাই কেন্দ্রের বাইরের থেকে ভেতরের নিরাপত্তার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এরই মধ্যে চলে গেছে। ভোটের দিন আরো যাবে। বুধবার সকাল ৯ টা থেকে বেলা ২ টা পর্যন্ত জেলা ও উপজেলায় স্থাপিত ভোট কেন্দ্রে দেশের প্রথম জেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট দেবেন ভোটাররা।
ভোট কেনা-বেচার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ পেয়েছে ইসি। ২৫ হাজার থেকে এক লাখ টাকায় ভোট কেনাবেচাও হচ্ছে।  প্রার্থীদের কেউ কেউ ভোটারদের বলছেন ক্যামেরায় ছবি তুলে আনতে, কেউ বলছেন ব্যালট পেপারের পেছনে বিশেষ চিহ্ন দিতে। নরসিংদীতে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর চার সমর্থকের বাড়িতে একযোগে হামলা, ভাঙচুর ও গুলির ঘটনা ঘটেছে।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, চেয়ারম্যান পদে ইতিমধ্যে ২১ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া বর্তমানে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৩৯ জেলায় ১২৪ জন। কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ২ হাজার ৯৮৬ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৮০৬ জন। প্রথমবারের মতো অনলাইনে মনোনয়ন জমার সুযোগ থাকলেও কেউ এ সুযোগ নেয়নি। ৬৩ হাজারের বেশি ভোটারের এ নির্বাচনে জেলা ও উপজেলায় ওয়ার্ডভিত্তিক ৯১৫টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হবে।
নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সুন্দরভাবে করার জন্যে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নির্বাচন সামগ্রীও পৌঁছে গেছে। প্রথমবারের মতো এ নির্বাচনটিও আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জিং। তিন পার্বত্য জেলা বাদ দিয়ে বাকি ৬১ জেলায় এ  ভোট হচ্ছে।
সচিব বলেন, স্থানীয় সরকারের অন্য নির্বাচন থেকে কিছু আলাদা প্যাটার্নে হচ্ছে জেলা পরিষদের ভোট। দেশজুড়ে নির্বাচন হলেও ভোটার সংখ্যা কমের কারণে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন হবে না। ভোট ও যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে অন্য নির্বাচন থেকে কিছুটা শর্তশিথিল রাখা হয়েছে। তবে প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ রাখা হবে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে। এদিকে দেশব্যাপী জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে নেই কোনো উত্তাপ কিংবা আলোচনা। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যেও অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ নেই বললেই চলে। ফলে নিরুত্তাপ এই নির্বাচন ঘিরে সাধারণ ভোটারদের আগ্রহ কম। নির্দলীয় এ নির্বাচনে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি ভোটে না থাকার ঘোষণা দিয়েছে, আওয়ামী লীগ ও তাদের বিদ্রোহীদের মধ্যেই মূলত লড়াই হবে। প্রতিটি  জেলায় একজন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ১৫ জন সাধারণ ও পাঁচজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ভোট হবে।
তিন স্তরের নিরাপত্তা থাকছে
জেলা পরিষদের প্রতিটি ভোট কেন্দ্র পাহারায় থাকবে ২০ জন করে সদস্য। পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, ব্যাটালিয়ন আনসার ও আনসার ভিডিপির সদস্যরা। এর মধ্যে একজন অস্ত্রসহ, পুলিশ (কনস্টেবল) অস্ত্রসহ, আনসার একজন অস্ত্রসহ এবং অঙ্গীভূত আনসার ১৫ জন লাঠিসহ। এরমধ্যে পুরুষ আটজন ও মহিলা সাতজন। কেন্দ্রের বাইরে স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে বিজিবি ও র‌্যাব। প্রতিটি উপজেলায় বিজিবির দুটি মোবাইল টিম (প্লাটুন দুটি প্রতি প্লাটুনে সদস্য সংখ্যা ৩০ জন) এবং একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স (এক প্লাটুন)। আর প্যাট্রোলিং ও স্ট্রাইকিংয়ের দায়িত্বে থাকবে র‌্যাব। এ হিসাবে প্রতিটি উপজেলায় র‌্যাবের দুটি মোবাইল টিম ও একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স (প্রতিটি টিমে ১০ জন করে সদস্য)। এ ছাড়া ৯১৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে প্রতিটি কেন্দ্রে। আর ৯১ জন থাকবে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট।
লড়াই করছেন ৩৯৩৮ জন প্রার্থী
এবারে জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৩ হাজার ৯৩৮ জন। তবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় এ সংখ্যা ছিল ৪২৭১ জন। প্রত্যাহার এবং মনোনয়নপত্রে ত্রুটি এবং বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে কমেছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা। বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ২১ জন রয়েছে। বর্তমানে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৩৯ জেলায় ১২৪ জন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৬ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬৮ জন বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ২ হাজার ৯৮৬ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৮০৬ জন।
লড়াই হবে আওয়ামী লীগ বনাম বিদ্রোহী
কুড়িগ্রামে আওয়ামীলীগের সমর্থন পেয়েছেন সাবেক এমপি জাফর আলী। এই জেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পনির উদ্দিন। পাবনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি রেজাউল রহিম লাল। নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরিফ ডিলুর মেয়ে মেহজাবিন প্রিয়া ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক কামিল হোসেন। প্রিয়া ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। রাজশাহীতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন মাহবুব জামান ভুলু। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন দলের আরেক নেতা মোহাম্মদ আলী সরকার। জামালপুরে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন এইচ আর জাহিদ আনোয়ার। এই জেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে কাজ করছেন  জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ চৌধুরী। জেলা জাসদ সভাপতি জুলফিকার মো. জাহিদ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ইতিমুদ্দৌলা হিন্দুল এই সংবাদ সম্মেলন করেন।
ব্যয় সোয়া পাঁচ কোটি টাকা
জেলা পরিষদ নির্বাচনে পরিচালনা খাতেই সোয়া ৫ কোটি টাকার বেশি বাজেট ধরা হয়েছে। পরে আইনশৃঙ্খলা খাতের ব্যয় যুক্ত হবে। নির্বাচন ঘিরে ১২ ডিসেম্বর থেকে ১৮ দিনের জন্য ৯১ জন নির্বাহী হাকিম নির্বাচনী এলাকাগুলোতে নিয়োজিত থাকবেন। এ ছাড়া ভোটের সময় চার দিন ৯১ জন বিচারিক হাকিম থাকবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মোবাইল-স্ট্রাইকিং ফোর্সে। তাদের দায়িত্ব পালনের সময় জ্বালানি, আপ্যায়নসহ আনুষঙ্গিক খরচ ধরে কোটি টাকার বাজেট ঠিক করা হয়েছে। পর্যবেক্ষক : ৬১টি জেলা পরিষদে নির্বাচনে আটটি সংস্থার তিন হাজার ২২৫ জন পর্যবেক্ষককে অনুমোদন দিয়েছে ইসি। এর মধ্যে আসক ফাউন্ডেশনের আড়াই হাজার এবং জানিপপের তিন শতাধিক পর্যবেক্ষক থাকবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জেলা পরিষদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ