Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভেজাল গুড় ও পাটালি ছড়িয়ে যাচ্ছে দেশব্যাপী

আশিকুর রহমান, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

দেশব্যাপী খেজুর গুড়ের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে গুড়ের সঙ্গে নিম্নমানের চিনি মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে ভেজাল খেজুর গুড়। এক শ্রেণির অর্থলোভী গুড় ব্যবসায়ী বা উৎপাদনকারী এ এলাকার সুস্বাদু গুড়ের সুনামকে পুঁজি করে খেজুর রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে ভেজাল খেজুর গুড় তৈরি করে তা অবাধে বাজারজাত করছেন। এসব চিনি মেশানো ভেজাল গুড় এখন উপজেলার হাটবাজারে সয়লাব হয়ে গেছে এবং এ গুড় চলে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র।
সরেজমিনে দেখা যায়, কালীগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর (মাঝপাড়া) গ্রামের মরহুম হাসেম মন্ডলের ছেলে বশির মন্ডল গুড় ব্যবসায়ী, তার নিজ বাড়িতে ভেজাল গুড় তৈরি করার জন্য মিনি কারখানা করেছেন। গুড়ের চেয়ে চিনির দাম কম হওয়ায় খেজুর গুড়ে চিনি মেশাচ্ছে গুড় ব্যবসায়ী বশির মন্ডল। গাছিরা ভোর বেলা গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্রহ করে তার বাড়িতে নিয়ে আসেন। এছাড়া তিনি কালীগঞ্জ ও কোটচাঁদপুরের ছাবদালপুর বাজার থেকে নিম্নমানের গুড় কিনে থাকেন। বড় তিনটি কড়াইয়ে রস ও গুড় জাল দেয়ার পর তা লাল বর্ণ হলেই তাতে চিনি ঢেলে দেয়া হয়। চিনিগুলো রসের সঙ্গে মিশে তৈরি হচ্ছে গুড়। এরপর ওই গুড়ে ফিটকারি মিশিয়ে গুড়ের রং উজ্জল করা হচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরি করা হচ্ছে গুড়ের মুচি, যাকে স্থানীয় ভাষায় খেজুর গুড়ের পাটালি বলে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ১১০ টাকা। অপরদিকে প্রতি কেজি গুড় বিক্রি হচ্ছে ২শ’ থেকে ২৩০ টাকা টাকা দরে। কেজি প্রতি গুড়ের মুচি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ৩শ’ টাকা। প্রতি কেজি চিনি থেকে প্রায় কেজির অধিক গুড় তৈরি হয়। সে হিসেবে চিনি মিশিয়ে অসাধু ব্যবসায়ী বশির মন্ডল প্রতি কেজি গুড়ে দ্বিগুণ লাভ করে থাকেন।
১৪ জন শ্রমিক ভেজাল গুড়ের কারখানায় কাজ করে থাকেন। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা এবং রাত ৯টা থেকে রাত ২টা অব্দি বাড়িতে খেজুর গুড়ের সঙ্গে নিম্নমানের চিনি, পুরাতন চিটাগুড় ও গুড়ের মতো বিশেষ রং দিয়ে ভেজাল গুড় তৈরি করছেন এবং পরদিন সকালে নিজস্ব পিকআপ করে তা বাজারজাত করছেন। দীর্ঘ দিন ধরে তিনি এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ভেজাল গুড় উৎপাদনকারী বশির মন্ডল বলেন, গুড়ের মধ্যে চিনি মেশালে তো বিষ হয়ে যাচ্ছে না। তারপরেও আপনারা যখন বলছেন তখন বন্ধ করে দেব।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আলমগীর হোসেন জানান, খেজুর রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে জাল দিলে সেটি বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। আর এই চিনি মিশ্রিত ভেজাল গুড় দিয়ে কোনো খাদ্যদ্রব্য তৈরি করে খেলে পেটের পীড়াজনিত নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ওই গুড় দিয়ে শিশুদের কোনো খাদ্য তৈরি করে খাওয়ালে শিশুরা লিভার ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, কারো বিরুদ্ধে ভেজাল গুড় তৈরির অভিযোগ পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ