Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

দক্ষিণাঞ্চলে বছর জুড়ে ডায়রিয়ার চোখ রাঙানীর মধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে

২০ ভাগ মানুষ করোনার ১ম ডোজের টিকার বাইরে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ১২

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:১১ এএম

দক্ষিণাঞ্চলে বছর যুড়ে ডায়রিয়া দাপিয়ে বেড়াবার মধ্যেই ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। গত এক বছরে এ অঞ্চলের ৬ জেলার ৪২ উপজেলার সরকারী হাসপতালগুলোতেই প্রায় ৮০ হাজার ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা গ্রহন করেছেন। তবে এখনো বিভিন্ন চিকৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বারে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বাসায় এবং প্রাইভেট ক্লিনিকসমুহে অধিকাংশ ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা গ্রহন করছেন বলে মনে করছেন ওয়াকিবাহল মহল। সে হিসেবে গত এক বছরে দক্ষিণাঞ্চলে নুন্যতম দু লাখ মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য খাতের সংশ্লিষ্টগন। চলতি বছরের প্রথম ১৫ দিনেও শুধু সরকারী হাসপাতাল গুলোতে প্রায় আড়াই হাজার ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসার জন্য এসছেন বলে জানা গেছে। এখনো গড়ে প্রতিদিন দেড় শতাধিক ডায়রিয়া রোগী সরকারী হাসপাতালে আসছেন। ২০২১-এর মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দক্ষিনাঞ্চলের সরকারী হাসপাতালগুলোতেও প্রায় ৮০ হাজার ডায়রিয়া আক্রান্তের চিকিৎসা হয়েছে।
এরসাথে সাম্প্রতিককালের হাঁড় কাঁপান শীত আর উত্তর-পশ্চিমের হীমেল হাওয়ায় দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে নিউমোনিয়া সহ ঠান্ডা জনিত রোগব্যাধী বিগত বছরগুলোর তুলনায় আশংকাজনক হারে বাড়ছে। চলতি মৌসুমে বরিশালে তাপমাত্রার পারদ ইতোমধ্যে ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমেছে। শিশু ও বয়োবৃদ্ধরাই এসব রোগে বেশী মাত্রায় আক্রান্ত হচ্ছেন। বরিশালে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হসপাতাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি সরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানেই নিউমোনিয়া সহ ঠান্ডাজনিত রোগীর ভীড় বাড়ছে প্রতিনিয়ত। বেশীরভাগ সরকারী হাসপাতালের মঝেতেও ঠাই নেই। সাথে হীমেল হাওয়া শীতের অনুভতিকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রতিটি ওয়ার্ডেই ৩ থেকে চারগুনেরও বেশী রোগী সুষ্ঠু চিকিৎসা ব্যাবস্থাকে বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে। চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে এ হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত নানা রোগে অন্তত ১০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ভোলা সহ দক্ষিণাঞ্চলের অন্য জেলাগুলোতেও আরো বেশ কিছু শিশু মারা গেছে।
দু বছর পরে বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে এবার ডেঙ্গু আবার প্রভাব বিস্তার করে। সদ্য বিদায়ী বছরের শেষভাগে সরকারী হিসেবেই দক্ষিণাঞ্চলে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল সাড়ে ৩ হাজার। পিরোজপুর ও বরগুনাতেই আক্রান্তের সংখ্যা সর্বাধিক। মৃত ১২ জনের সবাই বরিশালের শের এ বাংলা মডিকেল কলেজ হাসপাতালেই মারা গেছেন। তবে ডিসেম্বরের শুরু থেকে দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে ডেঙ্গুর বিস্তার অনেকটাই নিয়ন্ত্রনে রয়েছে।
অপরদিকে সদ্য বিদায়ী বছরের শেষভাগে দক্ষিণাঞ্চল থেকে করোনা মহামারী অনেকটা দুরে সরে থাকালেও এখনো ৮০ ভাগের বেশী মানুষকে কোভিড-১৯ প্রতিষেধকের প্রথম ডোজেরই আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। আর দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন গ্রহনকারীর সংখ্যা ৬৮%। বুষ্টার ডোজ গ্রহন করেছেন ৩৫ ভাগেরও কম মানুষ। বিদায়ী বছরের শেষ মাসের মধ্যভাগ থেকে করোনা প্রতিষেধকের ৪র্থ ডোজ শুরু হলেও দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার ৪২ উপজলায় মাত্র ৬ হাজারের মত মানুষ এ টিকা গ্রহন করেছেন। মূলত করোনার প্রকোপ হ্রাসের সাথে উদাশীনতা আর জনসচেতনতা এবং প্রচারনার অভাবেই দক্ষিণাঞ্চলে ভ্যাকসিন প্রয়োগের গতি ঝিমিয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য বিভাগেরই দায়িত্বশীল মহল।
কিন্তু দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে এখনো ডায়রিয়ার চোখ রাঙানী বন্ধ হচ্ছেনা। বিদায়ী বছরের শেষ মাসেও দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে প্রায় ৫ হাজার ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসার জন্য আসে বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিসংখ্যানে জানা গেছে।
এদিকে ঠিক কত মানুষ এখনো করোনা ভ্যাকসিনের আওতার বাইরে রয়েছেন, তা বলতে না পারলেও স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ১ কোটি জনসংখ্যার অন্তত কুড়িভাগ এখনো করোনা ভ্যাকসিনের ১ম ডোজ গ্রহন করেন নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ