Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে ধীরগতি

৩০ দিনে শুরু ২৪ বাঁধের কাজ

আমির হোসাইন, শাল্লা (সুনামগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

সুনামগঞ্জের শাল্লায় ফসল রক্ষা বাঁধ মেরামতের জন্য ধীরগতিতে চলছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনের কাজ। পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৭-এর নীতিমালা অনুযায়ী গত ১৫ নভেম্বরের মধ্যে পিআইসি গঠন এবং ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা। নির্ধারিত সময়ের ১ মাস পার হলেও এখনো হাতেগোনা কয়েকটি বাঁধ ছাড়া কাজই শুরু হয়নি।
একাধিক কৃষকের অভিযোগ লোক দেখানোর জন্য নামে মাত্র কয়েকটি বাঁধের কাজ উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর সামান্য মাটি ভরাটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে বাঁধ নির্মাণের কাজ। এদিকে ৩০দিন পেরিয়ে গেলেও ১২৭টি প্রকল্পের মধ্যে মাত্র ২৪টি বাঁধের কাজ চলমান। ১মাসেও শতাধিক পিআইসি গঠন না হওয়ায় প্রতিবছরের মতো এবারো স্থানীয় কৃষক আতঙ্কিত।
তাদের অভিযোগ, বাঁধ নির্মাণকাজ প্রতি বছর বিলম্বে শুরু হয়। শেষে তাড়াহুড়া করে বাঁধ মেরামত করতে গিয়ে দায়সারাভাবে কাজ করা হয়। ফলে বাঁধের কাজ হয় লেজেগোবরে। যার ফলে সামান্য পানির চাপেই ভেঙে যায় বাঁধ। এভাবে দেরিতে কাজ শুরু হওয়ায় প্রতি বছরই একমাত্র বোরো ফসল থাকে চরম ঝুঁকির মুখে।
এদিকে হাওরের পানি দ্রুত কমে যাওয়ায় এবছর ২ সপ্তাহ আগেই বোরোজমিতে রোপণের কাজ শুরু হয়েছে। গত ১৪ জানুয়ারি সরেজমিনে দেখা যায় ঘন কুয়াশা ও হাড় কাঁপানো ঠান্ডা উপেক্ষা করেই জমিতে কাজ করছেন কৃষকরা। ইতোমধ্যে নিম্নাঞ্চলের বোরোজমিগুলোও রোপণ শেষ। কিন্তু পিআইসি গঠন ও বাঁধের কাজ শুরু না হওয়ায় চরম উৎকন্ঠায় রয়েছেন তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে উপজেলায় বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের কাজ হবে ১৬০ কিলোমিটার। উপজেলার ১১৯টি গ্রামের জমি রয়েছে ৬টি হাওরে। হাওরগুলো হলো ছায়ার হাওর, কালিকোটা হাওর, উদগল হাওর, ভান্ডাবিল হাওর, বরাম হাওর ও কুশিয়ারার ডানতীর।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর ২০১৪ সালের তথ্য মতে এসব হাওরে বোরো আবাদ করা হয় ২১ হাজার ৬৯৪ হেক্টর জমিতে। এই বোরো ফসলের ওপরই জীবিকা নির্বাহ করেন উপজেলার ২৪ হাজার ৬১৫ জন কৃষক।
এ বিষয়ে স্থানীয় কৃষকরা জানান, হাওরের বোরোজমিতে রোপণের কাজ শেষে। কিন্তু পিআইসি এখনো গঠন করা হয়নি। পিআইসি কবে গঠন করা হবে, কাজই বা কবে শুরু হবে তা বলা মুশকিল। গত বছর ছায়ার হাওর উপ-প্রকল্পের আওতায় মাউতি ক্লোজারের পাশে ৮১নং পিআইসির বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকে ছায়ার হাওর তলিয়ে গিয়েছিল। এতে কৃষকের ধান ও খড়ের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখন এই বাঁধটি বড় ক্লোজার। এদিকে কালিকোটা হাওরে বড় ক্লোজার হাওয়ার খালে কাজ এখনো শুরু না হওয়ায় পুরো হাওর ঝুঁকিতে বলে মনে করেন স্থানীয় সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে পাউবোর উপজেলা শাখা কর্মকর্তা উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুল কাইয়ুম বলেন, আমরা উপজেলায় ২৪টি পিআইসি গঠন করেছি। তবে বড় বড় ও ঝুঁকিপূর্ণ ক্লোজারসমুহে কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। বাকি পিআইসি দ্রুতই গঠন করা হবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে কাবিটা স্কীম প্রণয়ন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব বলেন, ইতোমধ্যেই বেশকিছু পিআইসি গঠন করা হয়েছে। কাজও চলমান রয়েছে। বাকি পিআইসিগুলো অল্প সময়ের মধ্যেই গঠন করা হবে।
প্রসঙ্গত, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে উপজেলায় ভাঙা বন্ধকরণ ও মেরামত কাজে ১৩৮ টি প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ২৪ কোটি টাকা। তবে চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ভাঙা বন্ধকরণ ও মেরামতের জন্য ১২৭ টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে পাউবো। তবে বরাদ্দের পরিমান এখনও জানা যায়নি। সংশোধিত কাবিটা নীতিমালা ২০১৭ অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু ও ২৮ ফেব্রুয়ারি বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ