রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
যমুনা নদীর তীব্র ভাঙনে চরাঞ্চলসহ নদী তীরবর্তী এলাকার বিভিন্ন গ্রামের কয়েকশ’ পরিবার জমিজমা, ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। নদীতে পানি কমা এবং বাড়ার সময় এ নদী ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে যায়। প্রতিবছরই এ ভাঙন দেখা দেয়। কিন্তু অদ্যবাধিও স্থায়ীভাবে এ ভাঙনরাধে প্রয়োজনীয় কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে প্রতিবছরই নদী ভাঙনের শিকার হন এসব অঞ্চলের লোকজন। এমতাবস্থায় নদীর পার দিয়ে স্থায়ীভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ অতিব জরুরি হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
শিবালয় মডেল ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম জানান, মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় দিনদিন ভাঙন বাড়ছে। গত এক বছরে শিবালয় উপজেলার আলোকদিয়া, মধ্যনগর, ত্রিশুন্ডি ও চর বৈষ্টমী ও চরশিবালয়ের এক অংশের কয়েকশ’ পরিবার নদী ভাঙনের কবলে তাদের ভিটে-মাটি হারিয়েছেন। এরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে নতুন করে বসতি স্থাপন করেছেন। ভুক্তভোগীদের অনেকেই জমিজমা হারিয়ে রাস্তার ধারে বা অন্যের জমিতে বসতি স্থাপন এবং দিনমজুরি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোন রকমে সংসার পরিচালনা করছেন।
এছাড়া একই কারণে চরম হুমকির মুখে পড়েছেন আরিচা ঘাট সংলগ্ন দক্ষিণ শিবালয়, অন্বয়পুর, এলাচীপুর ও আনুলিয়ার কয়েকশ পরিবার। বিগত বর্ষায় ওই গ্রামের নদীর পাড় এলাকার বেশ কিছু অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
ইতোমধ্যে নদী ভাঙন রোধে ভুক্তভোগী গ্রামবাসী এবং ৩নং শিবালয় মডেল ইউপির পক্ষ থেকে মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য এ এম নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের সাথে দেখা করে এসব ব্যাপারে কথা বলেছেন এবং ভাঙন প্রতিরোধে ব্যাবস্থা নেওয়ার জন্য তার নিকট লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
সরেজমিনে নদী ভাঙন কবলিত আলোকদিয়া, মধ্যনগর ও ত্রিশুন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার উল্লিখিত গ্রামের কয়েকশ পরিবার নদী ভাঙনে তাদের ভিটে বাড়ি হারিয়ে পাশের এলাকায় টংঘর করে আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া মধ্যনগর এলকার রুস্তম হাউলাদার হাই স্কুল, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এদিকে উপজেলার দক্ষিণ শিবালয়, এলাচিপুর, নিহালপুর, ঝড়িয়ারবাগ, অন্বয়পুর এলাকার নদী পারের বাড়ি-ঘর এবং ফসলি জমি বিগত বর্ষা থেকেই তীব্র নদী ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে। গত বর্ষায় এসব গ্রামের নদীর পার এলাকায় বিশাল পাড়ালের (খাড়া ঢাল) সৃষ্টি হয়ে ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে।
ভাঙন কবলিত এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শুস্ক মৌসুমে নদীর পার এলাকায় অবৈধ ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটা, নদীর মাঝে কাটার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু মাটি কাটা এবং ভাঙন কবলিত এলাকার অদূরে পশ্চিমে ও উত্তরে নদীর মাঝে চর পরা এবং বর্ষার সময় পানির স্রোত নদী পার এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ভাঙনের এ তীব্রতা বেড়ে যায়। ইতোমধ্যে স্থানীয় অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। আরিচা ঘাট থেকে নদীর পার দিয়ে দক্ষিণ শিবালয়ের রাস্তাটির অর্ধেক অংশ ইতোমধ্যেই নদী গর্ভে চলে গেছে। একইসাথে পাকা কবরসহ অনেক স্থাপনাই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
যমুনা পারে অবস্থিত দক্ষিণ শিবালয় জামে মসজিদ, আরিচার পিসিপোল কারখানা, কাশাদহ সেচ প্রকল্পের পানির পাম্প হাউজ মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে। অতিদ্রুততার সাথে ভাঙন রোধ করা না হলে এসব স্থাপনা যে কোন সময় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয়রা। যার মধ্যে সরকারের কয়েকশ কোটি টাকার পোল কারখানাও রয়েছে। নদীর পার এলাকা দীর্ঘ দিন ধরে প্রতি বছরই বর্ষায় এবং শুষ্ক মৌসুমে সীমিত আকারে ভাঙনের শিকার হয়। বর্ষায় পানি বাড়ার সময় এবং শুষ্ক মৌসুমে পানি কমার সময় যেভাবে নদী ভাঙন শুরু হয় তা বিগত ৫০ বছরেও দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন নদী ভাঙনের শিকার আমির চান, লোকমান, ইউনুস মাতব্বর, সন্তোষ মোল্লা, মোতালেব ও মঞ্জু মেম্বারসহ শতাধিক গ্রামবাসী।
বর্ষার সময় নদী ভাঙনের কারণে এ এলাকার লোকজন এখন চরম আতংকের মধ্যে বসবাস করছেন। এসব ভাঙন কবলিত নদী পাড় এলাকায় নদী শাসন করে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলে হয়তো নদী ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে। তা না হলে পূর্ব পুরুষের ভিটাবাড়ি, জায়গা জমি সব নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে জানালেন ভিটে হারা আমির চান মোল্লা।
তিনি আরো বললেন, এমন হলে অবশেষে গৃহহীন হয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়ে বসবাস করতে হবে। এমতাবস্থায় আরিচা ঘাট সংলগ্ন নিহালপুর এলাকা হতে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত নদী ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ নির্মান ও নদী শাসনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় অধিবাসীরা। নদী ভাঙন রোধে ভাঙন কবলিত এলাকাবাসী এবং শিবালয় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সংসদ সদস্য মানিকগঞ্জ-১ এবং পানি বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর বরাবর আবেদন করা হয়েছে।
দক্ষিণ শিবালয় গ্রামের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, নদীর মাঝে চরপড়ার কারণে পানির স্রোত পাড় এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় আমাদের এ গ্রামটিতে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু বাড়ি-ঘর, পাকা কবর ও আবাদী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন রোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে দক্ষিণ শিবালয় গ্রাম ও এর আশপাশের এলাকার গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থাপনাগুলো নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
স্থানীয় কৃষক আবুল হোসেন বলেন, আমার প্রায় ৬৫ বছর বয়স। এ বয়সে ছোট আকারে অনেক ভাঙন দেখেছি। কিন্তুু এবারের মতো ভয়ংকর ভাঙন বিগত ৫০ বছরেও দেখিনি। তিনি ভাঙনের বিষয়ে আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন।
মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য এ এম নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের কাছে আমাদের আকুল আবেদন অতি দ্রুত এই ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, আমরা শিবালয়ের বিভিন্ন স্থানে জিও ব্যাগ দিয়ে সাময়িকভাবে ভাঙন রোধ করেছি। স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ বিষয়ে আমাদের উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।