রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
ফুলবাড়ীয়া (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা : মহান বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধের আগুন ঝড়া দিনগুলো স্মরণ করে অনেকটা স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন ১১নং সেক্টরে রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার মো. ছোহরাব আলী (৬৫)। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পেরিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সনদ থাকার পরও ছোহরাব আলী আজ অব্দী পায়নি স্বীকৃতিটুকু, বঞ্চিত হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা বেতন ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে। তাই পরিবারের একমাত্র উপার্যনক্ষম এই বয়োবৃদ্ধের রক্তমাংস পানি করা পয়সায় চলে তার হতদরিদ্র পরিবারের ৭ সদস্যের ভরণপোষণের খরচ। মুক্তিযোদ্ধা ছোহরাব আলী বলেন, ডিসেম্বর এলেই সব মুক্তিযোদ্ধারা স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ে, ১৬ই ডিসেম্বর মহান জাতীয় বিজয় দিবসে সরকার যখন দেশের সমস্ত মুক্তিযোদ্ধাকে নিজ নিজ উপজেলায় সংবর্ধনা দেয়, সম্মান দেখায় সেই দিন আমার অনেক সহযোদ্ধারা সেই সংবর্ধনা নিতে যায়, আনন্দ করে, কিন্তু আমি সেই আনন্দের ভাগি হতে পারি না। আমার স্বীকৃতি নেই, এটা একজন রণাঙ্গনের যোদ্বার জন্য যে কতটা বেদনাদায়ক আমি বলে বুঝাতে পারবো না। ফুলবাড়ীয়া উপজেলার রাঙামাটিয়া ইউনিয়নের আনুহাদি গ্রামের কৃষক সাবান আলী ও আয়মনবিবির ঘরে জন্ম হয় মুক্তিযোদ্ধা ছোহরাব আলীর। স্কুলে পড়া অবস্থায় ছিলেন ছাত্র রাজনীতির সক্রিয় একজন কর্মী। মুক্তিযুদ্ধ প্রাক্কালে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা নিয়ে তার নেতাকর্মীরা যখন গ্রামে ঘুরে মানুষদের সংগঠিত করছিল তখন থেকেই যুবা ছফর আলীও ছিলেন তাদের সাথে, হয়ত অনুধাবন করতে পেরেছিল এবার যুদ্ধটা অনিবার্য হয়ে যাচ্ছে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সংশ্লিষ্ট ১১নং কাদেরিয়া বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করেন ছফর। যুদ্ধকালীন সময়ে তাদের প্রশিক্ষক আলী হোসেন লাল্টুর নেতৃত্বে ফুলবাড়ীয়া পাকহানাদার মুক্ত হওয়ার পেছনে চারটি বড় ধরনের অপারেশনে মুখ্য ভূমিকা রাখেন মুক্তিযোদ্ধা ছোহরাব আলী। মুক্তিযোদ্ধা ছোহরাব আলীর বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর অধিনায়ক মো. আতাউল গনী ওসমানী এবং ১১নং সেক্টরের আঞ্চলিক কমান্ডার কাদের সিদ্দিকীর স্বাক্ষরিত মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র রয়েছে যার ডিজি নং-৩৪৪৬৭। মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য গত ১ জুন ২০০৯ সালে প্রথম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বরাবর আবেদন করেন তিনি। পরে সেখান থেকে দীর্ঘদিন কোন উত্তর না আশায় অনেকটা আশাহত হয়ে পড়েন ছোহরাব। এ নিয়ে উপজেলা কমান্ডের কাছে গেলে তারা তাকে নানাভাবে হয়রানিসহ নগদ অর্থদাবি করেন বলে জানান মুক্তিযোদ্ধা ছোহরাব আলী। পরে সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী ২০১৪ সালের ১৯ জুন অনলাইনে পুনরায় আবেদন করেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধা ছোহরাব আলীর শিক্ষিত বেকার ছেলে রিপন বলেন, আমি অনার্স শেষ করে অনেক দিন ধরে বেকার হয়ে বসে আছি। সরকারি চাকরির বয়স প্রায় শেষ, আমার ছোট ভাইটাও ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিবে। আমার বাবা গেজেটভুক্ত না হওয়ায় আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত, এই বৃদ্ধ বয়সে আমার বাবাকে সাহায্য করতে পারছি না আমি। আক্ষেপ করে ছোহরাব আলী বলেন, আমি মনে করি এখনও প্রত্যেকটা মানুষ পরাধীনই রয়ে গেছে, আমরা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য যে সংগ্রাম, শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য যে লড়াই করেছিলাম তা আজও পরাধীনতার শৃঙ্খলেই রয়ে গেছে। এসবের অন্যতম কারণ স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি, এরা দেশের বিরোধিতা করায় বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস বিকৃত হচ্ছে। ফুলবাড়ীয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, সোহরাব আলী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তার কাছে ওসমানী সনদ রয়েছে। আশা করি, জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই কার্যক্রম চলাকালে ছোহরাব আলীর বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করবো। তিনি আরো জানান, এ পর্যন্ত ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় প্রায় ২ হাজার আবেদন জমা পড়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের। উল্লেখ্য, উপজেলা ও মহানগর পর্যায়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই এর নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় ৭ জানুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই অনুষ্ঠিত হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।