Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হাতিয়ায় বিদ্যুতের নাজুক অবস্থা

৮টির মধ্যে ৫টি জেনারেটর বিকল

মোহাম্মদ আকতার হোসেন, হাতিয়া (নোয়াখালী) থেকে | প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহের বেহাল দশা। বিদ্যুৎ বিভাগের অনিয়মের কারণে গত কয়েক মাস ধরে বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন প্রায় সাড়ে ছয় হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ও আবাসিক প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান।
চরকৈলাশ গ্রামের বিদ্যুৎ গ্রাহক আমিনুল অভিযোগ করে বলেন, লাইনম্যানগণ ও মাস্টার রোলে কর্মরত হাতিয়া বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারীরা বড় ক্ষমতাধর কর্মকর্তা! টাকা ছাড়া এ অফিসে ফাইল নড়েনা।
হাতিয়ায় বিদ্যুৎ বিভাগের ৮টি জেনারেটরের মধ্যে ৫টি জেনারেটর বিকল। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে আদালতের নির্দেশ থাকলেও বর্তমানে ১৮ ঘণ্টার পরিবর্তে দিনেরাতে মাত্র ২ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে না। বিদ্যুৎ অফিসের কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে শহরের আবসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ফল দোকান, সেলুন দোকান, মোবাইল দোকান অটোরিকশা চার্জসহ বিভিন্ন জোনে অবৈধভাবে মিটার বাণিজ্য, ভিআইপি লাইনসহ সাইট কালেকশনের মাধ্যমে প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকলেও মিটার বাণিজ্য বন্ধ নেই। পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোন মাথা ব্যাথা নেই বলেই মনে করছেন সচেতন মহল। ফলে হাতিয়ার জনগণ, স্কুল কলেজের ছাত্র/ছাত্রীদের লেখাপড়া, ব্যবসা বাণিজ্যে চরম বিঘœ ঘটছে। তার পাশাপাশি হাতিয়া থেকে সাংবাদিকদের সংবাদ প্রেরণে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, হাতিয়া পৌর এলাকায় প্রায় ২৫০০ কিলোওয়ার্ড বিদ্যুৎ চাহিদা রয়েছে। ৫টি জেনারেটর দিয়ে প্রায় ১২০০ কিলোওয়াট উৎপাদন হতো। এতে প্রতিদিন ২/৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যেতো। কিন্তু সম্প্রতি একের পর এক জেনারেটর অচল হয়ে পড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহে নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়। বর্তমানে মাত্র ৩টি জেনারেটর সচল রয়েছে। তা দিয়ে মাত্র ৯শ’ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। এতে কার্যত হাতিয়া বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম।
নাম প্রকাশে অনিশ্চুক একাধিক গ্রাহক এ প্রতিবেদককে জানান, প্রতি বছর জেনারেটর মেরামতের নামে লাখ লাখ টাকা বরাদ্ধ হয়। নাম মাত্র টেন্ডার দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়া বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা আত্মসাৎ করে। আর ভোগান্তি পোহাতে হয় হাতিয়ার সাধারণ গ্রাহককে। বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেও ভুতুড়ে বিল ও মিনিমাম চার্জ পরিশোধ করতে হয় হাতিয়ার সাধারণ গ্রাহকদের। পূর্বের ২টি জেনারেটরের ও পরের ২টি নতুন জেনারেটর আনা হলেও কিছু কিছু এলাকায় গত কয়েক দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে বলে উপজেলা বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে। পুরাতন ইঞ্জিন দিয়ে যে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় তা দিয়ে উপজেলা পরিষদ এলাকা এবং ভিআইপি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। আর পুরো এলাকায় লোডশেডিং করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। বর্তমানে হাতিয়ায় বিদ্যুৎ গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৬,৪৩৪ জন। শুধু পৌর এলাকায় ২,৩০০ গ্রাহক রয়েছেন। এর মধ্যে ১,৬০০ আবাসিক গ্রাহক এবং ৭০০ বাণিজিক গ্রাহক।
অভিযোগ রয়েছে লাইনম্যান ও মাস্টার রোলে কর্মরত বিদ্যুৎকর্মীদের অনিয়মের কারণে সারা বছর সাধারণ গ্রাহক, স্কুল কলেজের ছাত্র/ছাত্রীদের লেখাপড়াসহ দোকানদারদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও টিভি কম্পিউটার বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে সাংবাদিকদের সংবাদ সরবরাহ।
হাতিয়া উপজেলা অফিসার্স ক্লাব মার্কেটের সাঈদ টেইলার্সের প্রোপাইটর মোহাম্মদ আলী ও হাতিয়া দ্বীপ নিউমার্কেটের স্টাইল টেইলার্সের প্রোপাইটর মো. সফিক উদ্দিন বলেন, বিদ্যুৎ ছাড়া মেশিনগুলো চলেনা, বিদ্যুৎ প্রায় না থাকায় আমরা ও আমার কর্মচারীরা বসে বসে অলস সময় কাটাচ্ছি। কর্মচারীদের বেতন, ঘরভাড়া কারেন্ট বিল ও পরিবারের খরচ চালাতে গিতে দিন দিন আমরা নিঃশ্ব হয়ে পড়ছি।
এদিকে হাতিয়া উপজেলায় ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুতের দাবি জানিয়েছেন হাতিয়া ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনসাধারণ। তারা বলেন, হাতিয়া উপজেলায় দ্রুত সময়ের মধ্যে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুতের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী কাছে জোর দাবি করেছি। হাতিয়া চাইনিজ এন্ড ফাস্টফুড রেস্টুরেন্টের মালিক জানান, গত কয়েকদিন বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে আমার ফ্রিজে থাকা মাছ, গোস্ত, মসলাসহ প্রায় ৩০ হাজার টাকার জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গিয়েছে। একই দুর্ভোগের কথা জানালেন মোহাম্মদিয়া হোটেলের মালিক।
হাতিয়ায় বড় ফলের আড়তদার জাকের হেসেন ও আকরাম হোসেন বলেন, আমরা ঢাকা থেকে ফল এনে এখানে ফ্যানের মাধ্যমে কুলিং সিস্টেম করতে হয়। গত কয়েকদিন কারেন্ট না থাকায় আমার প্রায় ৫ লক্ষ টাকার উপরে ফল পচে গেছে।
গৃহবধূ জাহেদা বেগম মেরী ও হাসিনা বেগম জানান, হঠাৎ করে তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে তাদের ফ্রিজে রক্ষিত মাছ, মাংস ও জরুরি ওষুধ নষ্ট হয়ে গেছে। এভাবে হাতিয়া উপজেলা প্রতিটি বাসা-বাড়িতে প্রতি দিন ফ্রিজে হাজার হাজার টাকার মালামাল নষ্ট হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. খাদিজা বেগম বলেন, বিদ্যুতের অভাবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি প্রসূতি অপারেশন বন্ধ রয়েছে। তীব্র লোডশেডিংয়ে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড হাতিয়ার আবাসিক প্রকৌশলী (আরই) মো. মশিউর রহমান জানান, হাতিয়া উপজেলার পৌর এলাকায় দুই হাজার ৩০০ গ্রাহক রয়েছেন। এর মধ্যে এক হাজার ৬০০ আবাসিক গ্রাহক এবং ৭০০ বাণিজিক গ্রাহক। হাতিয়ায় মোট ২.৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। ৩টি জেনারেটরের মধ্যে ২টি জেনারেটর বিকল হওয়ায় লোডশেডিং হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ২টি নতুন জেনারেটর আনা হলেও ২টি জেনারেটর মধ্যে ১টি প্রথম থেকে নষ্ট। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ১টি ইঞ্জিন মেরামত করা হলে কিছুটা লোডশেডিং কমবে বলে আশা করছি। জেনারেটর মেরামতের নামে টাকা আত্মসাতের বিষয় অস্বীকার করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ