Inqilab Logo

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

শীত এলেই জমে ওঠে ভাসমান সবজিহাট

এ হাটের কৃষিপণ্য ইউরোপের বাজারেও রফতানি হয়

এস এম সোহেল বিল্লাহ, পিরোজপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা সদর থেকে ১৮ কিলেমিটার দূরে বেলুয়া নদী। বৈঠাকাটা বাজার ও বেলুয়া মুগারঝোর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে এই নদী। ৬৫ বছর ধরে স্থানীয় ২০ থেকে ২৫ গ্রামের কৃষকরা তাদের ক্ষেতের সবজি, ধান ও চাল কেনাবেচা করছেন এ ভাসমান সবজির হাটে।
সূর্যের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে নদীর বুকে নৌকায় বসে সবজির হাট। নৌকায় নৌকায় চলে শাক সবজির কেনাবেচা। দুপুরের আগেই আবার ভেঙে যায় হাট। পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার বৈঠাকাটা বাজার সংলগ্ন বেলুয়া নদীতে সপ্তাহের শনিবার ও মঙ্গলবার বসে এই ভাসমান হাট।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভোরে সূর্যোদয়ের পর বেলুয়া নদীর আশপাশ এলাকার খাল বেয়ে ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় সবজি নিয়ে হাটে যাচ্ছেন কৃষকরা। সকাল ৭টার মধ্যে হাট সরগরম হয়ে ওঠে। বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা ট্রলার ও বড় নৌকা নিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে কৃষিপণ্য কিনে নিচ্ছেন। হাটে শালগম, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, বেগুন, মরিচ, আলু, মিষ্টি কুমড়া, শিম, লাউ, করল্লা, কচু ও নানা জাতের শাক সবজি নিয়ে কৃষকেরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দর হাকাহাকি করছেন। সবজির পাশাপাশি হাটে বিক্রি হয় শাক সবজি ও ফুলের চারা। হাটের এক পাশে রয়েছে ধান, চাল, মুড়ি ও নারকেলের হাট।
স্থানীয় প্রবীণ ব্যবসায়ীরা জানান, পঞ্চাশ দশকের শুরুতে মুগারঝোর গ্রামের সেকান্দার আলী সরদার, মরহুম কেরামত আলী, দলিল উদ্দিন সরদার ও আবুল কাশেম তালুকদার বৈঠাকাটা বাজার প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৪ সালে বৈঠাকাটা বাজারের পাশে বেলুয়া নদীতে ভাসমান হাট বসা শুরু করে। দিনে দিনে হাটের ব্যাপ্তি বেড়ে চলছে। পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার কলারদোয়ানিয়া, মুগারঝোর, মনোহরপুর, গাঁওখালী, চাঁদকাঠি, ডুমুরিয়া, সাচিয়া, লড়া, বইবুনিয়া, পেনাখালী। নেছারাবাদ উপজেলার বলদিয়া, গগণ, মলুহার, কাটাখালী, উলুহার, জনতা। বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার বিশারকান্দি, উমারেরপাড়, উদয়কাঠী, কদমবাড়ি, বাইশাড়ি, চৌমোহনাসহ আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রামের কৃষক তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য এ হাটে বিক্রি করেন। পাইকারি ব্যবসায়ীরা হাট থেকে কৃষিপণ্য কিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে নিয়ে যান। এ হাটের কৃষিপণ্য ইউরোপের বাজারেও রফতানি হয়।
কৃষক আবু ছালেম বলেন, আমাদের গ্রামের প্রতিটি পরিবার তাদের ক্ষেতে শীতকালীন সবজি চাষ করে। কৃষক তার উৎপাদিত সবজি বেলুয়া নদীর ভাসমান হাটে বিক্রি করেন। এ হাটে কৃষিপণ্যের নায্য মূল্য পাওয়ায় আশপাশের গ্রামগুলোর কৃষকরাও এখানে পণ্য বিক্রি করতে আসেন। এখান থেকে কৃষিপণ্য কিনে পাইকাররা রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলা, উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করেন।
সবজির পাইকারি ব্যবসায়ী রহমান ব্যাপারী বলেন, বৈঠাকাঠা বাজার থেকে আমি সবজি কিনে ট্রলারে করে ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করি। প্রতি হাটে সাত আট লাখ টাকার সবজি কেনাবেচা হয়।
বৈঠাকাটা বাজার কমিটির সমন্বয়ক সুলতান মাহমুদ জানান, এ অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের অন্যতম বাহন ছিল নৌকা। প্রতিটি কৃষক পরিবারে নৌকা ছিল। বাজার প্রতিষ্ঠার পর আশপাশের গ্রামের কৃষকেরা নৌকায় করে তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য হাটে নিয়ে আসতেন। ক্রেতারা কৃষিপণ্য কেনার জন্য নৌকায় করে হাটে আসতেন। বৈঠাকাটা বাজার সংলগ্ন বেলুয়া নদীতে নৌকায় বসে চলত কেনাবেচা। এভাবে নৌকা থেকে নৌকায় পণ্য বেচাকেনা করতে করতে ভাসমান হাটের শুরু।
নাজিরপুর উপজেলার কলারদোনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাসনাত ডালিম বলেন, এ অঞ্চলের শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষ কৃষক। স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বৈঠাকাটা ভাসমান বাজারে খুচরা ও পাইকারি বিক্রি হয়। এ হাটের কৃষিপণ্য দেশের বিভিন্ন এলাকা ছাড়িয়ে বিদেশেও রফতানি হয়। সারা বছর ধরে হাটে কেনাবেচা হলেও শীত মৌসুমে হাটটি জমজমাট থাকে বেশি ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ