Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুই পক্ষের সমঝোতায় মাছ শিকারের মহোৎসব, সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব

| প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

পীরগঞ্জ (রংপুর) উপজেলা সংবাদদাতা : রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার চাপুনদহ বিলে বিত্তবানদের সৃজিত সমিতি কর্তৃক সর্বসাধারণের মাছ আহরণে বাধা দেয়ার জের ধরে কয়েকদফা সংঘর্ষের পর সমঝোতা করে এখন উভয়পক্ষ মাছ শিকারের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। উল্লেখ্য, বিত্তবানদের সমন্বয়ে গঠিত মৎস্যজীবী সমিতি কর্তৃক ওই বিলে সর্বসাধারণের মাছ আহরণে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি করায় আশপাশের কয়েকটি গ্রামে সাধারণ মানুষের মাঝে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল। এ নিয়ে কয়েকদফা সংঘর্ষও হয়। উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের হলে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেযারম্যান এনামুল হক শাহীন ব্যক্তিবিশেষ উদ্যোগ নেয়। এ সমঝোতার অংশ হিসেবে আজ একপক্ষ পরদিন আর অপরপক্ষ মাছ শিকারের সিদ্ধান্ত নেয়। আহরিত মাছ বিক্রিলব্ধ টাকা সমহারে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়া হয়। ফলে ওই এলাকার বিবদমান  দু’পক্ষ পর্যাপ্ত লাভবান হলেও সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ স্থানীয় প্রশাসন এব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। উল্লেখ, উপজেলার চতরা ইউনিয়নের ধর্মদাস মৌজায় ৬৬ একর জলাশয় বিস্তৃত চাপুনদহ বিল। জলাশয়টি মৎস্য অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হওয়ায় সরকারি বিধি মোতাবেক বিগত ২০০১ইং সালের ২৪ জুন হতে ১১ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত ধর্মদাস মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির অনুকূলে নির্দিষ্ট শর্তে সমিতির সভাপতি মো. আতোয়ার রহমানসহ অনান্য সদস্যদের নামে উক্ত বিল (জলাশয়) রক্ষণাবেক্ষণ, প্রতি বছর সরকারের রাজস্ব খাতে ১ লাখ টাকা জমাদানের শর্তে ১০ বছরের জন্য ইজারা দেয়া হয়েছিল। ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর খাস আদায়ের ভিত্তিতে শুধুমাত্র মৎস্যজীবীদের নিলাম ডাকে অংশগ্রহণের শর্ত আরোপ করে ২০১১ইং সালের ২৮ ডিসেম্বর উপজেলা ভূমি অফিসে নিলাম ডাকের পদক্ষেপ নেয়া হলে ডাকে সর্বোচ্চ দরদাতা ধর্মদাস মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্য মোফাজ্জল হোসেনকে ৬ হাজার টাকার বিনিময়ে ৩ মাসের জন্য পুনরায় লিজ দেয়া হয়। এরপর রংপুর জেলা প্রশাসন ২০১২ সালে ১৭ জানুয়ারি ৩ বছরের জন্য বিলটি নিলাম ডাকের পদক্ষেপ নেয়ায় উক্ত সমিতির সভাপতি মতিয়ার রহমান ওই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ওই বছরের ৯ জানুয়ারি উচ্চ আদালতে মামলা করেন। বিজ্ঞ আদালত কাগজপত্র পর্যালোচনা করে ওই বিল ইজারার বন্দোবস্তের উপর সাময়িক স্থগিতাদেশ দেন। পরবর্তীতে উচ্চ আদালত হতে ওই বিল যে অবস্থায় আছে ওই অবস্থায় থাকার আদেশ দেয়া হয়। এরপর ৫ম বারের মতো ওই বিল লিজের সময়সীমা বর্ধিত করা হয়। এরপর বিলটি আর লিজ দেয়া হয়নি। ফলে এটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়। এ অবস্থায় বিলে মৎস্যচাষ নিয়ে গ্রামবাসীদের মাঝে বিভক্তির সৃষ্টি হয়। একটি পক্ষ অভিযোগ করেছে, ধর্মদাস মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্যরা অধিকাংশই বিত্তবান। প্রতি বছর এরা ওই বিল থেকে ২৫/৩০ লাখ মাছ বিক্রির টাকা ভাগাভাগি করেন। অথচ লিজ না দেয়ায় গত কয়েক বছর ধরে সরকারের রাজস্ব খাতে কোনো প্রকার টাকা জমা দেয়া হচ্ছে না। ফলে প্রতি বছর সরকার লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এলাকার কেউ মাছ আহরণের জন্য বিলে যাওয়া মাত্রই সমিতির লোকজন তাকে মারপিট ও আটকপূর্বক নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ জরিমানা করে। যে কারণে এলাকায় আশপাশের গ্রামগুলোতে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল। বিলে সমিতির কোনো কর্তৃত্ব না থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন রহস্যজনক কারণে সাধারণ মানুষের অভিযোগ কর্ণপাত না করে উল্টো সমিতির পক্ষ নেয়ায় সাধারণ মানুষকে বিভিন্নভাবে অযথা হয়রানি করা হচ্ছিল। পীরগঞ্জ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাসুদ রানা এসব তথ্য অবগত হওয়া সত্ত্বে¡ও চোখকান বন্ধ করে রেখেছেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এ বিল জলমহালের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। কারণ এগুলো জেলা প্রশাসকের দফতর থেকে মনিটরিং করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ