পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কতিপয় বেঈমান নাস্তিক-মুরতাদ মুসলমানদের ঈমান-আক্বিদা ধ্বংসের জন্য শিক্ষা সিলেবাসে ডারঊইনের মতবাদ চালু এবং ইসলামী শিক্ষাকে সঙ্কোচিত করেছে। ওই নাস্তিকরা বানর থেকে মানুষের সৃষ্টি বলে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করে আল্লাহর সাথে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। নাস্তিক্যবাদী শিক্ষা প্রণয়নকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারপূর্বক ফাঁসি দিতে হবে। মানবতাবিরোধীদের ফাঁসি হলে আল্লাহ বিরোধী শিক্ষা সিলেবাস প্রণয়নকারীদের ফাঁসি হবে না কেন? আল্লাহ ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে পাঠিয়েছেন। ইসলামী জীবন বিধানের ওপর আঘাত করার ক্ষমতা কাউকে দেয়া হয়নি।
পবিত্র কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক শিক্ষা সিলেবাস অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। বিতর্কিত শিক্ষা সিলেবাস প্রণয়নকারীদের দ্রæত গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় সারাদেশে ঈমানদার মুসলমানদের হৃদয়ে আগুনের দাবানল দাউ দাউ করে জ্বলে উঠবে। যা কেউ নেভাতে পারবে না। ইসলামবিরোধী শিক্ষা সিলেবাস বাতিল, দুর্নীতির মূলোৎপাটন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং ইসলামী হুকুমত কায়েমের দাবিতে গতকাল শনিবার বাদ যোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেইটে ইসলামী ঐক্যজোট আয়োজিত বিক্ষোভ-সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। নাস্তিক্যবাদী শিক্ষা সিলেবাস প্রণয়নে জড়িত থাকার অভিযোগ সমাবেশে শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনির পদত্যাগের দাবি জানানো হয়। দাবি মেনে নেয়া না হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেয়া হবে বলেও ঘোষণা দেয়া হয়। নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা বুলেট বোমাকে ভয় করি না। ঈমানের তাগিদে রাজপথে নেমে এসেছি। অবিলম্বে ইসলাম বিরোধী শিক্ষা সিলেবাস বাতিল করুন না হয়, মুফতি আমিনীর সৈনিকরা গর্জে উঠবে। নেতৃবৃন্দ বলেন, মহান আল্লাহর সাথে সাংঘষিক বিতর্কিত শিক্ষা সিলেবাস প্রণয়নকারী নাস্তিকরা সময় থাকতে এদেশ ছেড়ে ভিনদেশে চলে যাও। নাস্তিক মুরতাদদের মুসলমানের দেশে ঠাঁই দেয়া হবে না। আল্লাহ বিরোধী শিক্ষা সিলেবাস তৈরিকারীদের এদেশে কবর রচনা করা হবে। এদেশের কোমলমতি শিশুদের বানরের সন্তান বানানোর ষড়যন্ত্র এবং হিযাব সর্ম্পকে বিদ্বেষ ছড়ানোর পরিণাম শুভ হবে না।
নাস্তিক্যবাদী শিক্ষা সিলেবাস বাতিল এবং এতে জড়িতদের শাস্তি দেয়া না হলে আগামী জাতীয় নির্বাচন হতে দেয়া হবে না বলেও সমাবেশে হুমকি দেয়া হয়। দলের চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনীর সভাপতিত্বে এবং মাওলানা আলতাফ হোসেনের পরিচালনায় এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, দলের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা ফজলুর রহমান, মুফতি তৈয়্যব হোসাইন, মাওলানা আবুল কাসেম, অধ্যাপক শেখ লোকমান হোসেন, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুফতি আব্দুল কাইয়ূম, মুফতি জিয়াউল হক মজুমদার, মাওলানা জোবায়ের কাসেমী, হাফেজ মাওলানা ইদ্রিস, মাওলানা আবুল খায়ের বিক্রমপুরী, মুফতি হেদায়েতুল্লাহ গাজী, মাওলানা খোরশেদ আলম, মুফতি আব্দুল কাইয়ূম ও মুফতি নাসির উদ্দিন।
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী বলেন, বিতর্কিত শিক্ষা সিলেবাসের মাধ্যমে দেশের নতুন প্রজন্মকে নাস্তিক ও পৌত্তলিক বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে। পাঠ্য বইয়ে নগ্ন ছবি, পর্দা, দাঁড়ির বিরোধিতা, মূর্তিসহ ডারউইনের বিবর্তনবাদ ও হিন্দুত্ববাদ সংযোজন করে মুসলিম শিক্ষার্থীদের ঈমান হারা করার পাঁয়তারা চলছে। স্পষ্ট বলছি, ৯২ ভাগ মুসলমান দেশের পাঠ্য পুস্তকে ডারউইনের মতবাদ দেখতে চায়না, তারা দেশীয় ও ধর্মীয় সংস্কৃতি, সভ্যতা ও ইতিহাসের সঠিক উপস্থাপন দেখতে চায়।
তিনি বলেন, অবিলম্বে ইসলামবিরোধী বিতর্কিত শিক্ষা সিলেবাস বাতিল করতে হবে। বিরানব্বই ভাগ মুসলমানের চিন্তা-চেতনা অনুযায়ী আলেমদের তত্ত¡াবধানে নতুন শিক্ষা সিলেবাস প্রণয়ন করতে হবে। একই সঙ্গে ইসলাম বিরোধী এই সিলেবাস প্রণয়নে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, অন্যথায় ইসলামী ঐক্যজোট বৃহত্তর কর্মসূচির মাধ্যমে নাস্তিক-মুরতাদদের দেশ থেকে বিতারিত করে ছাড়বে ইনশাআল্লাহ। তিনি ইসলামী দলগুলোর নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ওমুক সরকার, তমুক সরকারের আমাদের প্রয়োজন নেই। সব সরকার আমরা দেখেছি। এখন প্রয়োজন ইসলামী সরকার। প্রয়োজনে নেতৃত্ব ছেড়ে দেবো, নেতৃত্ব নেন। ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েম করার জন্য যা যা প্রয়োজন আপনারা পদক্ষেপ নিন। কর্মী হিসেবে মাঠে থাকব ইনশাআল্লাহ। সমাবেশে ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ইসলামের মৌলিক বিধি-বিধানের উপর বিশ^াস স্থাপন করা অপরিহার্য। বর্তমান শিক্ষা সিলেবাসে এই বিধি-বিধানের উপর চ‚ড়ান্তভাবে আঘাত করা হয়েছে। বিবর্তনবাদের মত কুফুরি আক্বিদাকে শিক্ষা কারিকুলামের অন্তর্ভুক্ত করে আগামী প্রজন্মকে নাস্তিক্যবাদি রূপে গড়ে তুলতে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ভারতবর্ষের মুসলিম শাসকদের নিচু, হীন এবং নিপীড়নকারী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অন্যদিকে মুসলিম শাসকদের হাত থেকে যারা ক্ষমতা চুরি করেছিল তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। যারা এই ধরনের নোংরা চিন্তা-ধারণা লালন করে, তারা সরকার ও জনগণের বন্ধু হতে পারে না। মুফতী ফয়জুল্লাহ বলেন, সিলেবাসে ইসলামের ফরজ বিধান পর্দাকে অবমাননা করা হয়েছে। দাঁড়ির বিরুদ্ধে বিদ্রæপ করে মহানবী (সা.)-এর সুন্নতের প্রতি চরম দৃষ্টতা প্রদর্শন করা হয়েছে। সমকামিতাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। আমরা মনে করি, বাংলাদেশে ইসলামবিরোধী শক্তির এহেন অপকর্মে পৃথিবীর দুইশত কোটি মুসলমানের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
তিনি বলেন, পাঠ্য বইয়ের পাতায় পাতায় ইসলাম বিদ্বেষ ও ইসলামী নিদর্শনের অবমাননা করে নাস্তিক্যবাদী অপশক্তি আল্লাহর বিরুদ্ধে চূড়ান্তভাবে মোকাবেলার ঘোষণা দিয়েছে। আমরা মনে করি, মুসলমানের ট্যাক্সের টাকায় ছাপা নৈতিকতা ও আদর্শ বিবর্জিত এসব বই সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে চলতে পারে না। দ্রæত এসকল বই বাজেয়াপ্ত করতে হবে। যারা এই ধরনের ইসলাম বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়ে নাস্তিক্যবাদী প্রজন্ম তৈরি ষড়যন্ত্র করছে এবং ধর্ম অবমাননা করেছে অবলিম্বে তাদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অন্যথায় দেশে আন্দোলনের দাবালন জ¦লে উঠবে। তিনি দেশের উলামায়ে কেরাম ও দ্বীনদার জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উপর বেঈমানদের নজর পড়েছে। মুসলমানদের ঈমান এবং আক্বিদাহকে হেফাজত করতে এগিয়ে আসতে হবে। যারা কোমলমতি মুসলিম শিশুদের বেঈমান বানাতে চায় তাদের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। দেশের মসজিদ, মাদরাসা, খানকাসহ প্রতিটি অঞ্চলে উলামায়ে কেরামকে এই বিতর্কিত সিলেবাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে, জনগণকে সচেতন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, সরকারকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং প্রতিটি থানায় থানায় যে সব মডেল মসজিদ হচ্ছে সেখানে দেশের হক্কানী আলেমদের ইমাম ও খতিব নিয়োগ দিতে হবে। পরে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
বাতিল প্রতিরোধ পরিষদ : বাতিল প্রতিরোধ পরিষদের সভাপতি হাজী জালাল উদ্দিন বকুল এক বিবৃতিতে বলেন, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের শত্রæ এবং ভিন দেশের দালালচক্র শিক্ষা সিলেবাসে কোরআন ও ইসলামবিরোধী ধারা যুক্ত করে মুসলমানদের ঈমানী চেতনায় মারাত্মক আঘাত হেনেছে। এসব নাস্তিক দালাল চক্রের বিষ দাঁত উপড়ে ফেলতে হবে। তিনি বলেন, পবিত্র কোরআন হাদিসে স্পষ্ট লেখা আছে আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) থেকেই মানব জাতির বংশ বিস্তার হচ্ছে। মুসলমানদের ঈমানী চেতনা ধ্বংস করার হীন উদ্দেশ্যেই ব্রা²ান্যবাদী চক্র গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কোরআন বিরোধী ডারউইনের বিবর্তনতত্ত¡ শিক্ষা সিলেবাসে যুক্ত করেছে। কোন বিবেকবান মানুষ নিজেদের সন্তানদের বানরের জাতি পরিচয় দিতে ডারউইনের মতবাদ শিখতে দিতে পারেন না। তিনি বলেন, অবিলম্বে বিতর্কিত ইসলামবিরোধী সিলেবাস বাতিল এবং দায়ি ব্যক্তিদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
নাস্তিক-মুরতাদ নির্ম‚ল কমিটি ঃ নাস্তিক-মুরতাদ নির্মূল কমিটির সভাপতি মুফতি সুলতান মহিউদ্দীন বলেছেন, কতিপয় নাস্তিকচক্র ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই বিতর্কিত ডারউইন তত্ত¡সহ বিভিন্ন ইসলামবিরোধী বিষয় সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করে প্রজন্মকে নাস্তিক বানানোর গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। নাস্তিক্যবাদের আস্ফালন কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের বাংলাদেশের শিক্ষা সিলেবাস এদেশের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস ও চিন্তা চেতনার অনুক‚লেই থাকতে হবে। চলমান পাঠ্য পুস্তক থেকে বিতর্কিত লেখা বাদ দিতে হবে। সিলেবাস নির্ণয় কমিটিতে বিজ্ঞ আলেমদের সমন্বয়ে যোগ্য লোকদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
গতকাল শনিবার বিকেলে নাস্তিক-মুরতাদ নির্মূল কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এক বৈঠকে সভাপতির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা আবুল হাসান কাসেমী, মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক, মাওলানা তাসলিম হাসান, মাওলানা মাহবুবুর রহমান।
ইসলামিয়া আরাবিয়া মাদরাসা মোহাম্মদপুর ঃ ঈমানী তাকওয়া অর্জনে মুসলমানদের সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। চলতি বছর পাঠ্য পুস্তকে ইসলাম বিরোধী বক্তব্য সংযুক্ত করে মুসলমানদের হৃদয়ে আঘাত হানা হয়েছে। শিক্ষা সিলেবাসে নাস্তিক্যবাদী শিক্ষা জুড়ে দিয়ে ঈমানী চেতনা ধ্বংসের চক্রান্ত করা হয়েছে। অবিলম্বে নাস্তিক্যবাদী শিক্ষা সিলেবাস বাতিল করে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে বাস্তবমুখী উদ্যোগ নিতে হবে। গতকাল ঢাকার মোহাম্মদপুরস্থ চাঁদ উদ্যান পুলিশ ফাঁড়ি রোডে ইসলামিয়া আরাবিয়া মাদরাসা ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে ওয়াজ মাহফিলে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। আলহাজ হযরত মাওলানা আব্দুল অহীদ কাসেমীর সভাপতিত্বে এতে আরো বক্তব্য রাখেন, আত- তাইয়িবা ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষক শেখ রুবেল, মুফতি হিফজুর রহমান, মুফতি আব্দুর রাজ্জাক কাসেমী, মুফতি জাবের হোসাইন কাসেমী, মাওলানা মাহদি হাসান(সিদ্দিকী) ও মাওলানা আব্দুর রহীম আল-হোসাইন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।