Inqilab Logo

রোববার, ২৩ জুন ২০২৪, ০৯ আষাঢ় ১৪৩১, ১৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সোনাগাজীর মতিগঞ্জ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বেহাল দশা

| প্রকাশের সময় : ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সোনাগাজী (ফেনী) উপজেলা সংবাদদাতা : ৮৪ বছরেও সোনাগাজীর মতিগঞ্জ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির স্থায়ী ঠিকানা হয়নি। সেবা চলছে শতবর্ষী পুরনো জরাজীর্ণ ভবনে। পানি নেই, বিদ্যুত নেই, দরজা-জানালা ভাঙ্গাচোরা। ছাদের আস্তর খসে পড়ছে মাথার ওপর। গ্রীষ্মকালে ভ্যাপসা গরম, শীতে হিম শীতল কনকনে বাতাস। এমন বৈরী পরিবেশে বছরের পর বছর এলাকাবাসীদের স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছেন দুইজন সহকারী স্বাস্থ্য  কর্মকর্তা।
সরজমিনে দেখা যায়, স্থানীয় অনেক মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে ভিড় করছে। সেখানে উপস্থিত স্থানীয় শতবর্ষী বৃদ্ধা নুর করিম হাস্যরসে বলেন, এটি এমন একটি  স্বাস্থ্য কেন্দ্র যেটি গত ৮৪ বছরেও  স্থায়ী ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিছুদিন এক ভবনে চিকিৎসা সেবা দেয়ার পর এটি অন্য ভবনে স্থানান্তর হওয়াই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। তবে সব সময়ই ভাঙ্গাচোরা ও পরিত্যক্ত ভবনেই তার ঠাঁই হয়েছে। এটি কখনো নতুন ভবন বা স্থায়ী ঠিকানা পাবে কিনা কেউ বলতে পারে না।
স্থানীয় চা দোকানদার কামাল হোসেন জানান, এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র অশ্রয়স্থল। অসহায় মহিলা ও গরিব লোকজন এ স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে সেবা নিয়ে থাকে।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায় মুতিগঞ্জ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন চিকিৎসা কর্মকর্তা (মেডিকেল অফিসার), একজন উপ সহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা , একজন এমএলএসএস ও একজন ফার্মাসিষ্টসহ চারটি পদ রয়েছে। তন্মধ্যে  একজন কর্মকর্তাএবং একজন উপ সহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা বর্তমানে কর্মরত থাকলেও সেখানে ফার্মাসিষ্ট ও এমএলএসএস পদটি শুন্য রয়েছে। লিয়াকত আলী নামে একজন অবসরপ্রাপ্ত এমএলএসএস মাঝেমধ্যে  পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করে থাকেন।
উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির উপ সহকারী মেডিকেল কর্মকর্তা আবুল হাসান জানান, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির নিজস্ব কোন ভূমি ও ভবন নেই, কখনো কোন ভূমি ছিল কিনা তারও কোন দলিলপত্র পাওয়া যায়নি।
বর্তমানে যে পরিত্যাক্ত ভবনে  বসে স্বাস্থ্য উপ কেন্দ্র হিসাবে রোগীদেও চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে- সেটি মতিগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত সোনাগাজী উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের ব্যাবহ্নত প্রায় ২০ বছর পূর্বে পরিত্যক্ত একটি ভবন।
ভবনে বিদ্যুত সংযোগ নেই, পানির ব্যবস্থা নেই,এমনকি টয়লেটও নেই। দরজা জানালা ভাঙ্গাচোরা, একটু বৃষ্টি হলেই ছাদ ছুঁইয়ে মেঝেতে পনি পড়ে।
তিনি জানান,  পুরানো কাগজপত্র থেকে দেখা যায়, সোনাগাজীর মতিগঞ্জ স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রটি ১৯৩১ সালে স্থাপিত হয়। তখন মতিগঞ্জ বাজারের দক্ষিন পাশে তৎকালীন ইউনিয়ন কাউন্সিলের প্রেসিডেন্টের দেয়া একটি বেসরকারী ঘরে  এলাকাবাসীর চিকিৎসা সেবাদান শুরু হয়। পরবর্তী পর্যায়ে সেটি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে স্থানান্তরিত হয়। ইউপি কার্যালয়ে কয়েক বছর থাকার পর স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রটি মতিগঞ্জ হাই স্কুলের পাশে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের একটি কক্ষে স্থানান্তরিত করা হয়। ওই ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রটি এক পর্যায়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও ছাদ ধসে পড়ে। তারপর ১৯৯৫ সাল থেকে বর্তমান পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র হিসাবে স্বাস্থ্য সেবাদানের কাজ চলছে।
তিনি আরও জানান, প্রতিদিন গড়ে ১০০ জনেরও বেশি সাধারণ রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়ে স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রে আসেন। তাদের রোগের কথা শোনার পর সিভিল সার্জন অফিস পাওয়া অতি জরুরি কিছু ওষুধও রোগীদের প্রদান করা হয়।
সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নুরুল আলম জানান, বর্তমান এ ভবনটি এতই জরাজীর্ণ- যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। মতিগঞ্জ স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের সমস্যার কথা সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বহুবার অবহিত করা হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। একই এলাকায় অবস্থিত একই মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের একটি কক্ষ চাওয়া হলেও পাওয়া যায়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ