পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্ক ও সিরিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় চার কোটি মানুষ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। ভূমিকম্পের পর ভারী বৃষ্টি ও তুষারপাতে আরো কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের জীবন। বেঁচে থাকার সব অবলম্বন হারিয়েছে তারা। খোলা আকাশের নিচে দিন-রাত কাটাচ্ছেন। প্রতি মুহূর্তে আবারও ভূমিকম্পের ভয় তাদের গ্রাস করছে। হাজার হাজার আহতদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তারপরও ধ্বংসস্তূপের নিচে প্রাণের সন্ধান করা হচ্ছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে জীবিত, মৃত মানুষের সন্ধান করা হচ্ছে।
যতদূর চোখ যায় ততদূর পর্যন্ত শুধু ধ্বংসস্তূপ। সুউচ্চ ভবনগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। চার দিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ভবনের ইটপাথর, যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল ও সংলগ্ন সিরিয়ার একটি প্রদেশ। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক লাশ। অনেক পরিবারের সবাই মারা গেছেন। ফলে পরিবারের জন্য কাঁদার মানুষ পর্যন্ত নেই। যারা প্রাণে বেঁচেছেন তারা বাকরুদ্ধ। তাদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। মৃত্যের সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও এখন পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপ থেকে ৫ হাজারের বেশি মানুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) শঙ্কা ভূমিকম্পে দেশ দু’টিতে প্রাণহানির সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শোকাহত করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, সংস্থা ও সংগঠন তুরস্কের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয় ক্ষুধার্ত-ঘরহারা মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম রাখার চেষ্টা করছেন। বেঁচে থাকার কোনো অবলম্বনই তাদের আর নেই। অন্যদিকে হাজার হাজার আহত মানুষের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই।
সময় যত গড়াচ্ছে ততই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। সারি সারি লাশের মধ্যে প্রিয় স্বজনদের খুঁজে বেড়াচ্ছেন আপনজনরা। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা অসংখ্য মানুষ বাঁচার জন্য আর্তচিৎকার করছে। কিন্তু তাদের জীবিত উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়ছে। হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা, তুষারঝড় ও বৃষ্টি উদ্ধারকাজে বাধা সৃষ্টি করছে। উদ্ধারকারীরা সময়মতো তাঁদের কাছে পৌঁছতে না পারায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে।
ঘরবাড়ি হারিয়ে তীব্র ঠাণ্ডায় খোলা আকাশের নিচে রাত কাটছে হাজারো মানুষের। আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই পেয়েছে ৩ লাখ ৩৮ হাজার। তাদের জন্য কম্বল, খাবার ও জরুরি ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। উদ্ধারকাজে অংশ নিতে ইস্তাম্বুল এয়ারপোর্টে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে স্বেচ্ছাসেবীরা। শুধু ব্যাকপ্যাক আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়েই হাজার হাজার মানুষ টার্মিনালে ঢোকার চেষ্টা করছেন। দুর্যোগকবলিত দুই দেশে উদ্ধার কাজে সহায়তায় বিশেষ টিম পাঠিয়েছে বিভিন্ন রাষ্ট্র।
কেউ শুনতে পাচ্ছেন : সিরিয়া ও তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের লাশ। অসংখ্য মানুষ আটকা পড়েছেন ধসে যাওয়া ভবনের নিচে। আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২০ হাজার। কঠিন এই পরিস্থিতিতে উদ্ধার কাজকে আরো কঠিন করে তুলেছে সেখানকার হিমশীতল তাপমাত্রা। ৭ দশমিক ৮ মাত্রার এই ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আটকেপড়া মানুষদের জীবিত উদ্ধার করার সম্ভাবনাও কমে আসছে সময়ের সঙ্গে।
তুরস্কের খারমানমারাসের গাজিয়ানতেপ শহর ছিল এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল। দেশটির আদানা শহরের ৩৫০ কিলোমিটার পশ্চিমে ধ্বংসস্তূপে আটকেপড়া মানুষদের মরিয়া হয়ে খুঁজতে কংক্রিটের ভগ্নাংশ ও বিভিন্ন আসবাবপত্র হাত দিয়েই সরিয়ে ফেলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। উদ্ধারকর্মীরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন আটকেপড়া মানুষদের জীবিত খুঁজে বের করে উদ্ধার করতে। প্রতিটি বহুতল ভবন যেন এখন ধ্বংসস্তূপের একেকটি পাহাড়।
‘কেউ আছেন? শুনতে পাচ্ছেন?’, কিছুদুর পর পর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বারবার এমন চিৎকার করে প্রাণের খোঁজ করছেন উদ্ধারকর্মীরা। তুরস্ক ও সিরিয়াজুড়ে চাপা পড়া ব্যক্তিদের খুঁজতে ও উদ্ধার করতে হাজার হাজার উদ্ধারকর্মী, দমকলকর্মী, চিকিৎসাকর্মী, সামরিক ও বেসামরিক লোকজন আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।
ভূমিকম্প শুরু হলে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার ইদলিব শহরের বাসিন্দা সাংবাদিক মোহাম্মাদ কাজমুজ ভোরের আলো ফোটার আগেই পরিবার নিয়ে শহর ত্যাগ করেন। কাজমুজ বলেন, ‘সবাই ভবনে থাকা অবস্থাতে কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটা ভবন ধসে পড়তে দেখেছি। এর আগে গৃহযুদ্ধের সময় সিরিয়া ও রুশ সরকারের বোমা হামলার শিকার হয়েছিল এই ভবনটি। আশপাশের মানুষ আতঙ্কে সবকিছু রেখে বাসা থেকে এক কাপড়ে বেরিয়ে পড়েছিল রাস্তায়। মনে হচ্ছিল এ যেন কিয়ামত।
আশপাশের ভবন থেকে মৃতদেহ সরানো ও উদ্ধার কাজে স্বেচ্ছাসেবক দলের সঙ্গে প্রায় ১২ ঘণ্টা কাজ করেছেন কাজমুজ। তীব্র শীতের পরও ইদলিবের টিকে থাকা ভবনগুলোতে ফিরতে ভয় পাচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দারা। মৃত ও আহতের সংখ্যা এত বেশি যে হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতেও আর রোগী নেয়ার মতো অবস্থা নেই।
সিরিয়ার সীমান্তবর্তী শহর জিন্দিরেসের আলী বাতেল তার শহরকে বাঁচাতে অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার পরিবার, সন্তানেরা এখনও ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছে। ধ্বংসস্তূপের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাহায্যের জন্য আর্তনাদ শোনা গেলেও তাদের বাঁচানোরে মতো কেউ নেই, উদ্ধারের কোনো চেষ্টাই করা হচ্ছে না সেখানে।’ বেঁচে যাওয়া আরেক সিরীয় নাগরিক, ওসামা আব্দেল হামিদ বলেন, ‘ভূমিকম্পের সময় আমার পরিবার ঘুমাচ্ছিল। আমাদের ওপর দেয়াল ভেঙে পড়ে। তবে আমার ছেলে সেখান থেকে বের হতে পেরেছিল।’
ধ্বস্তূপের নিচে শত শত পরিবার : ভুমিকস্পে বিধ্বস্ত সিরিয়ার বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় হোয়াইট হেলমেটসে ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া শত শত পরিবার এখনো রয়েছে। তাদের রক্ষায় সময় ফুরিয়ে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন সিরিয়ার সরকারবিরোধী অংশের পরিচালিত বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান রাদ আল-সালাহ। বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় হোয়াইট হেলমেটস নামে পরিচিত সংগঠনের উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার জন্য জরুরি ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে সহায়তা প্রয়োজন, মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি এমনটাই বলেছেন।
রাদ আল-সালাহ বলেছেন, প্রতিটা সেকেন্ড জীবন বাঁচানোর, আমরা প্রতিটি মানবিক সংস্থার প্রতি জরুরি ভিত্তিতে এ বিপর্যয় মোকাবেলায় নামতে ও বস্তুগত সহায়তা দিতে আহ্বান জানাচ্ছি।
‘অলৌকিক নবজাতক’ : সিরিয়ায় ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে এক নবজাতককে জীবিত অবস্থায় পেয়েছেন উদ্ধারকারীরা। এখন এই নবজাতককে ‘অলৌকিক’ বলা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
ধ্বংসস্তূপ থেকে নবজাতকটিকে উদ্ধারের ভিডিও ইতোমধ্যে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাল হওয়া ছোট ভিডিওটিতে দেখা যায়, একজন উদ্ধারকারী নবজাতকটিকে দুই হাত দিয়ে ধরে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছেন।
নবজাতকটিকে উদ্ধারের একটি ভিডিও টুইটারে শেয়ার করেছেন হোসাং হাসান নামের এক সিরীয় সাংবাদিক। তিনি টুইটারে লিখেছেন, ধ্বংসস্তূপ থেকে এক প্রসূতিকে উদ্ধারের সময় শিশুটির জন্ম হয়।
ভূমিকম্পের পর থেকে ধ্বংসস্তূপে কেউ আটকে পড়ে আছে কি না, তা খোঁজা হচ্ছে। এক টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পাওয়া নবজাতকের এই দৃশ্য তার মাথা থেকে যাচ্ছে না। এই মর্মান্তিক ভূমিকম্পে তার হৃদয় ব্যথিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নবজাতককে সিরিয়ার আফরিন থেকে উদ্ধার করা হয়।
এর আগে ভূমিকম্পের ২২ ঘণ্টা পর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নারীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় নিহত মানুষের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে অনেক আগেই। শুধু তুরস্কেই ৩ হাজার ৪১৯ জন নিহত হয়েছে। আর সিরিয়ার সরকার ও বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে নিহত ১ হাজার ৬০২ জন। দুই দেশ মিলে ভূমিকম্পে নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৫ হাজার ২১ জনে দাঁড়িয়েছে। উভয় দেশে হাজারো মানুষ আহত হয়েছে।
ভূমিকম্পে উভয় দেশে ধসে পড়েছে হাজার হাজার ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধারে জোর তৎপরতা চলছে। উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
তুরস্কে বাংলাদেশ দূতাবাসের বিজ্ঞপ্তি : ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্কে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের অবস্থা জানাতে দেশটির আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগের আহ্বান জানানো হয়েছে। দূতাবাস থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এই আহ্বান জানানো হয়।
দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মো. রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আদানা, গাজিয়ানটেপ, মালাতিয়া, দিয়ারবাকির, হ্যাতায়, আদিয়ামান, ওসমানিয়া ও সানলিউরফায় বসবাসরত/অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের তাদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে দূতাবাসের নিম্নলিখিত নম্বরে যোগাযোগ/অবহিত করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছেÑ চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মো. রফিকুল ইসলাম, ফোন নম্বর +৯০-৫৪৬-৯০৫-০৬৪৭ এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. আবুল বাশার, ফোন নম্বর +৯০-৫৩৮-৯১০-৯৬৩৫।
এদিকে, ভূমিকম্পে তুরস্কের আজাজ শহরে নিখোঁজ দুই বাংলাদেশির মধ্যে নুর আলম নামের একজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় তাকে উদ্ধার করা হয়। জানা গেছে, নুর আলম বর্তমানে সুস্থ রয়েছেন এবং তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে, এখনো নিখোঁজ রয়েছেন গোলাম সাইদ রিংকু নামের এক বাংলাদেশি। তাকে এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তিনি বগুড়ার বাসিন্দা। রিংকু ও নুর আলম আজাজ শহরে বসবাস করছিলেন। ইস্তাম্বুলে বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নুরে আলম এসব তথ্য জানিয়েছেন।
১২৩ বছরের ঐতিহাসিক মসজিদ ধসে গেছে : শক্তিশালী ভূমিকম্পে লণ্ডভণ্ড হয়েছে সিরিয়া ও তুরস্ক। শত শত ভবন ধসে পড়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থাপনাও। মালতায়া প্রদেশের ইয়েনি মসজিদ তেমনই একটি স্থাপনা। ভয়াবহ ভূমিকম্পে ১২৩ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক মসজিদটিও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, মালতিয়া প্রদেশের প্রতীক হয়ে ওঠা মসজিদটি ২০২০ সালের ২৪ জানুয়ারি ইলাজিগের সিভরিস জেলায় সংঘটিত ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এবারের প্রথম ভূমিকম্পে ঐতিহাসিক মসজিদের বেশ ক্ষতি হয়। আর দ্বিতীয় দফায় ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পে মসজিদটি সম্পূর্ণরূপে ধসে যায়। ঐতিহাসিক মসজিদটি নাগরিকদের মধ্যে ‘তেজে মসজিদ’ নামেও পরিচিত ছিল। ইয়েনি মসজিদটি ১৮৯৪ সালের ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যাওয়া হাকি ইউসুফ মসজিদের জায়গায় নির্মিত হয়েছিল।
বাংলাদেশের উদ্ধারকারী দল যাচ্ছে : ভুমিকম্পে চাপা পড়া দুর্গতের উদ্ধার কাজে সহায়তা করতে বাংলাদেশের উদ্ধারকারী দল যাচ্ছে তুরস্ক। উদ্ধারকারী দলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের ৫ জন করে সদস্য থাকছেন। একই সঙ্গে জরুরি চিকিৎসাসেবা দিতে আরেকটি মেডিক্যাল টিম যাচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ও জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক সেহেলী সাবরীন গতকাল মঙ্গলবার এ তথ্য জানান। ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরানও এক বার্তায় জানান, বাংলাদেশ সরকার তুরস্ককে এই দুর্যোগে সহায়তা দিতে চেয়েছে। তারা বুধবার উদ্ধারকারী দল পাঠাতে পারে।
তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল ছিল সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে। ভূপৃষ্ঠের ১৭ দশমিক ৭ কিলোমিটার গভীরে ছিল এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। ভূমিকম্পের কারণে তুরস্ক ও সিরিয়ায় মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। ভূমিকম্পের পর বিভিন্ন দেশ এবং সংস্থা তুরস্ক ও সিরিয়ায় সহযোগিতার ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কাছে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন।
তুরস্ককে সাহায্য করবে যুক্তরাষ্ট্র : ভূমিকম্পে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া তুরস্ককে সব ধরনের সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার অফিসিয়াল টুইটারে বলেন, তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে ব্যাপক প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞে আমি গভীরভাবে শোকাহত। আমি আমার টিমকে নির্দেশ দিয়েছি, তারা যেন তুরস্কের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখে এবং প্রয়োজনীয় সকল সাহায্য প্রদান করে। পরে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। এতে বাইডেন বলেন, জরুরি ভিত্তিতে আমাদের টিম মোতায়েন করা হচ্ছে, যারা তুরস্কের অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানে সাহায্য করবে এবং ভূমিকম্পে আহত ও বাস্তুচ্যুত লোকজনকে সহায়তা করবে। এ ছাড়া মার্কিন সমর্থনে পরিচালিত মানবাধিকার সংগঠনগুলো সিরিয়ায় কাজ করবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে দু’টি অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল পাঠানো হচ্ছে। এর প্রত্যেক দলে ৭৯ জন করে সদস্য থাকবে। অপরদিকে পেন্টাগন ও ইউএসএইড তুর্কি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করছে। স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগ্লুর সঙ্গে কথা বলে দেশটিকে সব ধরনের সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন।
এ ছাড়াও ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্ক ও সিরিয়ার সহায়তায় এগিয়ে এসেছে আন্তর্জাতিক মহল। তুরস্কে উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে ইরাক। রেড ক্রিসেন্ট ও বাগদাদ সরকারের সমন্বয়ে জরুরি ত্রাণ সহায়তাও দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ শতাধিক সদস্যের উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে পুতিনের রাশিয়া। চারটি বিমানে পাঠানো হয়েছে জরুরি সহায়তা। ৪০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও অস্থায়ী হাসপাতালের উপকরণও আছে সেই বহরে।
তুরস্ক-সিরিয়া দুই দেশের জন্য ১০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা ঘোষণা করেছে অস্ট্রেলিয়া। বিপর্যস্ত সিরিয়াকে প্রায় ১ কোটি ৩৬ লাখ মার্কিন ডলার সমমূল্যের মানবিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। তুরস্ককে ছয় মিলিয়ন মার্কিন ডলার জরুরি সহায়তা দিয়েছে চীন। যুক্তরাজ্য, জার্মানি, হাঙ্গেরি, সুইজারল্যান্ড, গ্রিস, ফ্রান্স, সংযুক্ত আরব-আমিরাত, সউদী আরব, কাতার সব ধরনের সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। এরই মধ্যে তুরস্কের উদ্দেশ্যে রওনা করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা।
বিবিসি ও আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের দু’টি উদ্ধারকারী দল তুরস্কের উদ্দেশ্যে রওনা করেছে। এ দলে ৭০ সদস্য রয়েছেন। জার্মানির একটি বিশেষজ্ঞ উদ্ধারকারী দল তুরস্কের উদ্দেশ্যে রওনা করেছে। দেশটি উদ্ধার দলের সঙ্গে বিশেষ ডগ স্কোয়াডও পাঠিয়েছে। সোমবার রাতে বন এয়ারপোর্ট থেকে এ টিম তুরস্কের উদ্দেশ্যে রওনা করে। সুইজারল্যান্ডের একটি বিশেষজ্ঞ উদ্ধারকারী দল ও ডগ স্কোয়াড টিম জুরিখ বিমানবন্দর থেকে তুরস্কের উদ্দেশ্যে রওনা করেছে। ৫০ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ উদ্ধারকারী দলকে তুরস্কে পাঠিয়েছে হাঙ্গেরি। তাদের সঙ্গেও রয়েছে একটি বিশেষ ডগ স্কোয়াড। সোমবার রাতে বুদাপেস্ট বিমানবন্দর থেকে এ উদ্ধারকারী দল তুরস্কে যাত্রা করে। এ ছাড়া দেশটিকে উদ্ধারকারী দল ও ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে পাকিস্তান। উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে ভারতও।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।