Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ৩০ মে ২০২৪, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মাটির কান্না থামাতে পারছে না কেউ

ইসলামপুরের সর্বত্র মাটিকাটার উৎসব

ফিরোজ খান লোহানী, ইসলামপুর (জামালপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার পূর্বাঞ্চলীয়, মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলীয় সর্বত্রই চলছে অবৈধভাবে মাটিকাটার উৎসব। থামাতে পারেনি মাটির নিরব কান্না। অবাধে চলছে আবাদি জমির টপসয়েল নিধন। বিভিন্ন ইটভাটায়, পুকুর ভরাট, রাস্তা নির্মাণ কাজে চলছে মাটিকাটা প্রতিযোগিতার উৎসব। দেখার কেউ নেই। এভাবে মাটির উপরিঅংশ বা উর্বর মাটি (টপসয়েল) কেটে নিয়ে মাটির উর্বর শক্তি হ্রাস পেলে ফসল উৎপাদনের কমে যাবে। ফলে আগামীতে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার পূর্ব অঞ্চলীয় যোগালের চর, পলবান্ধা, গাইবান্ধা, চর গোয়ালিনী, চরপুটিমারী ইউনিয়নের বিভিন্ন ফসলি জমি থেকে ব্রহ্মপুত্রনদের পাড়ঘেষে সর্বত্রই মাটি কাটছে একদল মাটি খেকু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। জমির মালিকদের একদল মাটি ব্যবসায়ী দালাল গরীব নিরীহ জমির মালিকদের বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করে তাদের নিকট মাটি কিনে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করছে উচ্চ দামে। এবার ইটের বাজার বেশি হওয়ায় ইট ভাটার মালিকরা উচ্চ দামে মাটি ক্রয় করছে। এদিকে বর্তমান সরকারের ঘোষণা দেশের কোন জমি অনাবাদী থাকবে না। সরকারি এই বিধি নিষেধ কেউ তোয়াক্কা করছে না।
চর গোয়ালিনী ইউনিয়নের আনন্দবাজার, দশআনী নদীর ব্রিজ সংলগ্ন সরিষা খেত থেকে ভেকু মেশিন দিয়ে গিয়াস উদ্দিনের জমি থেকে মাটি কাটছে। এতে হুমকিতে রয়েছে চরপুটিমারী ইউনিয়নের সাজলের চর, চিনার চর, বেনুয়ার চর, শেরপুরের শ্রীবর্দী উপজেলাসহ বেশ কয়েকটি এলাকার যাতায়াতের একমাত্র দশআনী নদী ব্রিজটি।
গোয়ালের চর ইউনিয়নের সভুকুড়া গ্রামের রহম আলী নামে এক মাটি খেকু ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় ঘেষে দীর্ঘদিন ধরে মাটি কাটছে। ফলে ওই এলাকার একমাত্র শহীদ মেজর জেনারেল বীর উত্তম ব্রিজটি হুমকিতে রয়েছে। শুধু তাই নয় শহীদ মেজর জেনারেল বীর উত্তম ব্রিজের নিচ থেকে দীর্ঘ দিন ধরে মাটি উত্তোলন করছে একদল বালু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে থাকে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
সদর ইউনিয়নের পচাবহলা, পাঁচবাড়িয়া গ্রামের ২/৩ ফসলি জমি থেকে মাটির উপরি অংশ কেটে নিয়ে যাচ্ছে ইট ভাটায়। চিনাডুলী ইউনিয়নের বলিয়াদহ ব্রিজের আগারী থেকে যমুনার পাড় ঘেষে কথিত রুহুল আমীন নামে এক মাটি ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাটি কেটে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রশাসন কেন যে নিরব এলাকাবাসীর জিজ্ঞাসা।
নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের উলিয়াবাজার সংলগ্ন যমুনা নতুন চরে দেদারছে মাটি কাটছে। এতে হুমকিতে রয়েছে যমুনায় জেগে উঠা নতুন চরের বসতী। ওইসব এলাকার মানুষ আতংকের মধ্যে রয়েছে, যেভাবে নতুন চর থেকে মাটি কাটছে আগামী বর্ষা মৌসুমে আবার নতুন করে ভাঙনের সৃষ্টি হলে নতুন চরবাসীর মাথা গুজার ঠাই টুকু থাকবে না। এলাকাবাসীর অভিযোগ বার বার এলাকার চেয়ারম্যান ও প্রশাসনের নিটক বলেও কোন লাভ হচ্ছে না।
পাথর্শী ইউনিয়নের পশ্চিম গামারিয়া গ্রামের হামিদুর ও মুন্নাফ ফসলী জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে এভাবে মাটি কাটার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, মাটির উর্বর অংশ কাটার ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি ও পরিবেশের উপর অনেক প্রভাব পড়ায় মাটির অনেক ক্ষতি হয় এবং মাটি থেকে জৈব সারের পরিমাণ কমে যায়। পরবর্তীতে ওই জমিগুলোকে উর্বর করতে প্রায় ৫-৭ বছর সময় লাগে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ