Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কক্সবাজারের শুঁটকি, কদর বেড়েছে দেশে বিদেশে

এশিয়ার বৃহত্তর শুঁটকি মহাল কক্সবাজারের নাজিরাটেক

কক্সবাজার থেকে শামাসুল হক শারেক | প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩, ৩:০৩ পিএম

.প্রতি মৌসুমে উৎপাদন হয় ৫শত কোটি টাকার শুঁটকি 

.রপ্তানী হচ্ছে বিদেশেও  

সামুদ্রিক শুঁটকিমাছ এক প্রকার মুখরোচক খাবার। শুঁটকিমাছ অনেকে না খেলেও শীতে শুঁটকিমাছের স্বাদ নিতে ভুলেননা ভোজনবিলাসীরা। এতে করে কক্সবাজারের শুঁটকিমাছের কদর ও চাহিদা বেড়েছে অনেক। এই কদর ও চাহিদা থেকেই কক্সবাজারে গড়ে উঠেছে এশিয়ার বৃহত্তম শুঁটকি মহাল। কক্সবাজার শহরতলীর নাজিরারটেকে গড়ে উঠা এই শুঁটকি মহাল এখন এশিয়ার বৃহত্তর শুঁটকি মহালে পরিণত হয়েছে।

প্রায় ১শ একর এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা এ শুঁটকি মহালে রয়েছে ছোট-বড় ৫শতাধিক আড়ত। এখানে
শুঁটকি উৎপাদন কাজে নিয়োজিত আছেন প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক ও প্রায় ৫ হাজার ব্যবসায়ী। প্রতিদিন প্রায় দুইশ টন বিভিন্ন জাতের শুঁটকি উৎপাদন হয়ে থাকে এখান থেকে। এভাবে প্রতি মৌসুমে উৎপাদন হয়ে থাকে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন শুঁটকি। যার বাজারমূল্য প্রায় ৫শ কোটি টাকা।

সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত শুঁটকি উৎপাদনের মৌসুম।
কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, শহরতলীর নাজিরারটেক, সোনাদিয়া, টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ, সেন্টমার্টিন, জেলার উপকূলীয় বিভিন্ন শুঁটকি মহালে শুঁটকি উৎপাদনের এখন ভর মৌসুম।

নাজিরারটেক শুঁটকি মহালে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিটি শুঁটকি মহালে শ্রমিকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ মাছ পরিষ্কার করছেন, কেউ মাচায় তুলছেন। কথা বলারও ফুসরত নেই তাদের।
রোদে শুকানো হচ্ছে শুঁটকি। বর্ষাকাল ছাড়া বছরের নয়মাস এখানে শুঁটকি উৎপাদন চলে। তবে, ২২ দিন সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ সময়ে শুঁটকি উৎপাদন বন্ধ থাকে। সাগরের বেড়িবাঁধ এবং বিশেষ উপায়ে তৈরি বাঁশের মাচার ওপর পাতলা করে বিছিয়ে সূর্যের তাপে কাঁচা মাছ শুকিয়ে শুঁটকিতে পরিণত করা হয়।

দেশে প্রথমবারের মতো শুঁটকি উৎপাদনে জাতীয় মৎস্য পুরস্কারপ্রাপ্ত শাহ আমানত ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আমান উল্লাহ আমান সহ আরো অনেকেই রাসায়নিক উপাদানমুক্ত অর্গানিক শুঁটকি উৎপাদন করে যাচ্ছেন। যার সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে চতুর্দিকে। নিত্যদিন পর্যটক ও ক্রেতার ভীড় বাড়ছে তাদের শুঁটকি মহালে। এভাবে অর্গানিক শুঁটকির ব্যবসা প্রসার ঘটে অনলাইনেও। দেশেবিদেশে এই শুঁটকির চাহিদাও কদর বেড়েছে অনেক।

নাজিরারটেক শুঁটকি ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আতিক উল্লাহ জানান, প্রায় ১শ একর এলাকাজুড়ে গড়েওঠা এ শুঁটকি মহালে রয়েছে ছোট-বড় ৫শতাধিক আড়ত। দেশের ভেতরে তো বটেই এশিয়া মহা দেশের সবচেয়ে বড় শুঁটকি মহাল হলো এই নাজিরারটেক। এখানে শুঁটকি উৎপাদন কাজে নিয়োজিত আছেন প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক ও প্রায় ৫ হাজার ব্যবসায়ী। প্রতিদিন প্রায় দুইশ টন বিভিন্ন জাতের শুঁটকি উৎপাদন হয়ে থাকে এখানে। এখাবে প্রতি মৌসুমে উৎপাদন হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন শুঁটকি। যার বাজারমূল্য প্রায় ৫শ কোটি টাকা।

ব্যবসায়ীরা জানান, দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এই শুঁটকি মহাল থেকে প্রতিবছর সরকারকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব দেওয়া হলেও শুঁটকি মহালে সুযোগ-সুবিধা তেমন নেই বললেই চলে।

মহালের পুর্বদিকের রাস্তার অবস্হা নাজুক। গাড়িতে চলাচল দূরে থাক পায়েও হাঁটা দায়! পঁচা ও গন্ধ পানি জমে থাকে। ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা কষ্টে আছেন বলেও জানান তারা। অবিলম্বে ওই রাস্তাটি টেকসই মেরামত করার দাবি শুঁটকি ব্যবসায়িদের। ইতোমধ্যে
ব্যবসায়ি সমিতির পক্ষ থেকে রাস্তা মেরামতের উদ্যেগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তরুণ রাজনীতিক সরওয়ার আলম বুলবুল বলেন, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে শুঁটকির উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে পর্যটক, ক্রেতা ও পরিবহন অনায়াসে যাতায়াত করতে পারবে।

মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির অর্থ সম্পাদক কায়সার জানান, কক্সবাজারের আবহাওয়া শুঁটকি শুকানোর জন্য খুবই উপযোগী। লবণাক্ত আবহাওয়ার কারণে প্রতিবছর চট্টগ্রাম থেকে বিপুল পরিমাণ কাঁচা মাছ শুকানোর জন্য এই মহালে আনা হয়ে থাকে। উৎপাদনও খুব ভালো হচ্ছে।
শুঁটকি মহালের ব্যবসায়ী মো. শহিদুল্লাহ জানান, শীত মৌসুম শুরুর আগে থেকে নাজিরারটেক শুঁটকি মহালেও উৎপাদন শুরু হয়েছে। অন্যান্য বারের মতো এবছরও রূপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্যা পোপা, টেকচাঁদা, হাঙ্গর, ফাইস্যা, নাইল্যামাছসহ ২০-২৫ প্রজাতির শুঁটকি এ মহালে উৎপাদন করা হচ্ছে।
বঙ্গোপসাগর থেকে আহরণ করা বিশেষ করে ছোট আকৃতির মাছগুলো দিয়ে শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। শুধু কক্সবাজারে নয়, এখানে উৎপাদিত শুঁটকি ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মানুষের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। দেশের মানুষের প্রোটিনের বড় একটি অংশ কক্সবাজারে উৎপাদিত শুঁটকি থেকে পূরণ হচ্ছে। এমনকি শুঁটকির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

তবে এই শুঁটকি মহালে স্কুল ছেড়ে শত শত শিশু শ্রমিক কাজ করছে বলে জানা গেছে। শিশু শ্রম আইন লঙ্ঘন হলেও প্রোজনের তাগিদে স্কুল বয়সের শিশুরা এখানে শ্রম দিয়ে যাচ্ছে। এব্যাপারে কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন তাদের কল্যাণে কাজ করছে বলে জানা গেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ