Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর জীবন সায়াহ্নে এসে আজ পত্রিকা বিক্রেতা

| প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. গোলাম ফারুক, দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) থেকে : দুপচাঁচিয়া উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান প্রামানিক (৭৪) জীবন সায়াহ্নে এসে সংসারের ঘানি টানতে আজ পত্রিকা বিক্রয় করছেন, হয়েছেন হকার। তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুপচাঁচিয়া উপজেলার বন্দরনগর তালোড়ার বালুকাপাড়ার মৃত রইচ উদ্দিনের পুত্র লুৎফর রহমান প্রামানিক ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরব গাথা মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। এর আগে পশ্চিম দিনাজপুর ভারতের কুরমাইলে প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মেজর (অব.) আবু তাহের সরকার ও ক্যাম্প ইনচার্জ অধ্যাপক আবু সাইয়িদ-এর নেতৃত্বে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হন। প্রশিক্ষণ ও অপারেশন ক্যাম্প কুরমাইন পশ্চিম দিনাজপুর ভারত হতে উক্ত মেজর (অব.) আবু তাহের সরকার ও অধ্যাপক আবু সাইয়িদ যুক্ত স্বাক্ষরে তাকে সনদপত্র প্রদান করেন। স্বাধীনতার পর ৪৫ বছর পার হলেও এই মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমানের নাম বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা গ্রেজেট বইয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ফলে মুক্তিযুদ্ধের সকল সুবিধা থেকে তিনি বঞ্চিত রয়েছেন। গত ২৪ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান প্রামানিক একান্ত এক সাক্ষাৎকারে “দৈনিক ইনকিলাব”-কে জানান, দেশ স্বাধীনতা অর্জনের জন্য জীবন বাজি রেখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী নওগাঁর বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুল জলিলের নেতৃত্বে সংগ্রাম করলেও জীবনযুদ্ধে তিনি আজ পরাজিত। সহায়-সম্বলহীন লুৎফর রহমান মুক্তিযুদ্ধের গ্রেজেটে তার নাম অন্তর্ভুক্ত না হওয়াই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গ্রেজেটে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করতে বিভিন্ন মহলে বিভিন্ন সময়ে ধরনা ধরে ব্যর্থ হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সনদপত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকলেও স্থানীয়ভাবে তার নাম না পাঠানের কারণে আজো তার নাম গ্রেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। বিবাহিত জীবনে স্ত্রী জরিনা বিবি (৬৮) চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইন্তেকাল করেছেন। ১ ছেলে ও ৭ মেয়ের জনক লুৎফর রহমান। তার ৭ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে একমাত্র ছেলে, ছেলের বউ, ২ নাতনি, ১ নাতি নিয়ে তার সংসার। ছেলে আব্দুল জলিল (৩০) সাংসারিক কাজ করে। তার আয় দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর। তাইতো আর্থিক সংকটের কারণেই জীবন সায়া‎েহ্ন এসে তাকে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। জীবিকা নির্বাহের প্রতিদিন সকালে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরে আসেন। স্থানীয় পত্রিকার এজেন্টের কাছে থেকে জাতীয় “দৈনিক ইনকিলাব”-সহ স্থানীয় অন্যান্য পত্রিকা ক্রয় করে উপজেলা সদর ও বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীবাহী বাসে যাত্রীদের কাছে তা বিক্রি করেন। এতে গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা আয় হয়। তাই দিয়ে এই দ্রব্যমূল্যের বাজারে চাল-ডাল কিনে ছেলে, ছেলের বউ, ২ নাতনি, ১ নাতি নিয়ে জীবন নির্বাহ করছেন। দেশ এই স্বাধীনতার সৈনিক লুৎফর রহমানের জীবনের শেষ ইচ্ছা, মুক্তিযদ্ধে অংশগ্রহণের সরকারিভাবে স্বীকৃতি পাওয়া। এজন্য তিনি বর্তমান স্বাধীনতার স্বপক্ষে সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধŸতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ