Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সখিপুর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৩০ হাজার একর জমি বেদখল

পোল্ট্রি ফার্ম, ফ্যাক্টরি ও বাড়িঘর নির্মাণ

| প্রকাশের সময় : ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম, সখিপুর (টাঙ্গাইল) থেকে  : সখিপুর উপজেলায় এক লাখ একর জমির মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার একর জমি বন বিভাগের। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমি জবর দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালীমহল পোল্ট্রি ফার্ম, ফ্যাক্টরি, দালান কোঠা, ঘরবাড়ি, কৃষি জমি তৈরি করে প্রায় ৩০ হাজার একর বন বিভাগের জমি বেদখল হয়ে গেছে বলে বিভিন্ন বিট অফিস সূত্রে জানা যায়। বহেড়াতলী রেঞ্জের বহেড়াতৈল সদর, এম এম চালা(আন্দি), কচুয়া, ডিবি গজারিয়া (কৈয়ামধু), কাকড়াজান (মরিচা), হতেয়া রেঞ্জের হতেয়া সদর, বাজাইল, কড়ইচালা, কালমেঘা, কালিদাস, বাশতৈল রেঞ্জের পাথরঘাটা, বংশীনগর,নলুয়া, ধলাপাড়া রেঞ্জের ধলাপাড়া সদর, সাগরদিঘী বিট নিয়ে সখিপুর সংরক্ষিত বনাঞ্চল গঠিত। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভিতর অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ১২৫টি করাতকল। এসব করাত কলের মাধ্যমে নিমিষেই মূল্যবান বৃক্ষ কর্তন করে টুকরো টুকরো করা যায়। ফলে বন বিভাগের বাগান উজাড় করে ভূমি জবর দখল হয়ে যাচ্ছে। বাশতৈল সদর বিটের গায়রাবেতীল মৌজায় ৫০৩২নং দাগে বন বিভাগের জায়গায় নির্মিত বিল্লালের আলিশান বাড়ি বন বিভাগের লোকজন ভেঙে দেয়ার পর থেকে স্থানীয় এমপিসহ আ.লীগ নেতাকর্মীরা বন বিভাগের লোকজনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে দেয় ও দুইজন বনপ্রহরীকে লাঞ্চিত করে। বাশতৈল সদর বিটে টহল বাহিনী দেয়ার পূর্বেই বিক্ষুব্ধ জনতা গায়রাবেতীল মৌজায় সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় করে বন বিভাগের কয়েক শতক জমি বেদখল করে ফেলেছে ও কোটি কোটি টাকার শাল-গজারি বাগান নিধন করেছে। বন বিভাগের জায়গায় কচুয়া বিটের অধীনে বড়চওনা মৌজার দাড়িপাকা বাজারে মুছা মিয়া তিন তলা বিল্ডিং নির্মাণ করেছে, বহেড়াতৈল সদর বিটের সখিপুর এতিমখানা রোডে আলমগীর আলম বিল্ডিং নির্মাণ করেছে। কিছু কিছু অসাধু বিট কর্মকর্তা ও বনপ্রহরীর কারণে ধীরে ধীরে বন বিভাগের হাজার হাজার একর জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। সখিপুর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের এমন কোন বিট নেই যে বিটে বিটের অর্ধেক জমি বেদখল হয়ে যায়নি। হতেয়া রেঞ্জের কালিদাস বিটে কীর্তনখোলা চৌরাস্তার উত্তরে সুলায়মান মুরগির ফার্মের জন্য ঘর উত্তোলন, আকবরের বাড়ির সামনে নতুন মসজিদের পূর্বপাশে রঞ্জুর বিল্ডিং নির্মাণ, কালিয়ান পাড়া বাজারের পশ্চিম পাশে ফারুক মাস্টারের মুরগির ফার্ম ১৫০ হাত ঘর নির্মাণ, তেতুলিয়া চালা এনামুলের ঘর নির্মাণ, গজারিয়া প্রবাসী নুরুর বিল্ডিং নির্মাণ, ইছাদিঘী জব্বার (সাবেক চেয়ারম্যান) প্লটের উত্তর পাশে শামসুর হক পোল্ট্রি ফার্ম নির্মাণ করেছে, জাবুর চালা মাঠের উত্তর পাশে দেলোয়ার ঘর নির্মাণ করেছে। শুধু কালিদাস বিট নয় প্রত্যেকটি বিটে একইভাবে বন বিভাগের জমি বেদখল হয়েছে। কোথাও বন বিভাগের জায়গায় বিল্ডিং, ঘরবাড়ি, ফ্যাক্টরি, পোল্ট্রি ফার্ম নির্মাণ হলে বন বিভাগ শুধু বন মামলা দিয়ে দায়মুক্তি হয়ে যায়। সখিপুর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বন বিভাগের প্রায় এক লাখ একর জমির মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার একর জমি বেদখল হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব বেদখল জমি উদ্ধারে বন বিভাগ কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। জনসংখ্যার আধিক্য, একান্নবর্তী পরিবারে ভাঙন ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের প্রভাব, বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা/কর্মচারীর অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সখিপুর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার একর জমি বেদখল হয়ে গেছে। বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তনের ফলে ধরিত্রীতে জনজীবন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এ ব্যাপারে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা টাঙ্গাইল (ডিএফও) মো. মাসুদ রানা বলেন, লোকবল সংকট ও রাজনৈতিক কারণে বন বিভাগের জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। তবে দখলকারীদের বিরুদ্ধে বন ও উচ্ছেদ মামলা দায়ের করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ