রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
ফসলি জমির টপসয়েল কাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রকাশ্যে মাটিকাটার উৎসব চলছে ফেনী জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে। জেলা প্রশাসন ও এমপির নির্দেশ উপেক্ষা করে, পরিবেশ আইন অমান্য করে কৃষিজমির উপরিভাগের উর্বর মাটি (টপসয়েল) কেটে বিক্রি করছে মাটিদস্যুরা। এসব মাটি নিকটবর্তী ইটভাটা, খাল জলাশয় ও পুকুর ভরাটের কাজে ব্যবহার হচ্ছে। এতে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে এবং পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। সেচ প্রকল্পের স্কীমের পাইপলাইন ধ্বংস হচ্ছে এবং খাদ্যশস্য উৎপাদন হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। মাটি ব্যবসার সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছে সরকার দলিয় রাজনৈতিক নেতা ও ইউপি সদস্য। মাটি বোঝাই গাড়ি চলাচলের কারণে গ্রামীণ রাস্তাঘাট ধ্বংস হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশাসন নিরব থাকায় জনসাধারণ ও সচেতন মহলে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়, সদর উপজেলার মোটবী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড সাহাপুর গ্রামে কৃষকের আবাদকৃত ফসলি জমির দুটি স্পটে বেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা চলছে। এলাকাবাসী জানান, ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি লোকমান হোসেন, পিচ্ছি ফারুক, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শান্ত ভূঞা এলাকায় মাটি কাটছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে লোকমান ও পিচ্চি ফারুক বলেন, এ এলাকায় প্রায় ১৫ থেকে ২০টি স্পটে ফসলি জমির মাটি কাটা চলছে। সব মাটি ব্যবসার সাথে ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ জড়িত আছে। এছাড়াও, ৭নং ওয়ার্ডে সেলিম, ৮নং ওয়ার্ডে ফখরুল ও একই ইউনিয়নের দমদমা ও লক্ষীপুর এলাকায় সাহাব উদ্দিন, ৯নং ওয়ার্ডে স্বপ্নসেতুর পাশে ভালুইয়া এলাকায় রেজা, সুমন ও খলিফার দোকানের পাশে ইউনিয়ন যুবলীগের সেক্রেটারি নজরুল ও তার ভাই কামরুল ফসলি জমির মাটি কাটছেন বলে অভিযোগ করেণ স্থানীয় এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, মাটি ব্যবসার সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই, এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। যারা মাটিকাটার সাথে সম্পৃক্ত আছে তাদের বিরুদ্ধে কঠিন প্রদক্ষেপ নেয়া হবে। আপনারা পরিদর্শনে গিয়ে যেখানেই দেখবেন সরাসরি এদেরকে প্রশাসনের হাতে ধরিয়ে দিবেন। এছাড়াও সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নে মাটি কামাল, লেমুয়া, কালিদহ, ছনুয়া, ফাজিলপুর, ধর্মপুর, ফরহাদনগর ও ধলিয়া ইউনিয়নে প্রকাশ্যে মাটিকাটার প্রতিযোগিতা চলছে। বেশিরভাগ ইউনিয়নে মাটি ব্যবসায়ীরা প্রশাসনিক জটিলতা এড়াতে ফসলি জমির মাটি দিনে না কেটে সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত কাটেন বলেন জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিশ্চুক বিভিন্ন ইউনিয়নের কয়েকজন বলেন, গত একমাস ধরে এভাবে দিনে রাতে ফসলী জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে মাটি ব্যবসায়ীরা। জমির মালিককে টাকার লোভ দেখিয়ে মাটি কিনে নেন। তাদের ভয়ে অত্র এলাকায় কেউ কথা বলতে সাহস করেনা। কয়েকজন কৃষক বলেন, পাশের জমির মাটি কাটার কারনে আমাদের জমিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে তাই আমরাও বাধ্য হয়ে মাটি বিক্রি করছি।
ভুক্তভোগী ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা বলেন, মাটি ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, তারা অন্যের জমির মাটি কেটে নিতে আমাদের জমির ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচলের পথ করে দিয়ে জমি নষ্ট করছে। সচেতন মহল বলছেন, জনগণের চলাচলের সুবিধার্থে সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে রাস্তা করে দিয়েছে। আর মাটি বোঝাই গাড়ি চলাচলের কারনে গ্রামীণ সড়কগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তারা এ ব্যাপারে স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। কয়েকজন মাটি ব্যবসায়ী জানান, সব ইউনিয়নে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মাটি বোঝাই যত গাড়ি চলে সব গাড়ি থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করেন সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা।
গত ১৮ ডিসেম্বর জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় সভা এবং ৮ জানুয়ারি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় মাটিকাটার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান। তিনি বলেন, কৃষি জমি থেকে মাটি কাটলে অভিযান পরিচালনা করার জন্য নির্দেশ দেন। যারা আইন অমান্য করে অন্যের জমির ক্ষতি করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধে ইউনিয়ন ভিত্তিক মাটি ব্যবসায়ীদের তালিকা করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। এর আগে ফেনী-২ আসনের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী জেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদেরকে যার যার ইউনিয়নে যাতে কেউ ফসলি জমির মাটি না কাটে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখার জন্য বলেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, ফসলি জমির ওপরিভাগের টপসয়েল কাটার ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। সেসব জমিতে আর ফসল হয়না। জমির উর্বরতা নতুন করে ফিরে আসতে কমপক্ষে ১২ বছর সময় লাগে। এতে করে কৃষকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। তিনি বলেন, মাঠপর্যায়ে আমাদের সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের জমির মাটি বিক্রি না করার জন্য সচেতন করছেন। কিন্তু মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদেরকে টাকার লোভ দেখিয়ে ফসলি জমির মাটি কিনে নিচ্ছেন। ফসলি জমি রক্ষায় সকলে মিলে জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসাইন পাটোয়ারী বলেন, ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।