Inqilab Logo

সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

পদ্মার পলি মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

এস. এম. আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া থেকে | প্রকাশের সময় : ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মাজগ্রাম, ছোট মাজগ্রাম ও জুড়ালপুর এলাকায় দু’তিন বছর আগেও পদ্মা নদীর কোল ঘেঁষে কয়েক হাজার বিঘা পলি জমিতে বাদাম, সরিষা, মসুর, তিল, সরিষাসহ নানান জাতের ফসলের আবাদ হতো। কিন্তু এখন ফসলের চেয়ে ভাটায় মাটি ও বালু বিক্রি করা অধিক লাভজনক। সেজন্য চাষাবাদ না করে ইটভাটায় মাটি ও বালু বিক্রি করছেন কৃষকরা। এতে একদিকে যেমন কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন বলছে, কৃষিজমির মাটি ও বালু কাটলে জমির শ্রেণি পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা সরকারিভাবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
সরেজমিনে শিলাইদহ ইউনিয়নের মাজগ্রাম, ছোট মাজগ্রাম ও জুড়ালপুর এলাকায় দেখা গেছে, পদ্মা নদীর কোল ঘেঁষে বিস্তীর্ণ চর জেগেছে। চরে কেউ কেউ সরিষা, মসুর, কলাগাছসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করেছেন। সেখানে অন্তত ১৫টি খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে মাটি ও বালু কাটা হচ্ছে। শ্যালো ইঞ্জিনচালিত লাটাহাম্বা, ট্রলি, মাহিন্দ্রাসহ বিভিন্ন গাড়িতে করে ইটভাটায় নেয়া হচ্ছে। অনেকেই আবার মাপামাপি করে নিজের জমির সীমানা নির্ধারণ করছেন।
কথা হয়, মাজগ্রামের কৃষক আহমদ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে তার প্রায় ৯০ শতাংশ জমি রয়েছে। জমিতে দু’তিন বছর আগে বাদামের চাষ করতেন তিনি। কিন্তু চাষের চেয়ে মাটি বিক্রিতে লাভ বেশি। বর্তমানে সবাই চাষাবাদ বন্ধ করে ভাটায় মাটি বিক্রি করছেন। তাই তিনিও ৩৩ শতক জমির মাটি একলাখ টাকায় ভাটায় বিক্রি করেছেন।
একই এলাকার আবুল হোসেন নামের আরেক কৃষক বলেন, আগে সবাই চাষাবাদ করত। কিন্তু চাষে তেমন লাভ হয় না, তাই প্রতি বিঘা জমির মাটি ও বালু ৯০ হাজার টাকা করে বিক্রি করেছেন তিনি।
জানা গেছে, শিলাইদহ ইউনিয়নে বর্তমানে ১২টি ইটভাটা চলমান রয়েছে। অথচ গত দুই-তিন বছর আগে ইউনিয়নে ভাটার সংখ্যা ছিল মাত্র দুই-তিনটা। দিনে দিনে ভাটার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় অসাধু কৃষকরা চাষাবাদ বন্ধ করে ভাটায় মাটি ও বালু বিক্রি করছেন। এতে অন্যান্য কৃষকদের চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। কৃষি জমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
এ বিষয়ে জুড়ালপুর গ্রামের কৃষক কুদ্দুস আলী বলেন, আগেতো চরজুড়ে বাদাম, সরিষা, তিল, মসুরসহ হরেক রকম ফসল চাষাবাদ করা হতো। কিন্তু সেখানে ইটভাটা বেশি হওয়ায় মাটির দাম ভালো। তাই সবাই ভাটায় মাটি বিক্রি করছে। মো. শাকিল হোসেন নামের অপর এক কৃষক বলেন, তার চার বিঘা জমিতে কলার চাষ রয়েছে। কিন্তু বালু মাটিতে ফসল ভালো হচ্ছে না। তাই কলাগাছ কেটে বালু বিক্রি করেছেন।
এ বিষয়ে ইটভাটা মালিক রানা জোয়ার্দার বলেন, প্রতি বিঘা জমি কৃষকদের কাছ থেকে একলাখ টাকায় কিনেছেন তিনি। কৃষকদের বৈধ কাগজপত্রাদি আছে।
ইউনিয়নের কল্যাণপুর গ্রামের এমএসবি ব্রিকসের প্রোপাইটর ফসলুর রহমান বলেন, পদ্মা নদীর তীরে তার প্রায় ২০ বিঘা জমি রয়েছে। জমিতে এখন ভালো ফসল হয় না। তাই নিজের জমি থেকে নিজের ভাটায় মাটি নিচ্ছেন তিনি।
এদিকে কৃষি বিভাগ ও স্থানীয়রা বলছেন, কৃষি ও কৃষি জমি রক্ষার্থে মাটিকাটা বন্ধ করা এবং দোষিদের আইনের আওতায় আনা উচিৎ।
এ বিষয়ে জুড়ালপুর গ্রামের মো. আবেদ আলীর ছেলে মো. আমির হোসেন বলেন, চাষাবাদ করলেই পদ্মার বুকে ভালো ফসল ফলানো সম্ভব। কিন্তু কিছু অসাধু ভাটা মালিক ও কৃষকরা আইন অমান্য করে বালু ও মাটি কেনাবেচা করছেন। দোষিদের শাস্তি হওয়া দরকার।
কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, কৃষি ও কৃষিজমি রক্ষায় মাটি কাটা বন্ধ করা এবং দোষি ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা দরকার। জুড়ালপুর গ্রামের আমির হোসেন বলেন, চাষাবাদ করলেই পদ্মার চরে ভালো ফসল ফলানো সম্ভব। কিন্তু কিছু অসাধু ভাটার মালিক ও কৃষক আইন অমান্য করে বালু ও মাটি কেনাবেচা করছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. রাইসুল ইসলাম বলেন, কয়েক বছর আগেই সেখানে বাদামসহ বিভিন্ন তেল জাতীয় ফসলের চাষাবাদ হতো। সরকার কৃষির উৎপাদন বাড়াতে প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু ইটভাটার কারণে কৃষি জমি ও কৃষি উৎপাদন অনেকাংশে হ্রাস পাচ্ছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিরুল আরাফাত বলেন, কৃষিজমির মাটি ও বালু কাটলে জমির শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা সরকারিভাবে সম্পূর্ণ নিষেধ রয়েছে। এমন চিত্র থাকলে দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ