Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

নামফলক অরক্ষিত, হয়নি ‘শহীদ ভবন’

| প্রকাশের সময় : ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এম এস এমরান কাদেরী, বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) থেকে : ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে শত্রুমুক্ত হয় দেশ। দক্ষিণ চট্টগ্রামও তার ব্যতিক্রম নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা তথায় এর অলিগলি বিভিন্ন জায়গা স্থাপনা ও মানুষের ভূমিকা ছিল দেখার মতো। মুক্তিযুদ্ধের সময় বোয়ালখালীর অসংখ্য যোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। দেশ স্বাধীকার এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ’৭১ সালের ২৮ আগষ্ট উপজেলার প্রধান হানাদার ক্যাম্পে আক্রমণ করতে গিয়ে যারা শহীদ হয়েছেন তৎমধ্যে উল্লেখযোগ্য এস এম ওয়াজেদ, রেজাউল করিম বেবী ও ওস্তাদ ফজলুল হক, দুদু মিয়া, মাষ্টার নলীনি দাশগুপ্ত, অজিত বিশ্বাস, মনোরঞ্জন শীল, রণজিত মজুমদার, সমীর মজুমদারসহ আরো অনেকে। এছাড়া বোয়ালখালীতে হানাদারদের ব্রাশ ফায়ারে পুরুষ-মহিলা শিশু-বৃদ্ধ থেকে শুরু করে অসংখ্য মানুষ এ শহীদের তালিকায় রয়েছে। তাঁদের স্মরণে প্রথম স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয় বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী কঞ্জুরীর গ্রামে। তখন এর নাম করণ করা হয় “শহীদ ভবন” হিসেবে। এর নাম “শহীদ ভবন” হলেও বাস্তবে এখানে কোন ভবন নেই। উপজেলার প্রথম নির্মিত এ স্মৃতিসৌধ মুক্তিযুদ্ধের ৪৫ বছর পরেও এর যতœ নিতে এগিয়ে আসেননি কেউই। বোয়ালখালীর এ সকল জনপথ দিয়ে চলাচলের সময় ৭১’-এর মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বাঙালি জাতির সূর্য সন্তানদের অরক্ষিত এ স্মৃতিসৌধ দেখলে আজো মন কাঁদে। তবে বোয়ালখালী সারোয়তলী ইউনিয়নের কঞ্জুরী এলাকায় নির্মিত প্রথম ‘শহীদ ভবন’ নামের স্মৃতিসৌধ এলাকায় ১৯৮৯ সালে ২২ ডিসেম্বর তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহাবুদ্দিন খান এটিকে প্রকৃত ‘শহীদ ভবন’ করার লক্ষে এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু এরপর ২২ বছর অতিবাহিত হলেও ভিত্তিপ্রস্তরেই সীমাবন্ধ রয়েছে শহীদ ভবন প্রকল্পটি। স্বাধীনতার ৪৫ বছরে এ দেশে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলেন আর বিপক্ষের শক্তি বলেন রাজত্ব করে তাদের অনেকে অনেক কিছুর মালিক হলেও কোনই পরিবর্তন বা সংস্কার হয়নি উপজেলার প্রথম স্মৃতি এ স্তম্ভের। রক্ষণাবেক্ষণেরও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি সরকারিভাবে। কঞ্জুরী এলাকার মুক্তিযোদ্ধা সুজিত নাগ আক্ষেপ করে বলেন, আমরা নিজেদের যশ খ্যাতি, কোটিপতি, প্রতাপশালী ও ক্ষমতার মালিক বনার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি। যুদ্ধ করেছিলাম মুক্তির জন্য, মা-বোনদের ইজ্জত ও দেশের মাটিকে রক্ষার জন্য। তিনি আরো বলেন, ভবন আমরা করতে পারিনি, তবে এই ভবন স্তম্ভের মাঠে প্রতি বছর এলাকাবাসীর উদ্যোগে আয়োজন করা হয়, অমর একুশ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান, গ্রামীণ লোকজ মেলা ও খেলাধুলাসহ আলোচনা সভার। এতে পদচারণা ঘটে দেশের বিখ্যাত নাঠ্যজন, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের মতো গণ্যমান্য ব্যক্তিবগের্র। স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্মৃতিটুকু ধরে রেখেছি। পর্যাপ্ত জায়গা থাকার পরও একটি ভবন না হওয়ায় যে কোন সময় এ স্মৃতি মুছে যাওয়ার আশংকা করছেন তারা। আমাদের সীমিত সাধ্যের মধ্যেই আমরা নামটিকে ৪৬ বছর ধরে আঁকড়ে রেখেছি। এখন সময়ের দাবি একটি ভবনের। যেখানে থাকবে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ও দেশ মাতৃকার রক্ষায় যারা জীবন দিয়েছে ও যুদ্ধে গিয়েছেন তাদের স্মৃতি। তা দেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবে আগাম প্রজন্মরা। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী বাংলার স্বাধীকার আন্দোলনের অগ্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা দেশরতœ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ